وجه و نیمه বুঝা যায়। খাপছাড়া নুতন তথ্য লইয়া বৈজ্ঞানিকের কারবার বটে ; কিন্তু যতক্ষণ তিনি খাপছাড়াকে খাপে পূরিতে না পারেন, যতক্ষণ অসমঞ্জসকে সমঞ্জস করিতে না পারেন, যতক্ষণ অপরিচিত নুতন সত্যকে পুরাণ পুৰ্ব্বপরিচিত সত্যের সঙ্গে মিলাইয়া, সম্বন্ধ আবিস্কার করিয়া, তাহার কোঠায় না ফেলিতে পারেন, ততক্ষণ র্তাহার তৃপ্তি হয় না । চেষ্টার বলে ও বুদ্ধিবলে তিনি কালে সম্বন্ধের আবিস্কার করিতে সমর্থ হন, তখন তাহ। আর অসমঞ্জস খাপছাড়া থাকে না । বিজ্ঞানশাস্ত্রের ইতিহাসই তাহাই, যাহা এককালে খাপছাড়া ঠেকিত, তাহ কালে খাপের মধ্যে আসে । যাহা ধুমকেতুর মত অকস্মাৎ প্রত্যক্ষগোচর হইয়া বিভীষিকা দেখাইত, তাহ সৌরজগতের পরিচিত প্রণালীবদ্ধ জড়পিণ্ডে পরিণত হয় । এইরূপে অসম্বন্ধ অসমঞ্জস জগতে সামঞ্জস্ত ও সম্বন্ধের পুনঃপুন আবিষ্কারে সমর্থ হইয়। বৈজ্ঞানিকের সেই সামঞ্জস্তের প্রতি একটা মজ্জাগত প্রীতি জন্মিয়া যায় । তখন যদি সহসা কেহ একটা নুতন সংবাদ অনিয়া দের, যে সংবাদ তাহার পরিচিত জগৎপ্রণালীর সঙ্গে মিলে না বা তাহাকে বিপর্য্যস্ত করিয়া দিতে চাহে, তখন ষ্টtহার মনে •একটা ব্যাকুলত আসে । তিনি ও তাeার পূৰ্ব্ববৰ্ত্তিগণ উৎকট পরিশ্রমে যে সৌধখানি নিৰ্ম্মাণ করিয়াছেন, কোথায় তাঙ্গ ভাঙিয়া যাইবে,সেই ভয়ে কতকটা ব্যাকুল হন । সেই সৌধের কোন প্রকোষ্ঠমধ্যে এই নূতন জিনিষটাকে স্থান দিতে লা পারায় তাহার সামঞ্জস্তবুদ্ধিতে, র্তাহার সৌন্দর্য্যবুদ্ধিতে আঘাত লাগে । এই নুতুন জিনিধটাকে কতকট সংশয়ের, বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্গ, আশ্বিন । কতকটা ভয়ের চোখে দেখেন, এবং যদি কোনরূপে উহার অলীকতা প্রতিপন্ন করিতে পারেন, তাহা হইলে যেন ইণফ ছাড়িবার অবসর পান । তাছার অবস্থা বুঝিয় তাহাকে মার্জন করা যাইতে পারে । বস্তুত এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিকে ও অবৈজ্ঞানিকে যে জাতিগত ভেদ আছে, তাহা নহে । বৈজ্ঞানিক ও সাধারণ মানুষ বস্তুতই একশ্রেণীর লোক । জগদযন্ত্র যদি একেবারে এলোমেলো, শৃঙ্খলারহিত, একটা গণ্ডগোলমাত্র হুইত, তাহ হইলে সাধারণ মানুষের ও জীবনযাত্রা স্থকর হইত না । জগদযন্ত্রে বেশ একটা শৃঙ্খল আছে । ভাত খাইলে ক্ষুধানিবৃত্তি হয় ; হঠাৎ যদি এই নিয়মটা বদলাইয়া যায়, এবং যত থাবে, তত ক্ষুধ বাড়িবে, এইরূপই যদি বন্দোবস্ত উপস্থিত হয়, তাহণ হইলে মনুষের বুদ্ধি দুর্ভিক্ষনিবারণের উপায়নিৰ্দ্ধারণে একবারে অসমর্থ হইয়৷ পড়ে । অতিপ্রাকৃতের প্রতি বা মিরাকূলের প্রতি যাহার যত ভক্তি থাকৃ, জগদযন্ত্রে যদি কোনরূপ শৃঙ্খলা না থাকি ত, তাহা হইলে কাহাকেও ধরাপুষ্ঠে বিচরণ করিতে হইত না । কাজেই কতকটা সামঞ্জস্ত ও কতকটা শৃঙ্খলা মহুষমাত্রের পক্ষেই প্রতিকর ন হইলে চলে না । সামঞ্জস্তের প্রতি, পুঙ্খলার প্রতি মঙ্গুল্যমাত্রেরই কতকটা আন্তরিক অম্বুরাগ রহিরাছে রহিয়াছে বলিয়াই মাস্থ্য পশুর উপরে ; রহিয়াছে বলিয়াই সভ্য মাস্থ্য অসভ্য নাজুষের উপরে । মঙ্গুষ্যমাত্রেই নুনাধিক মাত্রায় বৈজ্ঞানিক । “ নুনাধিক মাত্রায় কেন ? না, সামঞ্জস্তে প্রতি সকলের পক্ষে সমান লহে,
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩০৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।