을 ) পুর্ণচক্ষে অধোমুখে কৃতাঞ্জলি হইয়া কম্পিতদেহে কৌশল্যণর প্রসাদভিক্ষণ করিয়া বলিলেন, “দেবি, তুমি আমার প্রতি প্রসন্ন হও, তুমি স্নেহশীলা ও শক্রগণের প্রতিও ক্ষম প্রদর্শন করিয়া থাক। স্বামী গুণবান বা নিগুৰ্ণ হউন, স্ত্রীলোকের নিত্য গুরু । আমি দুঃখসাগরে পতিত হইয়াছি এবং তোমার স্বামী, এই মনে করিয়া আমার প্রতি আপ্রিয়কথাপ্রয়োগে বিরত হও ।” রাজা বন্ধাঞ্জলি, র্তাহার অশ্রু ও করুণ দৈন্ত দর্শনে কৌশল্যার কণ্ঠ রুদ্ধ হইল, তাহার চক্ষু হইতে অবিরল জলধারা বিগলিত হইতে লাগিল । তিনি রাজার অঞ্জলিবদ্ধ কমলকর ধারণ করিয়া স্বীয় মস্তকে রাখিলেন এবং ত্রস্ত হইয়। ভীতকণ্ঠে বলিলেন — “দেব, আমি তোমার পদতলে আশ্রিতা,— প্রার্থনা করিতেছি, আমার প্রতি প্রসক্স হও । তুমি আমার নিকট কৃতাঞ্জলি হইলে সেই পাপে আমার ইহকাল-পরকাল দুইই যাইবে, আমি তোমার ক্ষমার যোগ্য হইব না। চিরারাধ্য স্বামী যাহাকে এইরূপে প্রন্সল্প করিতে চান, সে কুলস্ত্রীর মর্য্যাদা লঙ্ঘন কল্পিয়াছে,—সে আর কুলস্ত্রী বলিয়া পরিচয় দিতে পারে ল । ধৰ্ম্ম কি, আমি তাহ। জানি,—তুমি সত্যের অবতারস্বরূপ, তাছা ও বুঝিতেছি । পুত্ৰশোকে বিহবল হইয়। আমি তামার প্রতি দুৰ্ব্বাক্য প্রয়োগ করিয়াছি – শ:মার প্রতি প্রসন্ন হও । শোকে ধৈর্য্য নষ্ট হয়, শোকে ধৰ্ম্মজ্ঞান অস্তদ্ধান করে, শোকে সৰ্ব্বনাশ হয়, শোকের মত রিপু নাই। পঞ্চ রাত্রি অতীত হইল রাম অযোধ্য হইতে গিয়াছে, এই পঞ্চ রাত্রি বঙ্গদশন । [ ৩য় বর্ষ, আশ্বিন । আমার নিকট পঞ্চ বৎসরের মত দীর্ঘ বোধ হইয়াছে।” এই সময়ে স্বর্য্যদেব মন্দরশ্মি হইয়া নভঃপ্রান্তে বিলীন হইলেন এবং ধীরে ধীরে রাত্রি অসিয়া উপস্থিত হইল—দশরথ কৌশল্যার কথায় আশ্বস্ত হইয়া নিদ্রিত হইলেন । এই দাম্পত্যচিত্রে কৌশল্যার অপূৰ্ব্ব স্বামিভক্তি প্রদর্শিত হইয়াছে। দৃশুটি সংক্ষেপে সঙ্কলিত হইল, আমরা মুলকাব্যের এই অংশ অশ্রুবেগে পড়িতে পারি নাই । পররাত্রে দশরথের জীবন শেষ হয়, তখন কৌশল্য পুত্ৰশোকে আকুল হইয়। নিদ্রায় আক্রাস্তা, তিনি পতির মৃত্যু জানিতে পারেন নাই। পরদিন প্রত্যুষে সেই দুঃখময় রাজপ্রাসাদের চির প্রথানুসারে বন্দিগণ গান আরম্ভ করিল, বীণার মধুর নিকণে প্রবুদ্ধ হইয়া শাখাবিহারী ও পিঞ্জরাবদ্ধ বিহগকুল কাকলি করিয়া উঠিল, প্রক্ষপ্ত। কৌশল্যার মুখে বিবর্ণতা ও শোক অঙ্কিত হইয়াছিল— “নিম্প্রন্তা চ বিবর্ণ চ সন্ন শোকেন সশ্নত । ন ব্যরাজত কৌশল্য তারেৰ তিমিরাবৃত। ॥” গত ভীষণ রজনীর দুর্ঘটনার চিত্র উদঘাটন করিয়া যখন উষাদে ধী দশন দিলেন, তখন মৃত স্বামীকে দেখিয়৷ মহিষীগণ আকুলিত হইয়া কাদিতে লাগিলেন । বাষ্পপূর্ণচক্ষে কৌশল্য। স্বামীর মস্তক ধারণ করিয়া কৈকয়ীর দিকে চাহিয়া বলিলেন— “সকাম! ভৰ কৈকেয়ি ভুঙ্গ রাজ্যমকণ্টকম্ ।” “রাম বনবাসী হইয়াছেন, রাজা ছাড়িয়া গেলেন, এখন আমি আর কি লইয়া থাকিব ? —ইদং শরীরমালিঙ্গ্য প্রবেক্ষ্যামি হুতাশনৰ্ম্ম ।” “এই প্রিয়দেহ আলিঙ্গন করিয়া আমি
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৭৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।