চতুর্থ সংখ্যা । ] সীতা । ›ፃ¢ উপস্থিত হইয়াছিলেন, অশোকের একটি শাখা অবলম্বন করিয়া দাড়াইয়া তিনি ভাবিতেছিলেন,—র্তাহার প্রাণ বড় ব্যাকুল হইয়া পড়িয়াছিল। এই সময় কে র্তাহীকে শিংশপাবৃক্ষের অগ্রভাগ হইতে চিরমধু রামনাম শুনাইল, সেই নাম শুনিয়া অকস্মাৎ তাহার চিত্ত মথিত হইয়া চক্ষের প্রান্তে অশ্রুকণা দেখা দিল । তিনি সজলচক্ষে বক্র কেশরাশির ভার এক হস্তে অপস্থত করিয়া উৰ্দ্ধমুখে চিরেসিত-দল্পিতনাম-কীৰ্ত্তনকারীকে দেখিতে লাগিলেন । অনাবৃষ্টিসত্তপ্ত পৃথিবী যেরূপ জলবিন্দুর জন্ত উৎকণ্ঠিতভাবে প্রত্যাশ করে, মধুর রামকথা শুনিবার জন্ত তিনি সেইরূপ ব্যগ্র হইয়া অপেক্ষ করিলেন । হনুমান কৃতাঞ্জলি হইয়া বলিলেন, “হে ক্লিক্সকোষেয়বাসিনি, আপনি কে, অশোকের শাখা অবলম্বন করিয়া দাড়াইয়াছেন? আপনার পদ্মপলাশচক্ষু জলভারে আকুলিত হইয়াছে কেন ? আপনি কি বশিষ্ঠের স্ত্রী অরুন্ধতী,— স্বামীর সঙ্গে কলহ করিয়া এখানে আসিয়াছেন, কিংবা চন্দ্রহীন হইয়া চন্দ্রের রমণী পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইয়াছেন ? আপনি যক্ষ, রক্ষ, বস্থ, ইহাদের কাহার রমণী ? আপনি ভূমিস্পর্শ করিয়া রহিয়াছেন, আপনার অশ্রজল দেখা যাইতেছে, এজন্ত অামার আপনাকে দেবুত বলিয়াও বোধ হইতেছে না। যদি আপনি রামের পত্নী সীতা হন, ফুরাত্ম রাবণ যদি জনস্থান হইতে আনিয়া আপনার এ ছৰ্দশ করিয়া থাকে, তবে সে কথা বলিয়া আমাকে কৃতাৰ্থ করুন।” সীতা সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিয়া হয় মানকে সমীপবৰ্ত্তী হইতে আজ্ঞা করিলে দূত নিম্নে অবতরণ করিলেন। তখন হনুমানকে দেখিয়া তিনি শঙ্কিত হইলেন,—সহসা মনে হইল, এ ত ছদ্মবেশধারী রাবণ নহে ? যিনি দয়িতের সংবাদপ্রাপ্তির আশায় ক্ষণপূৰ্ব্বে । উৎফুল্লা হুইয়। উঠিয়াছিলেন, তিনি সহসা ভয়বিহবলা হইয়া পড়িলেন, ভয়ে অশোকের শাখা হইতে বাহুলতা স্থলিত হইয়া পড়িল, তিনি মৃত্তিকার উপর বসিয়া পড়িলেন—“যথা যথা সমীপং স হনুমামুপসর্পতি । তখ তখ রাবণং সা তং সীতা পরিশঙ্কতে ॥” কিন্তু এই সন্দেহ দূর করা, হকুমানের পক্ষে সহজ হইল । রামের সংবাদ পাইয়। সীতার মুখ প্রফুল্লিত হইয়া উঠিল, কৃশাঙ্গীর চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইল, তিনি একটি কথা নানা ইঙ্গিতে ছমুমানের নিকট বারংবার জানিতে চাহিলেন–রাম তাহার জন্ত শোকাতুর হইয়াছেন কি না ? হনুমান তাহাকে জানাইলেন, “যিনি গিরির দ্যায় অটল, তিনি শোকে উন্মত্ত হইয়া পড়িয়াছেন, তাহায় গাম্ভীৰ্য্য চুর্ণ হইয়া গিয়াছে । দিবারাত্রি তাহার শাস্তি নাই,— কুসুমতরু দেখিলে উন্মত্তভাবে তিনি আপনার জন্ত কুসুম তুলিতে যান,–পদ্মপ্রস্থনগন্ধি মন্দমারুতের স্পর্শে মনে করেন, ইহা আপনার মৃদ্ধ নিশ্বাস, স্ত্রীলোকের প্রিয় কোন সামগ্ৰী দেখিলে তিনি উন্মত্ত হইয়া আপনার কথা বলিতে থাকেন, জাগরণে আপনার কথা ভিন্ন আর কিছু বলেন না, আবার স্বপ্ত হইলেও ‘সীতেতি মধুরাং বাণীং ব্যাহরন প্রতিবুধ্যতে । তিনি প্রায়ই উপবাসে দিনযাপন করেন-৮‘ন মাংসং রাঘবো ভুঙক্তে ন চৈব মধু সেবতে।” এই কথা শুনিতে শুনিতে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।