চতুর্থ সংখ্যা । ] অামি উৎপাটন করিয়া ভক্ষণ করি।” প্রঘসা রাক্ষসীও এই কথার অনুমোদন করিল এবং অজামুখী বলিল, “মদ্য লইয়া আইস, আমরা সকলে ইহাকে ভাগ করিয়া খাই ।” তৎপরে শূৰ্পণখা তাণ্ডবনৃত্য করিয়া বলিল—“ঠিক কথ,—“সুর চানীয়তাং ক্ষিপ্ৰম্।” এই বিভীষিকাপুর্ণ রাজ্যে উপবাসকৃশ৷ মৈথিলী এই সকল তর্জন শুনিয়া “ধৈর্য্যমুৎস্বজ্য রোদিতি ।”—নেত্রদুটি জলভারে আকুল হইল, সুন্দরী ধৈর্য্যহীন হইয়া কাদিতে লাগিলেন । সীতার স্বন্দর মুখ অশ্রুকলঙ্কিত, যিনি ভূষণ পরিলে শিল্পীর শ্রম সার্থক হয়, তিনি ভূষণহীন, যিনি চিরস্থখtভ্যস্ত, তিনি চিরদুঃখিনী—“স্কথtহা দুঃখসম্ভপ্তা, মওনাহঁ অমণ্ডিত ।” একখানি ক্লিল্প কোষেয়বাস তাহার উপবাসকৃশ শ্ৰীঅঙ্গ ঢাকিয়া রাখিয়াছে । পৌর্ণমালী জ্যোৎস্নার স্তায় তিনি সমস্ত জগতের অভীপিসতা । শোকজালে তাহাকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে,–ধুমজালংসক্ত অগ্নিশিখার স্থায় তাহার রূপ প্রকাশ পাইয়াও প্রকাশ পাইতেছে না, সন্দিগ্ধ স্মৃতির দ্যায় সে রূপ অস্পষ্ট । অশোকবৃক্ষে রক্ষিত নিঃসংজ্ঞদেহে ধ্যানময়ী কি চিন্ত করিতেছেন ? লঙ্কার এই বিষম তেজোবিক্রম, এই অসামান্ত ঐশ্বৰ্য্য,--শতযোজন দুরে জুটাবষ্কলধারী ভ্রাতৃমাত্রসহায় রামচন্দ্র এই দুর্গম স্থানে আসিবেন কিরূপে ? রাক্ষসীর একবাক্যে বলিতেছে, তাই অসম্ভব হইতেও অসম্ভব । রাবণ তাহাকে দ্বাদশমাস সময় দিয়াছিল, তাহার দশমাস অতীত হইয়া গিয়াছে, আর দুই সীতা । `ඳථ්ය -ā মাস পরে পাচকগণ রাবণের প্রাতরংশের ( breakfast ) জন্ত তাহার দেহ খণ্ডখণ্ড করিয়া ফেলিবে । সীতা এই নিঃসহায় রাক্ষসপুরীতে স্বগণের মুখ দেখিতে পান না, কেবল রাক্ষসীরা তাহাকে নানাবিধ অশ্রাব্য বিদ্রুপ ও তাড়না করিতেছে । এদিকে রাবণ প্রায়ই সেস্থানে আসিয়া কখন ভয় দেখাইতেছে, কখন মধুরভাষায় বলিতেছে—“তোমার স্বন্দর অঙ্গের যেখানেই আমার চক্ষু পতিত হয়, সেখানেই উহা আবদ্ধ হইয়া থাকে,— তোমার মত সৰ্ব্বাঙ্গস্বন্দর আমি দেখি নাই ; তোমার চারু দস্ত এবং মনোহারী নয়নদ্বয় আমাকে উন্মত্ত করিয়া তুলিয়াছে। তোমার ক্লিন্ন কোষেয়বাসখানি আমার চক্ষুর পীড়দায়ক, লঙ্কার সমস্ত ঐশ্বৰ্য্য তোমার পদতলে, বিলাসিনি, তুমি প্রসন্ন হও ।” কিন্তু এই অনশনকৃশ, শোকাক্রপূরিতনেত্র, ক্লিয়কোষেয়বসন তাপসী ক্রোধরক্তিমমুখে বলিলেন, “আমার প্রতি যে দুষ্টচক্ষে চাহিতেছ, তাহা এখনও কেন উৎপাটিত হইয়া ভূতলে পতিত হইল না ; দশরথ রাজার পুত্রবধু পুণ্যশ্লোক রামচন্দ্রের ধৰ্ম্মপত্নীর প্রতি ষে জিহবায় এই সকল পাপ কথা বলিলে,— তাহা এখনও বিদীর্ণ হইল না কেন ? তোমার কালরূপী রামচন্দ্র আসিতেছেন, এই অপ্রমেয়-ঐশ্বৰ্য্যশালিনী লঙ্কা-অচিরে চিরঅন্ধকারে লীন হইবে।” এই বলিয়া স্কুরিতাধর সীতা সম্বণ উপেক্ষার সহিত রাবণের দিকে পৃষ্ঠ ফিরাইয়া বসিয়া রছিলেন, তাহীর পৃষ্ঠলম্বিত একবেণী রাক্ষসকুলসংহারক মহাসপেঁর স্তায় অকুষ্ঠিত হইয়া রছিল ।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।