পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مطين ج বারকয়েক পাশ ফিরিয়া সে উঠিয়া পড়িল । জানলার কাছে দাড়াইয়া দেখিল, শরৎরাত্রির নিস্তব্ধ আকাশ চাদের আলোতে বিহবল হইয়া গেছে । তাহাদের জনশূন্তগলির এক পাশে বাড়ীগুলির ছায়া, অণর এক পাশে শুভ্ৰ জ্যোৎস্নার রেখা । একদিকের গৃহশ্রেণী সহাস্ত নিদ্রিত গেীরতম উলঙ্গ শিশুদের মত ধবধ করিতেছে, আর তাহার সম্মুখদিকের বাড়ীগুলি কালে-কাপড়পর জাগ্রত প্রহরীর মত অন্ধকারে চুপ করিয়া দাড়াইয়া আছে । নিশীথরাত্রে স্বপ্ত রাজধানীর উপর যখন জ্যোতিক্ষলোক হইতে জ্যোৎস্না নামিয়া আসে, তখন তাহার মধ্যে মাধুর্যমিশ্রিত একটি অপরূপ গাম্ভীৰ্য্য বিরাজ করে । স্বথদুঃখ লাভ-ক্ষতির এতবড় বিরাটু উদাম চেষ্টা যখন একেবারে পরাভব মানিয়া শিশুর মত আনস্তের ক্রোড়ে আত্মসমর্পণ করে— তখন সেই অভিভূত বিপুল কৰ্ম্মশালার উপরে একাকী যোগাসনে আসীন সেই অনন্তের অবিচলিত মুখ শ্ৰী সৌধশিখরসস্কুল আকাশতলে যেরূপ প্রত্যক্ষ দেখিতে পাওয়া যায়, এরূপ অরণ্যে-সমুদ্রে-গিরিশিখরে দেখা इांश्च न] । রমেশ স্তব্ধ হইয়া দ্বাড়াইয়। রহিল । যাহা নিত্য, যাহা শাস্ত, যাহ। বিশ্বব্যাপী, যাহার মধ্যে দ্বন্দ্ব নাই, দ্বিধা নাই, রমেশের সমস্ত অন্তঃপ্রকৃতি বিগলিত হইয় তাহার মধ্যে পরিব্যাপ্ত হইয়া গেল । যে শব্দবিহীন সীমাবিহীন মহালোকের নেপথ্য হইতে চিরকাল ধরিয়া জন্ম এবং মৃত্যু, কৰ্ম্ম, এবং বিশ্রাম, আরম্ভ এবং অবসান, কোন অশ্রুত সঙ্গীতের बक्रभ*नि । [ ৩য় বর্ষ, অশ্বিন । অপরূপ তালে বিশ্বরঙ্গভূমির মধ্যে প্রবেশ করিতেছে — রমেশ সেই আলো-অন্ধকারের অতীত দেশ হইতে নরনারীর যুগল প্রেমকে এই নক্ষত্রদীপালোকিত নিখিলের মধ্যে আবিভূত হইতে দেখিল । রমেশ ক্ষণকালের জন্ত আপন ভালবাসাকে সংসার হইতে স্থদুরে বিচ্ছিন্ন করিয়া এক বিশ্ববিস্তৃত মহিমার মধ্যে শাস্ত স্তন্ধ স্বন্দর সম্পূর্ণমূৰ্ত্তিতে দেখিতে পাইল । সেই অম্লান প্রেমের চারিদিক হইতে ক্ষুব্ধ জনসমাজের সমস্ত ভয়, ংশয়, ঈর্ষ, বিরোধ, ভ্রান্তি স্খলিত হইয়। পড়িল, বাধা ও বিচ্ছেদ কুহেলিকার মত বিলীন হইয়া গেল । রমেশ তখন ধীরে ধীরে ছাদের উপর উঠিল । অল্পদাবাবুর বাড়ীর দিকে চাহিল । সমস্ত নিস্তব্ধ । বাড়ীর দেয়ালের উপরে, কাণিশের নীচে, জানল-দরজার ধাজের মধ্যে, চুনবালিথস ভিতের গায়ে জ্যোৎস্ক। এবং ছায়া বিচিত্র আকারের রেখ। ফেলি प्लु ? আজ অপরাহ্লে রমেশ ও হেমনলিনী যে জানলার কাছে দাড়াইয়াছিল, সেই জানলাটি তখন ছায়ার মধ্যে অবগুষ্ঠিত হইয়া ছিল। সেই জানলার দিকে চাহিয়। রমেশ হাটু গাড়িয়। জোড় হাত করিয়া বসিয়া সেই জ্যোৎস্নাভিষিক্ত নিস্তব্ধ আকাশের নীচে নিজের ললাট ভূতলে লুষ্ঠিত করিল। তাহার প্রেম একটি বৃহৎ ভক্তিতে প্রসারিত হইয়া গেল । একি বিস্ময় । এই জনপুর্ণ নগরের মধ্যে ঐ সামান্ত গৃহের ভিতরে একটি মানরীর বেশে একি বিস্ময় ! এই রাজধানীতে কত ছাত্র, কত উকীল, কত প্রবাসী ও নিবাসী আছে,