নবম সংখ্যা । ] শ্রমণ । 8>> হইয়। অাছে—ইহারা সখী, ইহার একবৃক্ষেই পরিষক্ত –ইহার মধ্যে একজন ভোক্তা, আর একজন সাক্ষী,একজন চঞ্চল,আর একজন স্তব্ধ। ভুবনেশ্বরের মন্দির ও যেন এই মন্ত্র বহন করিতেছে—তাহা দেবালয় হইতে মানবত্বকে মুছিয়া ফেলে নাই –তাহা দুই পার্থীকে একত্র প্রতিষ্ঠিত করিয়া ঘোষণা করিয়াছে । কিন্তু ভুবনেশ্বরেয় মন্দিরের মধ্যে আরো যেন একটু বিশেষত্ব আছে । ঋষিকবির উপমার মধ্যে নিভৃত অরণ্যের একান্ত নির্জনতার ভাবটুকু রহিয়া গেছে। এই উপমার দৃষ্টিতে প্রত্যেক জীবাত্মা যেন একাকিরূপেই পরমাত্মার সহিত সংযুক্ত । ইহাতে যে ধ্যানচ্ছবি মনে আনে, তাহীতে দেখিতে পাই যে, যে আমি ভোগ করিতেছি, ভ্রমণ করিতেছি, সন্ধান করিতেছি, সেই আমির মধ্যে “শাস্তং শিবমদ্বৈতং স্তব্ধ ভাবে নিয়ত আবিহুত । কিন্তু এই একের সহিত একের সংযোগ ভুবনেশ্বরের মন্দিরে লিখিত হর নাই । সেখানে সমস্ত মান্বষ তাহার সমস্ত কৰ্ম্ম, সমস্ত ভোগ লইয়া, তাহার তুচ্ছ-বৃহৎ সমস্ত ইতিহাস বহন করিয়া, সমগ্রভাবে এক হইয়া আপনার মাঝখানে অস্তরতররূপে,স্তব্ধরূপে, সাক্ষিরুপে ভগবানকে প্রকাশ করিতেছে,–নির্জনে নহে, যোগে নহে— সজনে, কৰ্ম্মের মধ্যে । তাহা সংসারকে, লোকালমুকে দবালয় বলিয়া ব্যক্ত করিয়াছে - তাহ সমষ্টিরূপে মানবকে দেবত্বে অভিষিক্ত করিয়াছে। তাহা প্রথমত ছোটবড় সমস্ত মানবকে আপন প্রস্তরপটে এক করিয়া তুলিয়াছে, তাহার পরে দেখাইয়াছে, পরম ঐক্যটি কোনখানে আছে—তিনি কে । এই ভূমঐক্যের অন্তরতর আবির্ভাবে প্রত্যেক মানব সমগ্রমানবের সহিত মিলিত হইয়া মহীয়ান । পিতার সহিত পুত্র, ভ্রাতার সহিত ভ্রাতা, পুরুষের সহিত স্ত্রী, প্রতিবেশীর সহিত প্রতিবেণী, এক জাতির সহিত অন্ত জাতি, এক কালের সহিত অন্ত কাল, এক ইতিহাসের সহিত অন্ত ইতিহাস দেবতাত্মা দ্বারা একাত্ম হইয়। উঠিয়াছে ! শ্রমণ । “ধৰ্ম্মং শরণং গচ্ছামি ! যুগ | তাহার কথা কালে সমগ্র সভ্যজগতের বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি । সুধীমণ্ডলীর নিকট সুপরিচিত হইয়াছে। সংবং শরণং গচ্ছামি ।” এক সময়ে এই সংক্ষিপ্ত মস্ত্রে ভারতবর্ষে এক যুগান্তর উপস্থিত হইয়াছিল । সচরাচর প্রচলিত ইতিহাসে তাহারই নাম—বৌদ্ধ ভারতবর্ষের পক্ষে বৌদ্ধমত নিতাস্ত নুতন বলিয়া বোধ হয় না । শাক্যসিংহ বুদ্ধত্বলাভ করিবার পর হইতে, এই পুরাতন মত অভিনব বিক্রমে নাম দিগেদশে প্রচারিত
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।