চতুর্থ সংখ্যা । ] বলিতেন, “যোগেশ্বর আমাদিগকে বুঝাইয়া দেন যে, বৎসরের মধ্যে অন্তত দুইটি মাস আছে, যখন জড় জীব সকলের দুঃখ একই রকমের । শীতল বটের ছায়ায় বসিয়া বসিয়া প্রাণ আমার সর্বভূতের জন্ত হুহু করে, তাই যথাসাধ্য এ তৃষ্ণানিবারণের ব্রত লইয়াছি।” প্রাত্যহিক জলদানত্ৰত নিষ্ঠার সহিত সমাধান করিয়া স্থৰ্য্যাস্তের পর গঙ্গোপাধ্যায়মহাশয় এই সময়ে পুনরায় গঙ্গাস্নান করিয়া আসিতেন এবং তার পর স্বপাক হবিষ্যার গ্রহণ করিতেন । নিজের জন্ত র্তাহাকে কেহ কখন অসুগ্ৰহভিক্ষা করিতে দেখে নাই, কিন্তু কোন গ্রামে জলকষ্ট উপস্থিত হইয়াছে শুনিলে স্বারে দ্বারে ভিক্ষা করিয়াও তিনি তাহার ব্যবস্থা করিতেন। কাটোয়-অঞ্চলে ছোটবড় অনেকগুলি দাধিক গাঙুলিমহাশয়ের ভিক্ষণ এবং যত্নের ফল, র্তাহার স্বর্গারোহণের পর গাণ্ডুলিদীঘি নামে তাহাদের নামকরণ হইয়াছে । তাহার জীবিতমানে কেহ তদীয় নামের সহিত তাহাদিগকে সংযুক্ত করিলে তিনি ক্ষুব্ধ হইতেন । বিনীতভাবে বলিতেন, “বাপুসকল, মানুষের নাম কল্পদিন টিকিবে ? তোমরা যোগেশ্বরের নাম কর ।” প্রৌঢ়বয়স্ক গঙ্গোপাধ্যায়মহাশয়কে কখনকথন পল্লীগ্রামের পাঠশালায় এবং যুবকদের খেলার আডম্ভায় দেখা যাইত। তাহtদিগকে শুামাবিষয়ক এবং সঙ্কীর্তনের গানে উৎসাহিত করা তার একটি প্রিয় কাৰ্য্য ছিল । তিনি বলিতেন, “পরচর্চায় যে আমোদ পায়, কাজে না হইলেও মনে সে পাপী,—একটুতে পকে ডুবিতে পারে।” বিশেষত স্ত্রীপুরুষের 8 শমশানতলা । ) హి নীতিচরিত্রঘাটত অপবাদ রটাইয়া যাহারা আমোদ পায়, তাহার কাছে সহজে তাহীদের নিস্তার ছিল না । তাহার মতে এই শ্রেণীর জীবের সংসারের যত অনিষ্টকারী, আর কেহ তত নহে । বলিতেন, “নিন্দা, ঘৃণা, ভয়, তিন থাকৃতে নয়। সন্দেহমাত্র সম্বল করিয়া যাহারা অন্তের চরিত্রে দোষারোপ করে, এই তিনকেই লঘু করিয়া তাহার নিন্দিতের ভিতর সন্ত্রমের ভাব কমাইয়া আনে । তখন পাপে পড়া কিছু বিচিত্র নয় । অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপবাদ প্রচার অাগে, কাৰ্য্যত পাপ পরে।” সচরাচর খেলা ও গানের আডডীয়-- বিশেষত এই বাঙলাদেশে—এই শ্রেণীর কল্পনা-জল্পনা যত মুখরোচক, আর কিছুই তেমন নয়। কাজেই গাঙুলিমহাশয়ের এই প্রকারের উপদেশ অধিকাংশ স্থলে হাস্যরস উদ্রিক্ত করিত মাত্র এবং ইহা লইয়। তাহার অসাক্ষাতে তদীয় যৌবনকালের অজ্ঞাত ইতিহাসের যেরূপ সমালোচনা হইত, একালের গবেষণাপূর্ণ অনেক পুরাতত্ত্ব তাহাতে লজ্জা পাইতে পারে । ১২৭০ সালের শারদীয়া মহাষষ্ঠীর রাত্রি বাঙলাদেশে চিরস্মরণীয়। অভূতপূৰ্ব্ব প্রবল ঝটিকার সে ভয়ানক রাত্রি গঙ্গোপাধ্যায়মহাশয়ের পক্ষে অনেকের মত কাল হইয়। আসিয়াছিল। দিবাবসানে তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন, মা দুর্গ সেবার প্রলয় ঘটাইতে আসিতেছিলেন । যোগেশ্বরমন্দির যথাসাধ্য স্বরক্ষিত করিয়া ঝড়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি গঙ্গাতীরে অtসিয়া বসিয়াছিলেন এবং অস্পষ্টীলোকে নৌকা বা মনুষ্যদেহ ভাসিয়া যাইতে দেখিলেই নিজের প্রাণের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৮৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।