পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬ । क्रमण ! [ ৩য় বর্ষ, বৈশাখ । রমেশের বিবাহের যে দিন স্থির হইয়া ছিল, তাহার পরে একবৎসর অকাল ছিল— সে ভাবিয়াছিল, কোনক্রমে সেই দিনটা পার হইয় তাহার একবৎসর মেয়াদ বাড়ির যাইবে । - কস্তার বাড়ী নদীপথ দিয়া যাইতে হইবে —নিতান্ত কাছে নহে—ছোট-বড় দুটো • তিনটে নদী উত্তীর্ণ হইতে জিনচারদিন লাগিবণর কথা । ব্ৰজমোহন দৈবর জন্ত যথেষ্ট পথ ছাড়িয়া দিয়া একসপ্তাহ পূৰ্ব্বে শুভদিনে যাত্রা করিলেন । ബ যাত্রার পূৰ্ব্বে রমেশ দৈবজ্ঞকে গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কই ঠাকুর, তোমার গণনা ফুলিল কই ?” দৈবজ্ঞ কংিল—“শুভকৰ্ম্মে বাধা ন পড়ুক –কিন্তু বাধা পড়িবার সময় এখনে অনেক আছে । কেবল “শস্তঞ্চ গৃহমাগতং নহে, বধুর সম্বন্ধেও সেই কথা ।” রমেশ ইহায়তও আরাম পাইল । নৌকা যখন পাল ফুলাইয়৷ ছুটিল, রমেশ মনে মনে বলিতে লাগিল—“গ্রহ পালের নৌকার আগেআগে ছুটিতে পারে।” কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, সমস্ত পথ কোথাওঁ কোন বিঘ্ন হয় নাই—বরাবর বাতাস অম্বকুল ছিল।-সিমুলঘাটায় পৌঁছিতে , পুরা তিনদিন ও লাগিল না । বিবাহের এখনো চারদিন দেরি আছে। ব্ৰজমোহনবাবুর দু’চারদিন আগে আসিবারই, ইচ্ছা ছিল । সিমুলঘাটায় তাহার বেহান দীন অবস্থায় থাকেন। ঐজমোহনবাবুর অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল, ইহার বাসস্থান তাহাদের স্বগ্রামে উঠাইH লইয়। স্থহীকে সুখে-স্বচ্ছদে রাখেন ও বন্ধুখণ শোধ করেন । কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকতে হঠাৎ সে প্রস্তাব করা সঙ্গত মনে করেন নাই । এবারে বিবাহ উপলক্ষ্যে উপহার বেহানকে তিনি বাস উঠাইয়া লইতে রাজি করাইয়াছেন । সংসারে বেহানের একটিমাত্র কস্তা,~—তাহার কাছে থাকিয়া মাতৃহীন জামাতার মাতৃস্থান অধিকার করিয়া থাকিবেন, ইহাতে তিনি আপত্তি করিতে পারিলেন না । তিনি কহিলেন, “যে যাহা বলে বলুক, যেখানে আমার মেয়ে-কামাই থাকিবে, সেখানেই আমার স্থান ।” বিবাহের কিছুদিন আগে আসিয়া ব্ৰজমোহনবাবু তাহার বেহানের ঘরকল্প তুলিয়, লইবার ব্যবস্থা করিতে প্রবৃত্ত হইলেন । বিবাহের পর সকলে মিলিয়া একসঙ্গে যাত্রা করাই তাহার ইচ্ছা । এইজন্তু তিনি বাড়ী হইতে আত্মীয় স্ত্রীলোক কয়েকজনকে সঙ্গেই আনিস্লাছিলেন । এইরূপ বন্দোবস্তই সমস্ত হইল । যতই একে একে দিন কাটিতে লাগিল, গ্রহনক্ষত্রের প্রতি রমেশের বিশ্বাস তত্তই শিথিল হইয়া আসিল । আকাশে এতগুলা জ্যোতিঙ্কেজ কি প্রয়োজন ছিল, যদি তাহার রমেশের এই অতি সামান্ত কাজটুকুর সম্বন্ধেও লিখিত সত্য ভঙ্গ করিল । আকাশের ঐ অবিশ্বাসী আলোক গুলার চেয়ে যদি ধুলিবিহারী নিজের পা-দুটোর উপর সে বেশি আস্থা স্থাপন করিতে পারিত, তবে একদৌড়ে কোনকালে বিবাহের লগ্ন পার হইয়া যাইত । তবু এখনো সময় আছে। যুগযুগান্তর .যে সকল গ্রন্থতার জাগিয়া থাকে, তাহীদের কোন তাড়া নাই—তাহার ” একমুহুর্তে, এমন কি, শেষ মুহূর্বেও ললাটের