পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8eb’ বঙ্গদর্শন । . [ ৩য় বর্ষ, পৌষ । অনেকগুলিতেই আজ আর সন্ধ্যারতির দীপ জলে না, শঙ্খ ঘণ্টা নীরব, যাহার খোদিত প্রস্তরখণ্ডগুলি ধুলিলুষ্ঠিত—ইহার কোনো একজন ব্যক্তিবিশেষের কল্পনাকে আীকার দিবার চেষ্টা করে নাই । ইহারা তখনকার সেই অজ্ঞাত যুগের ভাষাভারে আক্রান্ত । যখন ভারতবর্ষের জীর্ণ বৌদ্ধধৰ্ম্ম নবভূমিষ্ঠ হিন্দুধৰ্ম্মের মধ্যে দেহান্তর লাভ করিতেছে, তখনকার সেই নবজীবনোচ্ছাসের তরঙ্গলীল। এই প্রস্তরপুঞ্জে আবদ্ধ হইয়া ভারতবর্ষের এক প্রান্তে যুগান্তরের জাগ্ৰত মানবহৃদয়ের বিপুল কলধবনিকে আজ সহস্রবৎসর পরে নিঃশব্দ ইঙ্গিতে ব্যক্ত করিতেছে । ইহা কোনো একটি প্রাচীন নবযুগের মহাকাব্যের কয়েকখও ছিন্নপত্র । এই দেবালয়শ্রেণী তাহার নিগুঢ়-নিহিত নিস্তব্ধ চিত্তশক্তির দ্বারা দশকের অন্তঃকরণকে সহসা যে ভাবান্দোলনে উদ্বোধিত করিয়া তুলিল, তাহার আকস্মিকতা, তাহার সমগ্রতা, তাহার বিপুলত, তাহার অপূৰ্ব্বত্ব প্রবন্ধে প্রকাশ্ন করা কঠিন—বিশ্লেষণ করিয়া, খণ্ডখও করিয়া বলিবার চেষ্টা করিতে হইঘে । মামুষের ভাষা এইখালে পাথরের কাছে হার মানে—পাথরকে পরে-পরে বাক্য : গাথিতে হয় না, সে স্পষ্ট কিছু বলে না, কিন্তু যাহ-কিছু বলে, সমস্ত একসঙ্গে বলে —এক পলকেই সে সমস্ত মনকে অধিকার করে—সুতরাং মন যে কি বুঝিল, কি শুনিল, কি পাইল, তাহা ভাবে বুঝিলেও ভাষায় বুঝিতে সময় পায় না, অবশেষে স্থির হইয়া ক্রমে ক্রমে তাহাকে নিজের কথায় বুৰিয়া লইতে হয় । দেখিলাম, মন্দিরভিত্তির সর্বাঙ্গে ছবি খোদা । কোথাও অবকাশমাত্র নাই। যেখানে চোখ পড়ে এবং যেখানে চোখ পড়ে না, সৰ্ব্বত্রই শিল্পীর নিরলস চেষ্টা কাজ করিরাছে । ছবিগুলি বিশেষভাবে পৌরাণিক ছবি নয় ; দশ অবতারের লীলা বা স্বৰ্গলোকের দেবকাহিনীই যে দেবালয়ের গারে লিখিত হইয়াছে, তাও বলিতে পারি না । মানুষের ছোটবড় ভালমন্দ প্রতিদিনের ঘটনা—তাহার খেলা ও কাজ, যুদ্ধ ও শান্তি, ঘর ও বাহির, বিচিত্র আলেখ্যের দ্বার। মন্দিরকে নিবিড়ভাবে বেষ্টন করিয়া আছে । এই ছবিগুলির মধ্যে আর কোন উদেখা দেখি না, কেবল এই সংসার যেমন ভাবে চলিতেছে, তাহাই আঁকিবার চেষ্টা । সুতরাং চিত্ৰশ্রেণীর ভিতরে এমন অনেক জিনিঘ চোখে পড়ে, যাহা দেবালয়ে অঙ্কনযোগ্য বলিয়া হঠাৎ মনে হয় না । ইহার মধ্যে বাছাবাছি কিছুই নাই -- তুচ্ছ এবং মহৎ, গোপনীয় এবং ঘোষশীর, সমস্তই আছে। কোনো গির্জার মধ্যে গিয়া যদি দেখিতাম, সেখানে দেরালে ইংরাজসমাজের প্রতিদিনের ছবি ঝুলিতেছে —কেহ খান খাইতেছে, কেহ ডগকার্ট হঁ। কাইতেছে, কেহ হুইষ্টখেলিতেছে, কেহ পিয়ানো বাজাইতেছে, কেহ সঙ্গিনীকে বাহপাশে বেষ্টন করিয়া পঙ্ক নাচিতেছে, তবে হতবুদ্ধি হইয়া ভাবিতাম, বুঝি-বা স্বপ্ন দেখিতেছি—কারণ, গির্জা সংসারকে সৰ্ব্বতোভাবে মুছিয়া-ফেলিয়া আপন স্বগীয়তা প্রকাশ করিতে চেষ্টা করে । মাক্সষ সেখানে লোকালয়ের বাহিরে অাসে