পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] দুর হইতে স্থদুরে আত্মীয়তা বিস্তার করাই আমাদের অভ্যাস,—আমরা ঘনিষ্ঠ হইয়া বাস করি – আমরা যদি ক্ষমা না করি, ধৈর্য্য না ধরি, তবে আমাদের সমাজ ভাঙিয়া যায়, শাস্ত্রের শিক্ষণ ব্যর্থ হয় । অতএব আমাদের দুই জাতের দুইরকম আচরণ । যুরোপে শাস্ত্রের শিক্ষণ ও সমাজের ব্যবহার পরস্পর-বিরোধী । আমাদের সমাজ ক্ষমা, ধৈর্য্য, সন্তোষ ও সৰ্ব্বভুতে দয়া, এই শাস্ত্রমতের অমুকুলে প্রতিষ্ঠিত । এই সমাজে সুদীর্ঘকাল হইতে আমাদের চরিত্র গঠিত। অতএব মারামারিতে আমাদিগকে ইংরাজের কাছে হঠিতে হয়—কেবল ভয়ে নহে, অনভ্যাসে । যদি হঠিতে ন চাও, তবে শিশুকাল হইতে ঘরে-পরে সব্বত্র তাহার আয়োজন কপ্লিতে হয় । যাহা অামার, তাহাতে কাহাকেও অংশ বসাইতে দিব না ; যাহা পরের, তাঙ্গা জবরদখল করিতে চেষ্টা করিব ; তুব্বল সহপাঠীর উপর অন্তায় অ ভাচার করিব ; ঘুষি মরিবার সময় কাহারে নাকচোখ বাচাইয়। চলিব না, এবং নিষ্ঠুরতায় বিমুখ হওয়াকে পৌরুষের অভাব বলিয়া গণ্য করিব । এইরূপে যখন আমাদের আমূল পরিবর্তন হইঠে, তখন ইংরাজে-দেশীতে হাতাহাতি সমানভাবে চলিবে । বাঘে-সিংহে থাবামারামারি যেমন অত্যন্ত আমোদজনক দৃশু, আমাদের ও দণতভাঙtভাঙি সেইরূপ পরম কৌতুকাবহ হইতে পরিবে । নতুবা কি হইবে ? যে ব্যক্তি শিক্ষায় ও অভ্যাসে ও পুরুষানুক্রমে স্বভাববর্বর নহে, সে যদি কৰ্ত্তব্যের অনুরোধে চোখকান বুজিয়া ঘুষাযুষি । RNA প্রকৃতিবিরুদ্ধ উদ্যোগে প্রবৃত্ত হয়, তবে যে ভীষণ বর্বরতাকে জাগাইয়া তুলিবে, তাহার সহিত প্রতিযোগিতা করিবার উপযুক্ত নখদস্ত কোথায় মিলিবে ? আমরা উপদেশের তাড়নায় অত্যন্ত দুৰ্ব্বলভাবে কাজ আরম্ভ করিব, কিন্তু যে নিষ্ঠুর বিদ্বেষ উন্মথিত হইয়। উঠিবে, সেই হলাহল অনায়াসে গলাধঃকরণ করিবার শক্তি ও অভ্যাস আমাদের নাই । আমি এ কথা ভয় হইতে বলিতেছি না । দাঁতভাঙা, নাক-থ্যাবড়ানো, জেলে যাওয়া অত্যন্ত গুরুতর অশুভ বলিয়া গণ্য না-ই হইল । কিন্তু যে গরলকে পরিপাক করিতে আমরা স্বাভাবিক কারণেই অক্ষম, সেই গরলকে উদ্রিক্ত করিয়া তোলা দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক কি না, জানি না । কিন্তু একটা অবস্থা আছে, যখন ফলাফল বিচার অসঙ্গত এবং অদ্যায় । ইংরাজ যখন অন্যায় করিয়া আমাকে অপমান করে, তখন যতটুকু আমার সামর্থ্য আছে, তৎক্ষণাৎ তাহার প্রতিকার করিয়া জেলে যাওয়া এবং মরাও উচিত । ইহা নিশ্চয় জানিতে হইবে যে, হয় ত ঘুষায় পারিব না এবং হয় ত বিচারশালাতেও দোষী সাব্যস্ত হইব ; তথাপি অন্তায় দমন করিবার জন্ত প্রত্যেক মানুষের যে স্বৰ্গীয় অধিকার অাছে, যথাসময়ে তাহা যদি না খাটাইতে পারি, তবে মনুষ্যের নিকট হেয় এবং ধৰ্ম্মের নিকট পতিত হইব । নিজের দুঃখ ও ক্ষতি আমরা গণ্য না করিতে পারি, কিন্তু যাহা অদ্যায়, তাহ সমস্ত জাতির প্রতি এবং সমস্ত মানুষের প্রতি অন্তায় এবং বিধাতার স্তায়দণ্ডের ভার আমাদের প্রত্যেকের উপরেই আছে। বিদ্বেষ হইতে, বাহাদুরি হইতে,