وت ج 8 নিজেই উৎসাহসহকারে কাজ আরম্ভ করিল। এই অনভ্যস্ত প্রণালীর অসুবিধাতে তাহার কৌতুকবোধ হইল। মসলা লাফাইয়া-উঠিয়া চারিদিকে ছিটাইয়া পড়ে, আর সে হাসি রাখিতে পারে না । তাহার এই হাসি দেখিয়া রমেশেরও হাসি পায় । এইরূপে মসলাকোটার অধ্যায় শেষ করিয়া কোমরে অণচল জড়াইয় একটা দরমাঘেরা জায়গায় কমলা রান্ন চড়াইয়া 'দিল । কলিকাতা হইতে একটা হাড়িতে করিয়া সন্দেশ আনা হইয়াছিল, সেই হাড়িতেই কাজ চালাইয়া লইতে হইল । রান্না চড়াইয়া-দিয়া কমল রমেশকে কহিল, “তুমি যাও, শীঘ্ৰ স্নান করিয়া লও— আমার রান্না হইতে বেশি দেরি হইবে না ।” রাস্নাও হইল, রমেশ ও স্নান করিয়া আসিল । এখন প্রশ্ন উঠিল, থাল ত নাই, কিসে খাওয়া যায় ? রমেশ অত্যন্ত ভয়ে ভয়ে কহিল, “খালাসিদের কাছ হইতে সান্কি ধার করিয়া অয়ন যাইতে পারে ।” কমলা কহিল—“ছি !” রমেশ মৃদুস্বরে জানাইল, এরূপ অনাচার পূৰ্ব্বেও তাহার দ্বারা অনুষ্ঠিত হইয়াছে । কমলা কহিল—“পূৰ্ব্বে যা হইয়াছে, তা হইয়াছে, এখন হইতে হইবে না - আমি ও দেখিতে পারিব না ।” এই বলিয়। সে সেই সন্দেশের মুখে যে সর ছিল, তাহাই ভাল করিয়া ধুইয়া-আনিয়া উপস্থিত করিল। কহিল-–“অাজকের মত তুমি ইহাতেই খাও, পরে দেখা যাইবে।” জল দিয়া ধুইয়৷ আহারস্থান প্রস্তুত বঙ্গদশম . [ ৩য় বর্ষ, পৌষ । হইলে রমেশ শুদ্ধভাবে খাইতে বসিয়া গেল । ছই-এক গ্রাস মুখে তুলিয়া কহিল—“বাঃ, চমৎকার হইয়াছে !” কমলা লজ্জিত হইয়া কহিল—“যাও, ঠাট্টা করিতে হইবে না !” . রমেশ কহিল—“ঠাট্টা নয়, তাহা এখনি দেখিতে পাইবে ?” বলিয়া পাতের অল্প দেখিতে দেখিতে নিঃশেষ করিয়া আবার চাহিল । কমলা, এবারে অনেক বেশি করিয়া দিল । রমেশ ব্যস্ত হইয়া কহিল— “ও কি করিতেছ ? তোমার নিজের জন্ত কিছু আছে ত ?” “ঢের অাছে—সেজন্তে তোমার ভাবিতে হইবে না ।” - রমেশের তৃপ্তিপূর্বক আহারে কমল৷ ভারি খুসি হইল । রমেশ কহিল—“তুমি কিসে খাইবে ?” কমলা কহিল—“কেন, ঐ সরাতেই হুইবে ।” রমেশ অস্থির হইয়া উঠিল । কহিল, “না, সে হইতেই পারে না ।” কমলা আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল—“কেন, হইবে না কেন ?” রমেশ কহিল—“না না, সে কি হয় ?” কমলা কহিল—“খুব হইবে—আমি সর ঠিক করিয়া লইতেছি । উমেশ, তুই কিসে থাইবি ?” উমেশ কহিল, “মাঠাকরুণ, নীচে ময়রা খাবার বেচিতেছে, তাহার কাছ হইতে শালপাত চাহিয়া আনিতেছি।” রমেশ কহিল, “তুমি যদি ঐ সরাতেই খাইবে ত আমাকে দাও, আমি ভাল করিয়া ধুইয়া আনিতেছি ।”
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪০৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।