পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] অতিপ্রাকৃত । ২৯৭ দিতে পারে। একটি যন্ত্র এইরূপ । এক, মাধ্যাকর্ষণ, জড়ের অনশ্বরতা, শক্তির দুই, তিন, এইরূপে আরম্ভ করিয়া অনশ্বরতা প্রভূতি কয়েকটি ঘোরতর প্রাকৃ পর পর সংখ্যা যন্ত্র হইতে বাহির হইতেছে । এগার হাজার সাত শ বাইশ পৰ্য্যস্ত বাহির হইয়াছে। তুমি এগার হাজার সাত শ তেইশের অপেক্ষায় বসিয়া আছ, এমন সময়ে অকস্মাৎ বাহির হইল তেত্রিশ হাজার পাচ । তার পর আবার নিয়মমত যন্ত্র চলিতে লাগিল। এই ঘটনাট যন্ত্রের মিরাকুল বটে, তবে নিয়মের বহির্ভূত নহে । যন্ত্র এরূপ কৌশলে নিৰ্ম্মিত যে, ঐ সময়ে এই সংখ্যা বাহির না হইয়া ঐ সংখ্যাই বাহির হইবে। তবে যন্ত্রটির নিৰ্ম্মাতা অপর লোককে বেশ ঠকাইতে পারেন । যে জানে না, সে যন্থ বিকল হইয়াছে, মনে করিতে পারে । এইরূপ জগদযন্ত্রসম্বন্ধেও বলা যাইতে পারে। স্বৰ্য্য দিনের পর দিন যথানিয়মে উঠিতেছেন ও আকাশপথে ভ্রমণ করিতেছেন । একদিন অকস্মাৎ যদি থামিয়া যান, তাহ হইলে জগদঘন্ত্র বিকল হইয়াছে মনে করিবার কারণ নাই । যিনি যন্ত্রের নিৰ্ম্মাতা, তিনি এই রূপ ব্যবস্থাই করিয়া রাখিয়াছেন । স্বৰ্য্য চলিতে চলিতে সহসা এক একবার থামিবেন, যন্ত্রের বন্দোবস্ত এইরূপই আছে । বস্তুত ব্যাবেজ-সাহেবের আপত্তির উত্তর নাই। মঙ্গুষ্যের অভিজ্ঞতা যখন সীমাবদ্ধ, তখন এইট প্রকৃতির নিয়ম, ঐটা প্রকৃতির নিয়ম, উহার কোথাও ব্যভিচার নাই বা হইতে পারে না, এরূপ নির্দেশ অন্যায়, অসঙ্গত, অসমীচীন, অবৈজ্ঞানিক । এরূপ হঃসাহসিকতা বুদ্ধিমানকে সাজে না । তিক নিয়ম লইয়া কিছুদিন পূৰ্ব্বে বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতেরা বড়ই বাবদুকতা প্রদর্শন করিতেন । আজিকালি অনেকে সাবধান হইয়। কথা কহেন । যতটুকু আমাদের অভিজ্ঞতা, তাহার সীমা ছাড়াইয়া কোন কথা বলিবার আমাদের অধিকার নাই। যে কালটুকু ও যে দেশটুকু ব্যাপিয়া আমরা ঐ সকল নিয়মের অস্তিত্ব দেখি, উহার ততটুকুর মধ্যেই ঠিক । তাহার বেশী আমরা বলিতে পারিৰ না । ঐ সকল নিয়মের ব্যভিচার অকল্পনীয় নহে, অসম্ভবও নহে। হয় ত কিছুদিন পরে শুনিতে পাইব, অমুক নক্ষত্রপুঞ্জমধ্যে জড়ের নুতন স্থষ্টি ঘটিতেছে, শক্তির ধ্বংস ঘটিতেছে ; তাহাতে বিস্মিত হইতে পারি, কিন্তু যদি ঘটে, তাহার অপলাপ করিতে পারিব না । প্রকৃতিতে যাহা ঘটিবে, তাহাকেই প্রাকৃত ও প্রাকৃতিক-নিয়ম-সঙ্গত বলিয়া মানিয়া লইতে হইযে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই চলিবে না । শক্তিকে অনশ্বর জানিয়া এতদিন নিশ্চিত্ত ছিলাম ও কত বক্তৃত করিয়াছি ; এখন উহাকে স্থলবিশেষে নশ্বর দেপিলে দুঃখিত হইৰ, কিন্তু দুঃখই সার হইবে । যাহা যেখানে নশ্বর, তাহ আমার খাতিরে সেখানে । অনশ্বর হুইবে না । তাই যদি ব্যাবেজের কলের মত সুৰ্য্য লাখ-বৎসর আস্তর একবার করিয়া কাহারও আদেশমত থামিয়া যায়, তাহা হইলে তাহাই প্রাকৃতিক নিয়ম বলিয়া গ্রাহ করিতে হইৰে । অসম্ভব বলিয়া প্রাকৃতিক ঘটনাকে উড়াইতে পারিব না । •