চতুর্থ সংখ্যা। ] আজিকার ভারতবর্ষ। الاسناد «so প্রভৃতির সম্বন্ধে এইরূপ অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়াছেন – ভারতবর্ষে হিন্দুর সংখ্যা ২৪,৭৭,৩১,৭২৭ ; শিখদিগের সংখ্যা ১৯,০৭,৪৩৩ ; মুসলমানের সংখ্যা ৫,৭৩,২১,১৬৪ ; আদিমবাসীদিগের সংখ্যা ৯২,৪৩,৪৬৭ খৃষ্টানদের সংখ্যা ২২,৮৪,৩৪৭ ; পার্সিদের সংখ্যা ৮৯,৯৪৪ ; এবং ইহুদির সংখ্যা ১৭,০০০ । হিন্দু ও মুসলমান,এই দুইটিই ভারতবর্ষের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ জাতিবিভাগ ; এই দুই জাতিই সমস্ত ভারতবর্ষে পরিব্যাপ্ত ; এবং এই উভয়ের মধ্যে ভীষণ বিদ্বেষবহ্লি প্ৰজলিত রহিয়াছে। হিন্দু কিংবা মুসলমানেরা-—এমন কি, তাহীদের মধ্যে যাহারা সুশিক্ষিত, তাহারাও যুরোপীয়দিগের সহিত যে কখন মিশিয়া যাইবে, তাহার কোন সস্তাবনা নাই । সে-পক্ষে তাহীদের ধৰ্ম্মই বিষম প্রতিবন্ধক । কেবল পাসাঁদের মধ্যে যাহার। শিক্ষিত, তাহারাই ইংরাজ হইয়া যাইতেছে। তবে কি না, পাসাঁদের সংখ্যা নিতান্তই অল্প ; কিন্তু সংখ্যায় অল্প হইলেও, উহার উদ্যমশীল, উদ্যোগী ও ধনাঢ্য । বোম্বাইনগরে তুলার যে-সকল কলকারখানা আছে,তাহীদের মধ্যে অধিকাংশ স্বত্বাধি কারী পাসী। আবার, উহাদের মধ্যে অনেকেই উকীল, ডাক্তার, অধ্যাপক ; বোম্বায়ের সাহিত্যসভায়, রাষ্ট্রীয় সভায়, পৌরকার্য্যনিৰ্ব্বাহক সভায় উহাদের দেখিতে পাওয়া যায় ; এমন কি, ভারতবর্ষের যে প্রতিবাদীর দল ইংরাজের নিকট সমান অধিকারলাভের জষ্ঠ ও উচ্চপদে নিযুক্ত হইবার জন্য দাবী করে, কখন-কথন উহাদিগকে ঐ দলেরও অগ্রণীরূপে দেখিতে পাওয়া যায়। এদেশীয় যে দুইজন পালমেণ্টের সভ্য, তাহারা উভয়েই পাসী ;–একজন রক্ষণশীল ও আরএকজন উদার দলের অন্তভূক্ত। কি রাষ্ট্রনীতি, কি বিদ্যাবুদ্ধি, কি বাণিজ্যব্যবসায়— সকল বিষয়েই পাসীর হিন্দুদিগকে ছাড়াইয়। উঠিয়াছে। হিন্দুরাও বুদ্ধিমান, কাৰ্য্যক্ষম ও সুশিক্ষিত বটে, কিন্তু বর্ণভেদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকায়, তাহার যুরোপীয়দিগের সহিত, মিশিতে পারে না । ইহার বিপরীতে, পার্সীর পাশ্চাত্য আচারব্যবহার গ্রহণে উন্মুখ । উহাদের ধুচনি-টুপি ক্রমশ উঠিয়৷ যাইতেছে, তাহার স্থলে একপ্রকার গোলাকার শিরোবেষ্টন প্রচলিত হইতেছে । গুনা যায়, একজন ধনাঢ্য পাসী সিপাহি-বিদ্রোহের সময়, য়ুরোপীয় পরিচ্ছদ পরিধানের দৃষ্টাত্ত সৰ্ব্বপ্রথমে প্রদর্শন করেন । কেন তিনি বেশ পরিবর্তন করিলেন, জিজ্ঞাস করায়, তিনি নাকি বলিয়াছিলেন —“হিন্দুদের জানা আবশ্যক, আমরা চিরকাল ইংরাজের পক্ষেই থাকিব, কখনই তাহাদের প্রতিকূলে যাইব না ।” অনেকদিন হইতেই ,সঙ্গতিসম্পন্ন পাসীরা ইংরাজের পরিচ্ছদ পরিধান করিতেছে ; ইংরাজের আসবাবে গৃহ সজ্জিত করিতেছে ; ও ইংরাজি ধরণে অভ্যর্থনাদি করিতেছে। কতিপয় ধনাঢ্য পাসীর গৃহ দর্শন করিতে গিয়া, চারিদিকে সতৃষ্ণনয়নে অমুসন্ধান করিয়াও, মিনার কাজ, কাঠের খোদাই কাজ, র্তনবার জিনিস, গালিচ প্রভূতি চমৎকার দেশীয় শিল্পসামগ্ৰী দেখিতে পাইলাম না । * গৃহের সর্বত্রই ইংরাজি আসবাব, ইংরাজি কাগজ, ইংরাজি কাপড় ।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৮৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।