পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] অবগাহন করিতেন, কিংবা গোদাবরীউীরস্থ বেতসকুঞ্জে সীতার উৎসঙ্গে মস্তক রক্ষা করিয়া মুখে নিদ্র। যাইতেন ; আর এদিকে মোন সন্ন্যাসী খনিত্র দ্বারা মৃত্তিক খলন করিয়া পর্ণশালা নিৰ্ম্মাণ করিতেন, কখনও পরশুহস্তে শালশাখা কৰ্ত্তন করিতেন, কখনও অস্ত্রশস্ত্র এবং সীতার পরিচ্ছদ ও অলঙ্কারাদিতে পূর্ণ বিপুল বংশপেটিক হস্তে লইয়া এক স্থান হইতে স্থানান্তরে যাত্রা করিতেন,কখনও বা মহিষ ও বৃষের করাষ সংগ্ৰহ করিয়া অগ্নি জালিবার বন্দোবস্ত করিতেন। একদিন দেখিতে পাই, শীতকালের তুষারমলিন জ্যোৎস্নায় শেষরাত্রিতে যবগোধূমাচ্ছন্ন বনপন্থায় নীলশেষ-নলিনী-শোভিত সরসীতে কলস লইয়া তিনি জল তুলিতেছেন। অন্ত একদিন দেখিতে পাই, চিত্রকূটপৰ্ব্বতের পর্ণশালা হইতে সরসীতটে যাইবার পথটি চিহুিত করিবার জন্তু তিনি পথে পথে উচ্চ তরুশাখায় চীরথও বদ্ধ করিয়া রাখিতেছেন। এই সংযমী স্নেহবীর ভ্রাতৃসেবায় তাহার নিজসত্তা হারাইয়া ফেলিয়াছিলেন । রামচন্দ্র পঞ্চবটীতে উপস্থিত হইয়া লক্ষ্মণকে বলিয়াছিলেন—“এই সুন্দর তরুরাজিপুর্ণ প্রদেশে পর্ণশালারচনার জন্ত একটি স্থান খুজিয়া বাহির করিয়া লও।” লক্ষ্মণ বলিলেন, “আপনি যে স্থানটি ভালবাসেন, তাহাই দেখাইয়া দিন, সেবকের উপর নির্বাচনের ভার দিবেন না ।” প্রভুসেবায় এরূপ আত্মহারা ভূত্য,—এমন আর কোথায় দেখিয়াছেন । রামচন্দ্র স্থান নির্দেশ করিয়া দিলে লক্ষ্মণ ভূমির সমতা সম্পাদন করিয়া খনিত্ৰহস্তে মৃত্তিকাখননে প্রবৃত্ত হইলেন । লক্ষণ । SS4 আর-এক দিনের দৃশু মনে পড়ে,—গভীর অরণ্যে চারিদিকে কৃষ্ণসর্প বিচরণ করিতেছে, পথহারা বিপন্ন পথিকত্ৰয় রাত্রিবাসের জন্য জঙ্গলের নিভৃতে বৃক্ষনিম্নে গুইয়া আছেন, সীতার বদনশ্ৰী অনশন ও পর্য্যটনে একটু হতশ্ৰী হইয়া পড়িয়াছে। রামচন্দ্রের এই দুঃখময়ী রজনীর কষ্ট অসহ হইল, তিনি লক্ষ্মণকে অযোধ্যায় ফিরিয়া যাইবার জন্ত বারংবার পীড়াপীড়ি করিতে লাগিলেন, “এ কষ্ট আমার এবং সীতারই হউক, তুমি ফিরিয়া যাও, শোকের অবস্থায় সাস্বনাদান করিয়া আমার মাতাদিগকে পালন করি ও * লক্ষ্মণ স্বীয়-স্নেহ-সম্বন্ধে বেশী কথা কহিতে জানিতেন না, রামের এবংবিধ কাত রোক্তিতে দুঃখিত হইয়া বলিলেন— “ন হি তাতং ন শক্রম্বং ন সুমিত্ৰাং পরস্তুপ । এই মিচ্ছেয়মদ্যাহং স্বৰ্গঙ্কাপি জয় বিনা।” ‘আমি পিতা, সুমিত্র, শক্রম্ন, এমন কি স্বর্গও তোমাকে ছাড়িয়া দেখিতে ইচ্ছা করি . না ।” কবন্ধ মরিল, জটায়ু মরিলেন ; আমরা দেখিতে পাই, লক্ষ্মণ নিঃশব্দে সমাধিস্থল খনন করিয়া কাষ্ঠ আহরণপূর্বক কবন্ধ ও জটায়ুর সৎকার করিতেছেন । দিবারাত্র তাহার বিশ্রাম ছিল না—এই ভ্রাতৃসেবাই তাহার জীবনের পরম আকাজক্ষার বিষয় ছিল । বনে আসিবার সময় তাহাই তিনি বলিয়া আসিয়াছিলেন— “ভবাংন্ত সহ বৈদেছল গিরিসাঙ্গুৰু রংস্যসে । অহং সৰ্ব্বং করিব্যামি জাগ্রতঃ খপতশচ তে । ধমুরাদায় সগুণং খনিত্রপিটক্ষাধরঃ ” “দেবী জানকীর সঙ্গে আপনি গিরিসায় দেশে বিহার করিবেন, জাগরিত বা নিজিতই থাকুন, আপনার সকল কৰ্ম্ম আমিই