পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি । (t রমেশ অন্নদণবাবুর ঘরের মধ্যে করিল । তখন অন্নদণবাবু মুখের খবরের কাগজ চাপা দিয়া কেদণরায় পড়িয়া নিদ্রা দিতেছিলেন । রমেশ ঘরে প্রবেশ করিয়া কাশিতেই তিনি " চকিত হইয়া উঠিয়। খবরের কাগজটা তুলিয়া ধরিয়াই কছিলেন, “দেখিয়াছ রমেশ, এবারে ওলাউঠায় কত লোক মরিয়াছে ?” অল্পদাবাবু নিজের ভগ্নস্বাস্থ্য ও শারীরিক দুৰ্ব্বলতার কথা প্রচার করিতে কথনে কুষ্ঠিত হইতেন না, কিন্তু নিদ্রা য়ে তাহাকে অসময়ে অভিভূত করিতে পারে, ইহা স্বীকার করা তাহার পক্ষে কঠিন ছিল । তিনি যে সঙ্গরের মৃত্যুতালিকা লইয়া অত্যন্ত নিবিষ্টচিত্তে মনে মনে মালোচনা করিভেছিলেন, রমেশের নিকট ইস্থাই প্রতিপন্ন করিতে ব্যগ্র হইয়া উঠিলেন । সহয়ের আবর্জন দূর করিবার প্রতি মুনিসিপালিটির ঔদাসীন্ত যে কিরূপ দৃঢ়বদ্ধমুল, অত্যন্ত গম্ভীর উদ্বেগের সহিত ইহাই তিনি রমেশের সহিত আলোচনা করিতে উৎসাহসহকারে প্রবৃত্ত হইলেন । রমেশ অত্যন্ত ক্ষীণভাবে দুই একবার সায় দিল। যদিও রমেশের মুখ দেখিয়া মনে হইতে পারিত যে, ওলাউঠার জন্ত কলিকাতাসহরের সমস্ত উৎকণ্ঠ তাহারি মাথার চাপিয়াছে, কিন্তু আলোচনায় তাহার শৈথিল্য দেখিলে স্পষ্টই বুঝা যাইত, মৃত্যুতালিকার প্রবেশ উপরে চেয়েও গুরুতর চিন্তার কারণ ছিল । অন্নদীবাবু তাহা বুঝিলেন না । তিনি কহিলেন –“সহরের যেরূপ অবস্থা দেখিতেছি, বিবাহে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনটা সংক্ষেপ করিতে হইবে ।” দুষিত জলে মাছ বাস করে এবং সেই মাছ ঝোলের বাটিযোগে ঘরে-ঘরে মহামারী বণ্টন করিয়া দেয়, অতএব রোগভয়ের সময় লঘুপর্ণক পরিমিত নিরামিষ ভোজই যে ব্যবস্থা, অন্নদাবাবু এই সম্বন্ধে আপনার বক্তব্য বিবৃত করিতেছিলেন । এই সুযোগ অবলম্বন করিয়া রমেশ কহিল, “বিবাহট আর কিছুদিন পিছাইয়া দিলেই ভাল হয় ।” অল্পদাবাবু কহিলেন—“পাগল হইয়াছ রমেশ ? ব্যামোকে কি আত ভয় করিলে চলে ? তাহা হইলে কলিকাতা-সহরে লোকের বিবাহ করা একেবারে বন্ধই করিতে হয় । আমোদের যে মু্যনিসিপালিটি ! কমিশনারগুলি যমদূত ।” নিজের এই রসিকতায় অল্পদণবাবু বিশেষ আমোদ প্রকাশ করিলেন, কিন্তু অন্তমনস্ক রমেশের নিকট সমস্তই ব্যর্থ হইল । রমেশ কহিল, “বিবাহ এখন কিছুদিন বন্ধ রাখিতে হুইবে—আমার বিশেষ কাজ আছে ৷” অন্নদাবাবুর মাথা হইতে সহরের মৃত্যুতালিকার বিবরণ একেবারে লুপ্ত হইয়া গেল। তাহার