চতুর্থ সংখ্যা । } আজিকার ভারতবর্ষ। չե-Ֆ কোন শৈলপার্শ্বে স্থাপিত। ঐ মুর্তিগুলি পলেপদে স্মরণ করাইয়া দেয় যে, দেবতারা সৰ্ব্বত্রই অদৃশুভাবে বর্তমান, এবং কোন পদার্থ যতই অকিঞ্চিৎকর হউক না কেন, তাহীদের মধ্যেও তাহীদের আত্মা বিরাজমান। হিরোডোটাস প্রাচীন মিসরবাসীদিগের সম্বন্ধে যে কথা বলিয়াছিলেন, তাহা ভারতবাসীদিগের সম্বন্ধে বিলক্ষণ খাটে। অর্থাৎ,“মানবমণ্ডলীর মধ্যে ইহারা সৰ্ব্বাপেক্ষ ধৰ্ম্মপরায়ণ ।” এদিকে আবার শাক্যমুনি প্রচার করেন – “জীবন যন্ত্রণাময়, আত্ম-অস্তিত্ব বিস্তৃত হইয়া অনন্তে বিলীন হওয়াই মনুষ্যের পরম মুখ ।” যদিও তাহার পূর্ববৰ্ত্তী ও র্তাহার সমকালীন হিন্দুসন্ন্যাসীদিগেরও এই মত ছিল, কিন্তু তাহাদের সহিত এইমাত্র প্রভেদ যে, শাক্যমুনি দেবতার অস্তিত্ব ও বর্ণভেদ মানিতেন না। খৃষ্টপূৰ্ব্ব ষষ্ঠ শতাব্দী হইতে খৃষ্টোত্তর পঞ্চ শতাব্দী পর্য্যস্ত এই ধৰ্ম্ম ভারতবর্ষে প্রবল ছিল । তাহার পর, ষষ্ঠ শতাব্দীতে বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে আবার ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মের পুনরুখীন হয়। আধুনিক হিন্দুধৰ্ম্ম প্রাচীন ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মেরই রূপাস্তরবিশেষ ; উহার মধ্যে বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রভাবচিহ্র এখনও পর্য্যস্ত কিছু-কিছু লক্ষিত হয় । পৌরাণিক হিন্দুধন্মের মধ্যে এক্ষণে বুদ্ধদেব স্থান পাইয়াছেন ; তিনি এক্ষণে বিষ্ণুর একটি অবতার বলিয়া পরিগণিত । 彰 ব্ৰহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর—এই ত্রিমূৰ্ত্তিই পৌরাণিক হিন্দুধৰ্ম্মের কেন্দ্রস্থল। ইহার মধ্যে ব্ৰহ্মা তেমন লোকপ্রিয় হইতে পারেন নাই। সমস্ত ভারতের মধ্যে তাহার একটিমাত্র মন্দির বিদ্যমান। ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মের অর্থে ব্ৰক্ষার ধৰ্ম্ম বুঝায় না ; ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্মের অর্থ— ব্রাহ্মণদিগের ধৰ্ম্ম । শিব ও বিষ্ণুই ভারতবর্ষের লোকপ্রিয় দেবতা । উত্তর-ভারতে বিষ্ণুর ও দক্ষিণ-ভারতে শিবের অপেক্ষাকৃত অধিক প্রভাব । ব্যবহারক্ষেত্রে হিন্দুধৰ্ম্ম অতীব বিস্তৃত-একপ্রকার সৰ্ব্বধৰ্ম্মের সারসংগ্ৰহ বলিলেও হয় । হিন্দুধৰ্ম্ম যে-কোনদেবতাকে আত্মসাৎ করিয়া লইতে পারে— কোন দেবতাকেই বর্জন করে না । যেমন একদিকে, “ক্যাথলিকৃ"ষ্টসম্প্রদায়ের ধৰ্ম্মপ্রচারকেরা খৃষ্টানধৰ্ম্মে নবদীক্ষিত হিন্দুদিগকে দেবালয়ে যাইতে কিংবা তৎসংক্রান্ত কোন কাজ করিতে নিষেধ করেন, তেমনি তাহার বিপরীতে, স্বধৰ্ম্মনিষ্ঠ হিন্দুরা খৃষ্টধর্মের কোন উৎসব-যাত্রায় কিংবা কোন খৃষ্টগির্জার সম্মুখে আরাধনায় যোগ দিতে কিছুমাত্র সঙ্কোচ লোধ করে না । অষ্টাদশ শতাব্দীর কতিপয় খৃষ্টধৰ্ম্মপ্রচারক, যাহাতে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা সহজে খৃষ্টধৰ্ম্ম অবলম্বন করিতে পারে, এই উদ্দেশে আপনাদিগকে যে-সময়ে শ্বেতব্ৰাহ্মণ বলিয়। পরিচয় দেন, বাইবেল-গ্ৰস্থকে পঞ্চম বেদ বলিয়। প্রতিপাদন করেন, ব্ৰহ্ম৷ আব্রাহামের অপভ্রংশ, কৃষ্ণ খৃষ্টের অপভ্রংশ, এইরূপ অভিপ্রায় প্রকাশ করেন, তখন ইহার প্রতিবাদ ব্রাহ্মণের করে নাই,—ইহার প্রতিবাদ খৃষ্টানেরাই করিয়াছিল ; সাধারণ খৃষ্টানদিগের নিকট এই সব কথা অখ্ৰীষ্টানোচিত বলিয়া মনে হইয়াছিল। ব্রাহ্মণদিগের মধ্যে ধৰ্ম্মমতসম্বন্ধে যে তেমন বাধাবাধি নাই, তাহার কারণ, তাহদের মধ্যে সেরূপ কোন ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় শাসনতন্ত্র নাই—পোপনাই, বিশপ, নাই, বিচারসভা নাই, সকলে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৮৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।