فی الاری তাহাঁকে আগুন নাম দেওয়াও যেমন, যে মানুষ আকাশের দিকে তাকাইয়া আকাশেরই মত নীরব হইয়া থাকে, তাহাকেও কবি বলা সেইরূপ । প্রকাশই কবিত্ব, মনের তলার মধ্যে কি আছে বা না আছে, তাহা অালোচনা করিয়া বাহিরের লোকের কোন ক্ষতিবৃদ্ধি নাই । কথায় বলে ‘মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ”—ভাণ্ডারে কি জমা আছে, তাহা আন্দাজে হিসাব করিয়া বাহিরের লোকের কোন সুখ নাই, তাহাদের পক্ষে মিষ্টান্নটা হাতে-হাতে পাওয়া আবশুক । সাহিত্যে আত্মগত ভাবোচ্ছ,সিও সেইরকমের একটা কথা । রচনা রচয়িতার নিজের জন্ত নহে, ইহাই ধরিয়া লইতে হইবে —এবং সেইটে ধরিয়া লইয়াই বিচার করিতে হইবে । আমাদের মনের ভাবের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই এই, সে নানা মনের মধ্যে নিজেকে অনুভূত করিতে চায়। প্রকৃত্তিতে আমরা দেখি, ব্যাপ্ত হইবার জন্ত, টি-কিয়া থাকিবার জন্ত, প্রাণীদের মধ্যে সৰ্ব্বদা একটা চেষ্টা চলিতেছে । যে জীব সস্তানের দ্বারা আপনাকে যত বহু গুণিত করিয়া যত বেশি জায়গা জুড়িতে পারে, তাহার জীবনের অধিকার তত বেশি বাড়িয়া যায়, নিজের .অস্তিত্বকে সে যেন তত অধিক সত্য করিয়া তোলে । মানুষের মনোভাবের মধ্যেও সেইরকমের একটা চেষ্টা আছে। তফাতের মধ্যে এই যে, প্রাণের অধিকার দেশে ও কালে, মনোভাবের অধিকার মনে এবং বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক কালে । মনোভাবের চেষ্টা বহুকাল ধরি বহুমনকে আয়ত্ত করা । - এই একান্ত আকাঙ্ক্ষায় কত প্রাচীন কাল ধরিয়া কত ইঙ্গিত, কত ভাষা, কত লিপি, কত পাথরে খোদাই, ধাতুতে ঢালাই, চামড়ায় বাধাই, কত গাছের ছালে, পাতায়, কাগজে, কত তুলিতে, খোস্তায়, কলমে, কত অণকজেণক, কত প্রয়াস—ব দিকৃ হইতে ডাহিনে, ডাহিন দিক্ হইতে বায়ে, উপর হইতে নীচে, এক সার হইতে অন্ত সারে । কি ? না, আমি যাহা চিন্তা করিয়াছি, আমি যাহা অনুভব করিয়াছি, তাহ মরিবে না, তাহ। মন হইতে মনে, কাল হইতে কালে চিন্তিত হইয়া, অনুভূত হইয়া, প্রবাহিত হইয়া চলিবে । আমার বাড়ীঘর, আমার আসবাবপত্র, আমার শরীরমন, আমার স্বপদুঃখের সামগ্ৰী, সমস্তই যাইবে—কেবল আমি যাহা ভাবিয়াছি, যাহা বোধ করিয়াছি, তাহা চিরদিন মামুষের ভাবনা, মামুষের বুদ্ধি আশ্রয় করিয়া সঞ্জাব সংসারের মাঝখানে বাচিয়৷ থাকিবে । মধ্য এসিয়ায় গোবি-মরুভূমির বালুকাস্তুপের মধ্য হইতে যখন বিলুপ্ত মানব সমাজের বিস্মৃ ত প্রাচীনকালের জীর্ণ পুথি বাহির হইয় পড়ে, তখন তাহার সেই অজানা ভাষার অপরিচিত অক্ষরগুলির মধ্যে কিএকটি বেদন প্রকাশ পায় ! কোন কালের কোন সজীব চিত্তের চেষ্টা আঙ্গ আমাদের মনের মধ্যে প্রবেশলাভের জষ্ঠ অঁাকুপাকু করিতেছে। যে লিখিয়াছিল, সে নাই, যে লোকালয়ে লেখা হইয়াছিল, তাহাও নাই –
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।