প্রথম সংখ্যা । ] দিগন্তের দিকে চাহিয়া দেখা গেল, একটা প্রকাও অদৃশু সন্মার্জনী ভাঙা ডালপালা, খড়কুটী, ধুলাবালি আকাশে উড়াইয় প্রচণ্ড বেগে ছুটিয়া আসিতেছে । ‘রাথ রাখ, সামাল সামাল, হায় হায়’ করিতে করিতে মুহূৰ্ত্তকাল পরে কি হইল, কেহই বলিতে পারিল না । একটা ঘূর্ণ হওয়া একটি সঙ্কীর্ণ পথমাত্র আশ্রয় করিয়া প্রবলবেগে সমস্ত উন্মলিতবিপৰ্য্যস্ত করিয়া দিয়া নৌকা-কব্লটাকে কোথায় কি করিল, ভাহীর কোন উদ্দেশ পাওয়া গেল ন । পাৰ্ব্বত্য নদীপথে অকস্মণং জলপ্লাবুনের দ্যtয় মুহূৰ্ত্তের ঝড় মুহুর্তের মধ্যে --অন্তৰ্দ্ধান করিল—কিন্তু তাহার সেই পথটুকুতে পূর্বের সহিত পরের আর কোন সাদৃশ্য রহিল মা । 8 কুহেলিকা কাটিয়া গেছে । বহুদূরব্যাপী মরুময় বালুভূমিকে নিৰ্ম্মল জ্যোৎস্না বিধবার শুভ্ৰবসনের মত আচ্ছন্ন করিয়াছে । নদীতে নৌকা ছিল না, ঢেউ ছিল না, রোগযন্ত্রণার পরে মৃত্যু যেরূপ নিৰ্ব্বিকার শান্তি বিকীর্ণ করিয়৷ দেয়; সেইরূপ শাস্তি জলে-স্থলে স্তব্ধভাবে বিরাজ করিতেছে । সংজ্ঞালাভ করিয়া রমেশ দেখিল, সে বালির তদুট পড়িয়া আছে। ঝড়ের বেগ তাহাকে এক পলকের আঘাতে মৃত্যুর মধ্যে ফেলিয়া আবার অবলীলাক্রমে মৃত্যু হইতে উত্তীর্ণ করিয়া দিয়াছে । কি ঘটিয়াছিল, তাহা মনে করিতে তাহার কিছুক্ষণ সময় গেল—তাহার পরে ধীরে ধীরে- দুঃস্কুল্পের মত সমস্ত ঘটনা তাহার মনে জাগিয়া উঠিল । তাহার পিতা ও অদ্যান্ত অঙ্কীয়গণের কি নৌকাডুবি । Sషి দশা হইল, সন্ধান করিবার জন্ত সে উঠিয় পড়িল । চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, কোথাও কাহারে কোন চিন্তু নাই । বালুতটের তীর বাহিয়া সে খুজিতে খুজিতে চলিল । পদ্মার দুই শাখাবাহুর মাঝখানে এই শুভ্র দ্বীপটি উলঙ্গ শিশুর মত উৰ্দ্ধমুখে শয়ন রহিয়াছে । রমেশ যখন একটি শাখার তীরপ্রশস্ত ঘুরিয়৷ অন্ত শাখার তীরে গিয়া উপস্থিত হইল, তখন কিছুদূরে একটা লাল কাপড়ের মত দেখা গেল। ক্রতপদে কাছে গিয়া রমেশ দেখিল, লাল-চেলী-পরা নববধূটি প্রাণহীনভাবে পড়িয়া আছে । @ জলমগ্ন মুমুধুর শ্বাসক্রিয় কিরূপ কৃত্রিম উপায়ে ফিরাইয়া আনিতে হয়, রমেশ তাহ জানিত । অনেকক্ষণ ধরিয়া রমেশ বালিকার বাহুঙ্কুটি একবার ত{হার শিক্টরের দিকে প্রসারিত করিয়া পরক্ষণেই তাহার পেটের উপরে চাপিয়া ধরিতে লাগিল । ক্রমে ক্রমে বধুর নিশ্বাস বহিল এবং সে চক্ষু মেলিল । রমেশ তখন অত্যন্ত শ্রান্ত হইয়া কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বলিয়া রহিল । বালিকাকে কোন প্রশ্ন করিবে, সেটুকু শ্বাসও যেন তাহার আীয়ত্তের মধ্যে ছিল না । @ বালিকা তখনো সম্পূর্ণ জ্ঞানলাভ করে নাই । একবার চোখ মেলিয়া তখনি তাহার চোখের পাতা মুদিয়া আসিল । রমেশ পরীক্ষা করিয়া দেখিল, তাহার শ্বাসক্রিয়ার আর কোন ব্যাঘাত নাই। তখন এই জনহীন, জলস্থলের সীমায় জীবনমৃত্যুর মাঝখানে সেই পাণ্ডুর জ্যোৎস্নালোকে রমেশ বালিকার মুখের দিকে অনেকক্ষণ চাহিদা ब्रङ्ठिा । & - -
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।