পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sፃ8 রাবণ ক্রোধান্ধ হইয়া সীতাকে প্রহার করিতে উদ্যত হইল, তখন স্বলিতহেমস্থত্রা, মদবিহালিতাঙ্গী, ধান্তমালিনীনামী রাবণের স্ত্রী তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া গৃহে লইয়। গেল । ইহার পরে সীতার উপর রাক্ষসীগণের ৰেহ্মপ তীব্র শাসন চলিল, তাহা অনুভব করা যাইতে পারে । কিন্তু সকল অত্যাচারউৎপীড়ন সহিতে হইবে বলিয়া কে এই ক্লিয়দেহা কোমল ব্রততীকে এই অসাধারণ ব্ৰততেজো মণ্ডিত করিয়া রাখিয়াছিল ? কে এই ফুলসূম রমণীকে শূলসম কাঠিন্ত প্রদান করিয়া তাহাকে রক্ষা করিয়াছিল ? কে এই অনশন, এই ছিন্নবাস, এই ভুশয্যাক্লিষ্ট নবনীতকোমল দেহের ভিতর এই অপুৰ্ব্ব অলৌকিক বিদ্যুতের শক্তি সঞ্চার করিয়া দিয়াছিল ? কোন স্বৰ্গীয় অাশা অসম্ভব রামাগমন ও রাক্ষসধ্বংসের পূর্বাভাস তাহার কর্ণেগুঞ্জিত করিয়া অশাস্তির মধ্যে র্তাহীকে কথঞ্চিৎ শাস্তিকণা প্রদান করিয়াছিল ? কে এই বিলাস-ঐশ্বর্য্যকে ঘৃণা ও উপেক্ষা করিতে শিখাইয়া সীতাকে পবিত্র যজ্ঞাগ্নির দ্যায় সমুদ্দীপ্ত করিয়া আমাদের অন্তঃপুরের আদর্শ করিয়া রাখিয়াছে ? এই সকল প্রশ্নের এক কথায় উত্তর দেওয়া যাইতে পারে, তাহাতে আমাদের ভ্রমের আশঙ্কা নাই । এই দৈন্তের মধ্যে এই আশ্চৰ্য্য ঐশ্বৰ্য্য, এই কোমলতার মধ্যে এই অসম্ভব দৃঢ়তা যদ্বারা সঞ্চারিত হইয়াছিল, তাহার নাম বিশ্বাস । বিশ্বাসব্ৰতের ফল অবশুম্ভাবী, সীতা সেই বলে যেন দুর ভবিষ্যতের গর্ভ বিদারণ করিয়া পুণ্যের জয় প্রত্যক্ষ করিয়া এত তেজস্বিনী হইয়াছিলেন। বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, শ্রাবণ । কিন্তু অসামান্তৰিপৎসস্কুল অবস্থার নিপীড়ন সহ করিয়া ধৈর্য্যরক্ষণ করা সকলসময় সম্ভবপর হয় না । কখন কখন সীতা ভূতলে পড়িয়া অজস্ৰ কাদিতে থাকিতেন ; তিনি দুঃখের সীমা দেখিতে না পাইয়া কতকি ভাবিতেন । কখন মনে হইত, রাবণকথিত দুইমাস চলিয়া গিয়াছে, স্বপকারগণ তাহার দেহ খণ্ডখও করিয়া রাবণের ভোজনের উপযোগী করিতেছে । কখন মনে হইত, চতুর্দশ বৎসর ক্ত পুর্ণ হইয়া গিয়াছে, রাম হয় ত অযোধ্যায় ফিরিয়া গিয়াছেন : বিশালনেত্রী রমণীগণের সঙ্গে তিনি আনন্দে কালাতিপাত করিতেছেন। এই কথা ভাবিতে তাহার হৃদয়ে দারুণ আঘাত লাগিত । তিনি বিশুষ্কমুখী হইয়া নিরাশ্রয়ভাবে চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করিতে থাকিতেন, তখন তাহার সৌন্দর্য্য প্রকাশ পাইয়াও যেন প্রকাশ পাইত না—“পদ্মিনী পঙ্কদিগ্ধেব বিভাতি ন বিভাতি চ।” কথন মনে হইত, রামচন্দ্র হয় ত তাহার জন্ত শোকাকুল হন নাই—তাহার হৃদয় যোগীর দ্যায়—সংসারের মুখদুঃখের উদ্ধে, তিনি পুজা ও ভালবাসা আকর্ষণ করেন, তিনি নিজে কাহারও জন্ত কথন ব্যাকুল হন নাই—এই ভাবিতে তাহার হৃদয় দুরুচুরু করিয়া উঠিত, তিনি আপনাকে -একান্ত নিরাশ্রয় মনে করিতেন । কথন বা রাক্ষসীগণের তাড়না অসহ হইলে তিনি ক্রুদ্ধস্বরে বলিতেন—“রাক্ষসীগণ, তোমরা অধিক কেন বল, আমাকে ছিন্নভিন্ন বা বিদীর্ণ করিয়া ফেল, অথবা অগ্নিতে দগ্ধ কর, আমি কিছুতেই রাবণের বশীভুত হইব না।” এই ভাবে তিনি একদিন দুঃখের প্রাস্তসীমায়