পঞ্চম সংখ্যা । ] লক্ষমণ । 令令》 করিয়াও বুঝিতে পারি নাই। আমি মহারাজের চরিত্রে পিতৃত্বের কোন নিদর্শন দেখিতে পাইতেছি না। আমার ভ্রাতা, বন্ধু, ভর্তা ও পিতা, সকলই রামচন্দ্র ।”——“অহং তাবন্মহারাজে পিতৃত্বং নোপলক্ষয়ে। ভ্রাতা ভর্তা চ বন্ধুশ পিতা চ মম রাঘবঃ ” ভরতের প্রতি তাহার গভীর সন্দেহ ছিল । কৈকয়ীর পুত্র ভরত যে মাতার ভাবে অনুপ্রাণিত হইবেন, এ সম্বন্ধে তাহার অটল ধারণা ছিল, কেবল স্নামের ভৎসনার ভয়ে তিনি ভরতের প্রতি কঠোরবাক্যপ্রয়োগে নিবৃত্ত থাকিতেন । কিন্তু যখন জটাবদ্ধকেশকলাপ অনশনকৃশ ভরত রামের চরণ প্রাস্তে পড়িয়া ধুলিলুষ্ঠিত হইলেন, তখন লক্ষ্মণ র্তাহাকে চিনিতে পারিয়া সলজ্জ স্নেহপরিতাপে ম্রিয়মাণ হইলেন । একদিন শীতকালের রাত্রে বড় তুষার পড়িতেছিল, শীত্যধিক্যে পক্ষিগণ কুলায়ে গুষ্ঠিত হইয়া ছিল, ভরতের জন্য সেই সময় লক্ষ্মণের প্রাণ কাদিয়া উঠিল, তিনি রামকে বলিলেন—“এই তীব্রশীত সহ করিয়া ধৰ্ম্মাত্মা ভরত আপনার ভক্তির তপস্তা পালন করিতেছেন । রাজ্য, ভোগ, মান, বিলাস, সমস্ত ত্যাগ করিয়া নিয়তাহারী ভরত এই বিষম শীতকালের রাত্রিতে মৃত্রিকায় শয়ন করিতেছেন। পারি ব্ৰজ্যের নিয়ম পালন করিয়া প্রত্যহ শেষরাত্রিতে ভরত সরযুতে অবগাহন করিয়া থাকেন। চিরস্থখোচিত রাজকুমার শেষরাত্রের তীব্রশীতে কিরূপে সরযুতে স্নান করেন r এই লক্ষ্মণই পুৰ্ব্বে "ভরতন্ত বধে 7বং নাহং পশুামি কঞ্চন” বলিয়া ক্রোধপ্রকাশ করিয়াছিলেন। যেদিন বুৰিতে পারি লেন, তিনি বনে বনে ঘুরিয়া রামের যেরূপ সেবায় নিরত, অযোধ্যার মহাসমৃদ্ধির মধ্যে - বাস করিয়াও ভরত রামভক্তিতে সেইরূপ কৃচ্ছসাধন করিতেছেন, সেই দিন হইতে তাহার স্বর এইরূপ স্নেহার্জ ও বিনম্র হইয়। পড়িয়ছিল। কিন্তু তিনি কৈকয়ীকে কখনই ক্ষমা করেন নাই, রামের নিকট একদিন বলিয়াছিলেন-—“দশরথ র্যাহার স্বামী, সাধু ভরত যাহার পুত্র, সেই কৈকয়ী এরূপ নিষ্ঠুর হইলেন কেন ?” লক্ষ্মণের ক্ষত্রিয়বৃত্তিটা একটু অতিরিক্ত মাত্রায় প্রকাশ পাইত । তিনি রামের প্রতি অন্যায়কারীদিগের প্রসঙ্গে সহসা অগ্নির স্তায় জলিয়া উঠিতেন । পিতা, মাতা, ভ্রাতা, কাহাকেও তিনি এই অপরাধে ক্ষমা করিতে ইচ্ছুক ছিলেন না । শরৎকালে অসন ও সপ্তপর্শের ফুলরাশি ফুটিয়া উঠিল, রক্তিমাভ কোবিদার বিকশিত হইল। মাল্যবান পৰ্ব্বতের উপকণ্ঠে তরঙ্গিণীর। মন্দগতি হইল, কুসুমশোভী সপ্তচ্ছদ-বৃক্ষকে গীতশীল ঘটুপদগণ বিরিয়া ধরিল, গিরিসামুদেশে বন্ধুজীবের হ্যামাভ ফল দেখা দিতে লাগিল । বর্ষার চারিটি মাস বিরহী রামচন্দ্রের নিকট শতবৎসরের দ্যায় দীর্ঘ বোধ হইয়াছিল। শরৎকালে নদীগুলি শীর্ণ হইলে বানরবাহিনীর সীতাকে সন্ধান কর। সহজ হইবে, সুতরাং—“সুগ্ৰীবস্ত নদীনাঞ্চ প্রসাদমভিকাঙ্ক্ষয়ন্”—সুগ্ৰীব ও নদীকুলের প্রসাদ আকাঙ্ক্ষা করিয়া রামচন্দ্র শরৎকালের প্রতীক্ষা করিতেছিলেন । সেই শরৎকাল উপস্থিত হইল, কিন্তু প্রতিশ্রুতির অনুযায়ী উদ্যোগের কোন চিন্তু না পাইৰ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।