পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՖՊԵ এই মন্দিরের পুজারী ছিলেন। গাঙুলিমহাশয় বলিলে চারিদিকে দশক্রোশের ভিতর তাহাকেই বুঝাইত, কেন না, লোকে বিশ্বাস করিত যে, তিনি সিদ্ধতান্ত্রিক । বাস্তবিক তাহার স্বদীর্ঘ স্থগেীর তক্ষতে, স্বপ্রশস্ত ললাটতলে প্রৌঢ়বয়সেও যে যুবজনোচিত আনন্দজ্যোতি প্রতিবিম্বিত হইত, সচরাচর, বিষয়াসক্ত লোকে তাহ নিতান্ত ছল্লভ । তাহার উপর অনন্তসাধারণ কতকুগুলি শক্তি র্তাহাতে বিকশিত হইয়াছিল । ফলিত জ্যোতিষে এবং করকোষ্ঠীতে তিনি পারদর্শী ছিলেন, তাহার টোটুকা ঔষধ কখন ব্যর্থ হুইত না । সকলের উপর সপচিকিৎসায় তাহার সমকক্ষ ব্যক্তি দেখা যাইত না । সৰ্পদষ্ট বিস্তর লোককে মন্ত্রেীষধিবলে বাচান ছাড়া সৰ্পভয়নিবারণের নানা উপায় গাণ্ডুলিমহাশয়ের জানাশুনা ছিল । তন্মধ্যে সসপ গৃহ স্বচক্ষে না দেখিয়াও কেবলমাত্র লোকমুখে তাহার বর্ণনা শুনিয়া খড়িগণনাপূৰ্ব্বক বিষধরের অবস্থানস্থান নির্দেশ করার ক্ষমতা সৰ্ব্বপ্রধান এবং প্রধানত এই গুণে তিনি সকল শ্রেণীর পুজনীয় ছিলেন। g দয়াদাক্ষিণ্যের জন্ত ও গঙ্গোপাধ্যায়মহাশয় লোকপ্রিয় ছিলেন । ধনীর স্বারে স্বেচ্ছায় বড় যাইতেন না এবং র্তাহার নিয়োগকর্তা মন্দিরের সেবাইত জমিদারের গৃহেও গতিবিধি তেমন ছিল না । কিন্তু শ্মশানতলার চতুঃসীমায় চারিপাচক্রোশের মধ্যে এমন দীনদুঃখী কেহ ছিল না, যাহার খবর তিনি না রাখিতেন । ইহাতে র্তার কোন ভেদজ্ঞান ছিল না। পাপপুণ্যের গৃহে সমভাবে তিনি করুপ বিতরণ করিয়া আসিতেন । दछन्निथनि ! [ ৩য় বধ, শ্রাবণ। পল্লীর ভদ্রসমাজে ইহাতে কথা না উঠিত, এমত নহে, কিন্তু তিনি বলিতেন যে, দেবতার বৃষ্টি উৰ্ব্বর অনুৰ্ব্বর ভূমি বিচার করে না । পাপী তাপী সকলকে সমভাবে প্রেমবিতরণের মত ধৰ্ম্ম আর নাই । সিদ্ধতান্ত্রিক নামে পরিচিত লোকের মুখে প্রকারাস্তরে বৈষ্ণবের সাধুবাদ শুনিয়া সকলেই অবাক হইত। তাহাতে গাঙুলিমহাশয় কেবল হাসিতেন । নিবিড়বটচ্ছায়াতলে বসিয়া বসিয়া বৈশাখজ্যৈষ্ঠের দিনে তাহার প্রাণ প্রখররৌদ্রক্লিষ্ট জীবমাত্রের জন্ত পুড়িত। এবং প্রকৃতপক্ষে চৈত্রসংক্রাস্তির পর হইতেই পরের জন্ত র্তার ছুটাছুটি স্বরু হইত। নিজের অভাব নিতান্ত সামান্ত, কাজেই মন্দিরের আয়ের যে অংশ তিনি পাইতেন, তাহাতে তাহার কিছু কিছু সঞ্চয় হইত। এই অর্থ গাঙুলিমহাশয় নববর্ষের প্রথমদিন হইতে আরম্ভ করিয়া জ্যৈষ্ঠের শেষ পর্য্যন্ত জলছত্রের ব্যবস্থায় ব্যয় করিতেন । লোকে দেখিত, শ্মশানতলার অদূরে কাটোয়ার রাজপথে গাঙুলিমহাশয় গঙ্গাজলপূর্ণ অনেকগুলি কলস, শুড় ও ভিজা ছোলার রাশি লইয়া বসিয়া আছেন এবং সহস্ত্যেমুখে প্রায় সমস্তদিন তৃষ্ণাৰ্ত্ত পথিকদের ধরিয়া ধরিয়া সেবা করিতেছেন। তাহার ব্যবস্থায় গবাদির জন্ত বড় বড় ডাবায় পৃথকৃ ভাবে জল রক্ষিত হইত, পক্ষীদের জন্ত প্রত্যেক বৃক্ষমূলে নিজে তিনি তণ্ডুলকণা ছড়াইয়া দিতেন। তাহ ছাড়া প্রত্যুষে স্নানাস্তে যাতায়াতের পথে স্বহস্তে ছোটবড় সকল গাছের গোড়ায় অল্পবিস্তর জলসেচন, এই সময়ে তাহার প্রাতঃকৃত্যের প্রধান অঙ্গ হইয়া দাড়াইত । যখন-তখন