পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] সীতা । ጏዓ » এই প্রথমবার প্রতিহত হইল । যে জীবনকে ভয় করে, সে জীবননাশককে ভয় করিবে, কিন্তু সীতা স্বীয় নিঃসহায় অবস্থা স্মরণ করিয়া বলিয়াছিলেন, “বন্ধনই কর বা বধই কর, অামার এ দেহ এখন অসাড় — রাক্ষস, এ দেহ বা এ জীবন রক্ষণ করা আমার আর উচিত নয় ।” বিস্মিত হইয়া “ললাটে ভ্রুকুটিং কৃত্বা রাবণঃ প্রত্যুবাচ হ ।”—সে কুবেরকে জয় করিয়া পুষ্পকরথ অনিয়াছে—জগতের প্রকৃতিপুঞ্জ তাহাকে মৃত্যুর তুল্য ভয় করে, “অঙ্গুল্য ন সমে রামো মম যুদ্ধে স মানুষঃপ্রভৃতি অনেক কথা বলিল, কিন্তু বাশ্বিতগুtয় বৃথা সময় নষ্ট করা যুক্তিযুক্ত মনে না করিয়া সে বামহস্তে সীতার কেশমুষ্টি ও দক্ষিণ হস্তে তাহার উরুদেশ ধারণ করিয়া তাহাকে রথের উপর লইয়া গেল । সহসা সেই পঞ্চবটীর বনত্ৰী যেন মলিন হইয় গেল, তরুগুলি যেন নীরবে কাদিতে লাগিল, পক্ষিগুলি অবসন্ন হইয়া উড়িতে পারিল না,--বনলক্ষ্মীকে রাবণ লইয়া গেল, সেই বিপুল অনুগোদপ্রদেশের বনরাজি হতশ্ৰী হইয়া পড়িল । সীতার আর্ত চীৎকারধ্বনি শুনিয়া সেই নির্জনে শুধু এক মহাজন লগুড় লইয়া দাড়াইলেন। র্তাহার কেশকলাপ হংসপক্ষের দ্যায় শুভ্ৰ হইয়া গিয়াছে, দণ্ডকারণ্যে বহুবৎসর ব্লাস করিয়া বাৰ্দ্ধক্যে তিনি শীর্ণ হইয়া পড়িয়াছেন,—তিনি পরের কলহ মাথায় লইয়। স্নাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া প্রাণ দিলেন । ধন্ত জটায়ু, আজ এই হিন্দুস্থানে এমন কে আছেন—যিনি অন্তায়ের বিরুদ্ধে দাড়াইয়া তোমার মত প্রাণ দিতে পারেন ?

  • \Cف

সীতা আৰ্ত্তনাদ করিয়া বলিলেন— “রাম, তুমি দেখিলে না, বনের মৃগপক্ষীও আমাকে রক্ষা করিতে ছুটিতেছে।” যে কণিকারপুষ্প সংগ্রহের জন্ত তিনি বনে বনে ছুটিতেন, সেই কণিকারবন লক্ষ্য করিয়া বলিলেন—“ক্ষিপ্ৰং রামায় শংসধবং সীতাং হরতি রাবণঃ ।” তুংসসারসময়ী আবৰ্ত্তশোভিনী গোদাবরীকে ডাকিয়৷ বলিলেন, “ক্ষিপ্ৰং রামায় শংস ত্বং সীতাং হরতি রাবণঃ।” দিগঙ্গনাদিগকে স্তুতি করিয়া বলিলেন, “ক্ষিপ্ৰং রামায় শংসধ্বংসীতাং হরতি রাবণঃ ” রথ ক্রমশ লঙ্কার সন্নিহিত इझेल, সীতা স্বীয় অলঙ্কারগুলি দেহ হইতে ছুড়িয়া ফেলিতে লাগিলেন—তাহার চরণের নুপুর বিদ্যুতের মত, বক্ষোলম্বিত শুভ্র মুক্তাহার ক্ষীণ গঙ্গণরেখার দ্যায়, আকাশ হইতে পতিত হইল, রাবণের পাশ্বে র্তাহার মুখখানি দিবসে উদিত চন্দ্রের দ্যায় মলিন দেখাইতে লাগিল, সীতার রক্তকৌষেয় বস্ত্রের একাদ্ধ রাবণের রথের পাশ্বে উড়িতেছিল । সেই শোকবিমূঢ়া সতীর দুরবস্থা দেখিয়া সমস্ত জগৎ যেন কুদ্ধ হইয়া মৌনভাবে প্রকাশ করিল —“যে সংসারে রাবণ সীতাকে হরণ করিতে পারে, সেখানে ধৰ্ম্মের জয় নাই,—সেখানে পুণ্য নাই ।” _ রাবণ সীতাকে লঙ্কণপুরীতে লইয়া আসিল । লঙ্কায় জগতের বিলাসসম্ভার সমস্ত সংগৃহীত, চক্ষুকর্ণের পরিতৃপ্তির জন্ত যাহা কিছু কল্পনায় উপস্থিত হইতে পারে, লঙ্কায় তাহার সমস্ত সন্মিলিত ; এই ঐশ্বৰ্য্যময়ী পুরী সীতাকে দেখাইয়া রাবণ বলিল— “তুমি আমার প্রতি প্রীত হও, এই সমস্ত