পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లూy বঙ্গদশন । [ ৩য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । ক্টাহীরাই ঋষি। মস্ত্রে তত্বের অভিব্যক্তি ; মন্ত্ৰদশা আর তত্ত্বদর্শী একই কথা। এমার্সন স্বষ্টির নিগুঢ়তত্ত্ব আপনার অসাধারণ অধ্যাত্ম অনুভূতির প্রভাবে প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন । স্বষ্টির তত্ত্ব জড় নহে, অজড় আত্মা ; এই আত্মবস্তু হইতেই, যথা প্রদীপ্ত পাবক হইতে অসংখ্য ফুলিঙ্গের উৎপত্তি হয়, সেইরূপ এই বিচিত্র বিশ্বের উৎপত্তি হইয়াছে । এই অtষ্মবস্তুতেই তাহার স্থিতি,—আত্মতত্বর এই মহকুরণেই বিশ্বের গতি ও পরিণতি । এমাসন এই মহাসত্যের সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছিলেন। এই আত্মসাক্ষাৎকার হইয়াছিল বলিয়াই তাহাকে অবাধে ঋষি বলিয়া অভিহিত করিতে পারা যায় । আর আত্মচৈতন্ত এইরূপে যাহার স্ফুরিত হইয়া থাকে, তাহার নিকটে জগতের অনেক নিগূঢ় তত্ত্ব স্বতঃপ্রকাশিত হইয় পড়ে । এইজন্ত ঋষিগণ বৈজ্ঞানিক নহেন, কিন্তু বিজ্ঞানের পরম তত্ত্বসকল কথন-কখন তাহাদের জ্ঞানে আপনি ফুটয় উঠে । তাহার। দার্শনিক নহেন, কিন্তু লৌকিক দর্শন যে সকল মহাসত্যের অন্বেষণে যাইয়া ঋজুকুটিল বহু পস্থা বৃথা পরিভ্রমণ করে, অনেক সময়ে তাহার। সে সকল মহাসত্য সহজে আয়ত্ত করিয়া থাকেন । এই অলৌকিক অধ্যায় দৃষ্টিতেই ঋষিগণের ঋধিত্ব । এই অধ্যায়বৃষ্টি দ্বারাই এমাসন 'বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিচিত্র বস্তু ও ঘটনার মধ্যে এক অখণ্ড একত্ব অনুভব করিয়াছিলেন । যে একহানুভূতিতে এমার্সনের বিশেষত্ব ও ঋষিত্ব, যুরোপে তাহা কিয়ৎপরিমাণে নুতন-হইলেও, ভারতে নুতন নহে। এই একত্বানুভূতি ভারতীয় শিক্ষণ ও সাধনার বিশেষত্ব ; ইহাতেই আমাদের জাতীয় চিত্ত৷ ও চরিত্রের মৌলিকত্ব । বেদে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে, ইহার অঙ্কুর, উপনিষদে ইহার বিকাশ, পুরাণে ইহার পরিণতি । অতএব পাশ্চাত্যজগতে এমাসনের শিক্ষণ দুৰ্ব্বোধ্য হইলেও, হিন্দুর নিকটে সেরূপ দুরধিগম্য হইতে পারে না । কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে হিন্দু বহুদিন আপনার শাস্ত্রসাহিত্যের সঙ্গে সৰ্ব্বপ্রকারের সাক্ষাৎ যোগ হইতে ভ্ৰষ্ট হইয়াছে ; স্বতরাং যে একত্বানুভূতিতে তাহার জাতীর সাধনার বিশেষত্ব ও মৌলিকত্ব, তাহ বর্তমান-হিন্দুমণ্ডলীমধ্যে স্বল্পাধিক মান হইয়া পড়িয়াছে । এইজষ্ঠ হিন্দু ও ইংরাজ এবং মাকিনের হুtয় এমাসনের মন্মগ্রহণে সহজে সমর্থ হয় না । কেবল দৈবামু গ্রহে যাহারা কোনপ্রকারে সেই সৰ্ব্বজনীন একত্বের সন্ধানে চলিতে আরম্ভ করিয়াছেন, তাহীদের নিকটেই এমাসনের প্রতিভা প্রকৃতরূপে আত্মস্বরূপ প্রকাশ করিয়া থাকে । আমিও এই সন্ধানের পথেই এমাসনের সাক্ষাৎকার লাভ করি । যতদিন ঘোর জড়বাদী ও দ্বৈতবাদী ছিলাম, এমাসন পড়িতাম বটে, কিন্তু কিছুই বুঝিতাম না । ক্রমে যখন সংসার চক্রের তাড়নায়, শোক ও নিরাশার নিৰ্ম্মম নিষ্পেষণে, আত্মশক্তির উপরে অবিশ্বাস হইয়া এক অখও অদ্বৈত বিশ্বশক্তির উপরে চক্ষু পড়িতে লাগিল ; জড়েচেতনে, জীবনে-মরণে এক অনন্ত বিধাতুশক্তির লীলাচ্ছবি মানসপটে, উষার উদ্ভিন্ন আলোকে জগচ্চিত্রের ন্যায়, ফুটিয়া উঠিতে