সপ্তম সংখ্যা i ] সার সত্যের আলোচনা। v්රො উহা সৰ্ব্বজগতেরই মূলতত্ত্ব ; কেন না, সৰ্ব্বজগতেরই মুলে আত্মা জাগিতেছে। একটু ভাবিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, আত্মাই সত্য এবং সত্যই আত্মা । ফলেও দেখিতে পাওয়া যায় যে, বস্তুসকলের উপরেউপরে ভাসিয়া বেড়াইলে সত্যে পৌছানো যায় না—বস্তুসকলের আত্মাতে ডুব দিলেই সত্যের উপলব্ধি পাওয়া যায় . এ কথা খুব ঠিক যে, জ্ঞাতৃজ্ঞানজ্ঞেয়ের ঐক্য সৰ্ব্বজগতেরই মূলতত্ত্ব, কিন্তু ঐ মূলতত্ত্বটি মস্তিষ্কের ভাণ্ডারে চাবি দিয়া রাখিবার জন্ত হয় নাই—কাজে খাটাইবার জন্তই হইয়াছে। কোন স্থানে থাটাইতে হইবে ? ঐ মূলতত্ত্বটির প্রয়োগ-ক্ষেত্র দুইটি— একটি হ’চ্চে ক্ষুদ্রব্রহ্মাও, আরেকটি হ’চ্চে বৃহৎ ব্রহ্মাও । কোন কাজে থাটাইতে হইবে ? উহাকে ক্ষুদ্রব্রহ্মাণ্ডে প্রয়োগ করিয়া ক্ষুদ্রব্রহ্মাণ্ডের সাৰ্ব্বাত্মিক ঐক্য অবধারণ করিতে হইবে ; বৃহৎ ব্রহ্মা গু প্রয়োগ করিয়া বৃহৎব্রহ্মাণ্ডের সাৰ্ব্বাত্মিক ঐক্য অবধারণ করিতে হইবে । এই স্থানটিতে টিপ্পনীচ্ছলে একটি কথা বলিয়া রাখা নিতান্তই আবখ্যক মনে করিতেছি ; কথাটি এই ঃ বৃহৎ ব্রহ্মাওকে বৃহৎব্রহ্মাও বলা হইতেছে শুদ্ধকেবল ক্ষুদ্রব্রহ্মাণ্ডের সহিত তুলনার অনুরোধে ; প্রকৃত কথা এই যে, বৃহৎব্ৰহ্মাণ্ডের নামই সৰ্ব্বজগৎ, এবং সৰ্ব্বজগতের নামই বৃহৎ ব্রহ্মাণ্ড । সৰ্ব্বজগতের বাহিরে তো আর দ্বিতীয় জগৎ থাকিতে পারে না— বৃহৎব্রহ্মাণ্ডের বাহিরে ক্ষুদ্রব্রহ্মাও থাকিবে কেমন করিয়া ? ক্ষুদ্রব্রহ্মাও বৃহত্রহ্মাণ্ডের বাহিরে নাই—কিন্তু আছে তাহাতে আর ভুল নাই ; কেন না, ক্ষুদ্রব্রহ্মাও আমরা আপনারাই । তবেই হইতেছে যে, ক্ষুদ্রব্ৰহ্মাও বৃহৎব্রহ্মাণ্ডের অন্তভূর্ত । এই যে কথাগুলি বলা হইল, ইহার অস্কিসন্ধি প্রদেশ গুলা ভাল করিয়া পৰ্য্যবেক্ষণ করিয়া দেখা যা’ক্ ৷ বলিলাম যে, ক্ষুদ্রব্রহ্মাণ্ড বৃহৎ ব্রহ্মাণ্ডের বাহিরে নাই—ভিতরে অাছে ; এ যাহা বলিলাম, এটা এক হিসাবের কথা । আর-এক হিসাবের কথা এই যে, বৃহৎ ব্রহ্মাও ও ক্ষুদ্রব্রহ্মাণ্ডের ভিতরে আছে । পুরাণে গল্পছলে কথিত হইয়াছে যে, বালক-কৃষ্ণকে মাটি খাইতে দেখিয়া যশোদা-মাতা তাহনকে যখন হা করিতে বলিলেন, তখন বালক যেমি ই করিল, যশোদা-মাতা কি দেখিলেন ? তিনি দেখিয়া অবাকৃ—যে, সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাও সেই ক্ষুদ্র বালকটির উদরের অভ্যন্তরে । একথার তাৎপৰ্য্য আর-কিছু না—সার্ববাত্মিক ঐক্য । পূৰ্ব্বে বলিয়াছি যে, মনুষ্যশরীরে একই সাৰ্ব্বাত্মিক ঐক্য মস্তকে যোগাসনে উপবিষ্ট, হৃদয়ে সিংহাসনে উপবিষ্ট, নাভিকেন্দ্রে কৰ্ম্মাসনে উপবিষ্ট । ইহাতে প্রকারান্তরে বুঝাইতেছে এই যে, শরীরের প্রত্যেক মৰ্ম্মস্থানে সমস্ত শরীর অন্তভূত। তার সাক্ষী—যখন মাথা কাজ করে, তখন মাথার মধ্য দিয়া সমস্ত শরীর কাজ করে ; যখন হৃদয় কাজ করে, তখন, হৃদয়ের মধ্য দিয়া সমস্ত শরীর কাজ করে : যখন হস্তপদ কাজ করে, তখন হস্তপদের মধ্য দিয়া সমস্ত শরীর কাজ করে। তবেই হইল যে, শরীরের প্রত্যেক মৰ্ম্মগ্রস্থির অভ্যস্তরে সমস্ত শরীর জাগিতেছে । এই যে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৪০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।