পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

واواجد ক্ষণ পরে কহিল, “আপনারা যাহাকে একবার সৎপাত্র বলিয়া ঠাওরাইয়াছেন, তাহার সম্বন্ধে ফুটি চক্ষু বুজিয়া থাকেন । মেয়েকে যাহার হাতে চিরদিনের মত সমর্পণ করিতে যাইতে- • ছেন, ভাল করিয়া তাহার সম্বন্ধে খোঁজখবর রাখা উচিত । হোক না কেন সে স্বর্গের দেবতা, তবু সাবধানের বিনাশ নাই ।” অন্নদী । রমেশের মত ছেলেকে ও যদি সন্দেহ করিয়া চলিতে হয়, তবে ত সংসারে কাহারে সঙ্গে কোন সম্বন্ধ রাখা অসম্ভব হইয়া পড়ে । অক্ষয়। আচ্ছা, এই যে, দিন পিছাইয়া দিতেছেন, রসমশবাবু তাহার কারণ কিছু বলিয়াছেন ? অন্নদাবাবু মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে কহিলেন—“না, কারণ ত কিছুই বলিল না— জিজ্ঞাসা করিলে বলে, বিশেষ দরকার আছে ।” অক্ষয় মুখ ফিরাইয়া ঈষৎ একটু হাসিল মাত্র । তাহার পরে কহিল, “বোধ হয় আপনার মেয়ের কাছে রমেশবাবু একট। কারণ নিশ্চয় কিছু বলিয়াছেন।” অন্নদাবাবু । সস্তব বটে । অক্ষয় । তাহণকে একবার ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া দেখিলে ভাল হয় না ? “ঠিক রলিয়াছ” বলিয়া অন্নদাপাবু উচ্চৈঃস্বরে হেমনলিনাকে ডাক দিলেন । হেমনলিনী ঘরে ঢুকিয়া অক্ষয়কে দেখি । তাহার বীপের পাশে এমন করিয়া দাড়াইল, যাহাতে অক্ষয় তাহীর মুখ না দেখিতে পায় । অন্নদাবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন—“বিবাহের দিন যে হঠাৎ পিছাইরা গেল, রমেশ তাহার কারণ তোমাকে কিছু বলিয়াছেন ?” বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, আশ্বিন । হেমনলিনী ঘাড় নাড়িয়া কহিল—“না ।” অন্নদীবাবু। তুমি তাহাকে কারণ জিজ্ঞাসা কর মাই ? হেমনলিনী । না । অন্নদীবাবু। আশ্চৰ্য্য ব্যাপার । যেমন রমেশ, তুমিও দেখি তেমনি । তিনি আসিয়া বলিলেন, “আমার বিবাহে ফুরসৎ হইতেছে না”—তুমিও বলিলে, “বেশ ভাল, অার একদিন হুইবে ? বাস, আর কোন কথাবার্তা নাই ! 編 অক্ষয় হেমনলিনীর পক্ষ লইয়া কহিল, “একজন লোক যখন স্পষ্টই কারণ গোপন করিতেছে, তখন সে কথা লইয়া তাহাকে কি কোন প্রশ্ন করা ভাল দেখায় ? যদি বলিবার মত কিছু হইত, তবে ত রমেশবাবু আপনিই বলিতেন !” হেমনলিনীর মুখ লাল হইয়া উঠিল—সে কহিল, “এই বিষয় লইয়া আমি বাহিরের লোকের কাছে কোন কথাই শুনিতে চাই না । যাহা ঘটিল্পাছে, তাহাতে আমার মনে কোন ক্ষোভ নাই, সংশয় নাই—অগুলোকের যদি অত্যন্ত দুশ্চিন্তা জন্মিয় থাকে, তবে সেটা আমি সম্পূর্ণ অনাবগুক ৰলিয়া জ্ঞান করি !” এই বলিয়। হেমনলিনী দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । অক্ষয় পাংশু মুখে হাসি টানিয়া আনিয়া কহিল—“সংসারে বন্ধুর কাজটাতেই সব চেয়ে লাঞ্ছন। বেশি। সেইজন্তই আমি বন্ধুত্বের গৌরব বেশি অসুভব করি । আপনার আমাকে ঘৃণা করুন আর গালি দিন, রমেশকে সন্দেহ করাই আমি বন্ধুর কৰ্ত্তব্য বলিয়া জ্ঞান করি । আপনাদের যেখানে কোনে বিপদের সস্তা