পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বঙ্গদর্শন। [ ৩য় বর্ষ, আশ্বিন । শিথিল হইল না। যে পবিত্র যজ্ঞাপ্লি অভিষেকের শুভকামনায় প্রজালিত করিয়াছিলেন, তাহাতে তিনি পুত্রের বনপ্রস্থানকল্পে মঙ্গলভিক্ষণ করিয়া পুনরায় ঘৃতাহুতি দিতে লাগিলেন এবং বদ্ধাঞ্জলি হইয়া পুনরায় প্রার্থনা করিয়া বলিলেন, “বৃত্ৰনাশকালে ভগবান ইন্দ্রকে যে মঙ্গল আশ্রয় করিয়াছিলেন, সেই মঙ্গল রামচন্দ্রকে আশ্রয় করুন ; দেবগণ অমুতলাভোদেশে কঠোর তপঃসাধন করিবার পর যে মঙ্গল তাহাদিগকে আশ্রয় করিয়াছিলেন, রামচন্দ্রকে সেই মঙ্গল আশ্রয় করুন ; •স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল আক্রমণ করিবার সময় বামনরূপী বিষ্ণুকে যে মঙ্গল আশ্রয় করিয়াছিলেন, সেই মঙ্গল বনবাসী রামচন্দ্রকে আশ্রয় করুন।” সহসা ধৰ্ম্মপ্রাণা কৌশল্য। ধৰ্ম্মের অপূৰ্ব্ব ও গম্ভীর শান্তি লাভ করিলেন । তিনি স্থির ও স্নেহগদগদ কণ্ঠে রামচন্দ্রকে বলিলেন, “পুত্র, তুমি মুখে বনগমন কর, রোগশূন্য শরীরে অযোধ্যায় ফিরিয়া আসিও । এই চতুর্দশবংসর নিবিড় কৃষ্ণারজনীর ন্যায় কাটিয়া যাইবে, অযোধ্যার রাজপথে তুমি পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় উদিত আমি তোমাকে লাভ করিয়া স্বর্থী হুইল । পিতাকে ঋণ হইতে উদ্ধার করিয়া, সৰ্ব্বসিদ্ধি লাভ করিয়া তুমি পুনঃপ্রত্যাগত হইবে, আমি সেই শুভদিনের প্রতীক্ষায় জীবন ধারণ করিয়া রহিলাম।” তৎপরে যখন রামচন্দ্র শেষ বিদায়-গ্রহণের জন্য রাজসকাশে উপস্থিত হন, তখন সমস্ত মহিলীবর্গ ও সচিবমণ্ডলী উপস্থিত ছিলেন । তাহারা কৈকয়ীকে নিন্দ করিয়া ও দশরথের অন্যায় প্রতিশ্রুতির উপর কটাক্ষপাত করিয়া হইবে, ঘোর বাশ্বিতও উপস্থিত করিলেন, কত জনে কত কথা বলিতে লাগিলেন,WikitanvirBot (আলাপ) রাজকুমারদ্বয় ও সীতার হস্তে কৈকয়ী চীরবাস প্রদান করিলেন ; সেই অভিষেকত্ৰতোজ্জল রাজকুমার রাজপরিচ্ছদ খুলিয়া জটাবষ্কলধারী হইয়া দাড়াইলেন, এই মৰ্ম্মবিদারক দৃশু বৃদ্ধ সচিব সিদ্ধার্থ, সুমন্ত্র এবং কুলপুরোহিত বসিষ্ঠের চক্ষে অসহ্য হইল— তাহারা কৈকয়ীর তীব্র নিন্দ করিতে লাগিলেন, সেই ঘোর তর্ক ও বান্বিতও। পূর্ণ গৃহের এক প্রান্তে অশ্রুমুখী কৌশল্য উপবিষ্ট ছিলেন, তিনি কোন কথা বলেন নাই । তাহীর দিকে চাহিয়া রাম রাজাকে বলিলেন— “ইয়ং ধাৰ্ম্মিক কৌশল্য মম মাত যশস্বিনী । বুদ্ধ চক্ষুদ্রশীল। চ নচ ত্বাং দেব গহঁতে ॥ ময় বিহীন বরদ প্রপয়াং শোকসাগরস্ । অদৃষ্টপুৰ্ব্ববাসনাং ভুয়: সংমন্থমহসি ॥” *আমার উদারস্বভাবা যশস্বিনী বৃদ্ধ মাতা আপনার কোনরূপ নিন্দাবাদ করিতেছেন না । আমার বিরোগে ইনি শোক সাগরে পতিত হইবেন, ইনি এরূপ দুঃখ অগর পান নাই, আপনি ইহাকে অধিকতর সম্মান প্রদর্শন করিবেন ।” এই দেবী দশরথের অনাদৃত ছিলেন ; কিন্তু দশরথ কি ইহার প্রকৃত মৰ্য্যাদা বুঝিতে পারেন নাই ? কৌশল্য র্তাহার কিরূপ আদরণীয়া, দশরথ তাহা জানিতেন । কৈকয়ীর নিকট তিনি বলিয়াছিলেন—

  • আমি রামকে বনে পঠাইলে কৌশল্য! আমাকে কি বলিবেন ? এরূপ অপ্রিয় কাৰ্য্য করিয়া অামি জাহাকে কি উত্তর দিব ?”