পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہون\8 সম্ভাবনা না দেখিয়া সে মৃদুভাবে একটু-আধটু কাশিল—তাহাতেও কোন ফল হইল না – অবশেষে তাহার চাবির গোছা দিয়া দরজায় ঠকৃঠক করিতে লাগিল। শব্দ যখুন প্রবলতর হইল, তখন রমেশ মুখ ফিরাইল । কমলাকে দেখিয়া তাহার কাছে আসিয়া কহিল--"এ তোমার কি-রকম ডাকিবার প্রণালী ?” কমলা কহিল—“তা, কি রকম করিয়া ডাকিব ?” রমেশ কহিল, “কেন, বাপমায়ে আমার নামকরণ করিয়াছিলেন কিসের জন্য,--যদি কোনো ব্যবহারেই না লাগিবে ? প্রয়োজনের সময় আমাকে রমেশবাবু বলিয়া ডাকিলে ক্ষতি কি ?” আবার সেই একই-রকম ঠাট্ট ! কমলার কপোলে এবং কর্ণমূলে সন্ধ্যার আভার উপরে আরো একটুখানি রক্তিম আভা যোগ দিল ;–সে মাথা বাকাইয়া কহিল, “তুমি কি cয বল, তাহার ঠিক নাই ! শোন, তোমার খোবার তৈরি ; একটু সকাল-সকাল খাইয়া লও । আজ ওবেলায় ভাল করিয়া খাওয়া হয় নাই ।” নদীর বাতাসে রমেশের ক্ষুধাবোধ হইতেছিল । আয়োজনের অভাবে পাছে কমলা ব্যস্ত হইয় পড়ে, সেইজন্ত কিছুই ৰলে নাই—এমন সময়ে অযাচিত আহারের সংবাদে তাহার মনে যে একটা স্বথের আন্দোলন তুলিল, তাহার মধ্যে একটু বৈচিত্র্য ছিল । কেবল ক্ষুধানিবৃত্তির আসন্ন সম্ভাবনার স্বথ'নহে–কিন্তু সে যথন জানিতেছে ম, তখনে যে তাছার জন্ত একটি চিত্ত৷ বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, মাঘ। জাগ্রত আছে.–একটি চেষ্টা ব্যাপৃত রহিয়াছে —তাহার সম্বন্ধে একটি কল্যাণের বিধান স্বতই কাজ করিয়া চলিয়াছে, ইহার গৌরব সে হৃদয়ের মধ্যে অনুভব না করিয়া থাকিতে পারিল না । কিন্তু ইহ তাহায় প্রাপ, নহে, এত-বড় জিনিষটা কেবল ভ্রমের উপরেই প্রতিষ্ঠিত –এই চিন্তার নিষ্ঠুর আঘাতও সে এড়াইতে পারিল না—সে শির লত করিয়া দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল । " কমলা শহার মুখের ভাব দেখিয়া আশ্চৰ্য্য হইয়া কহিল—“তোমার বুঝি থাইতে ইচ্ছা নাই ? ক্ষুধা পায় নাই ? আমি কি তোমাকে জোর করিয়া খাইতে বলিতেছি ?” রমেশ তাড়াতাড়ি প্রফুল্লতার ভাণ করিয়া কহিল—“তোমাকে জোর করিতে হইবে কেন, আমার পেটের মধ্যেই জোর করিতেছে । এখন ত খুব চাবি ঠক্‌ঠক্‌ করিয়া ডাকিয়া আনিলে, শেষকালে পরিবেষণের সময় যেন দৰ্পহারী মধুসূদন দেখা না দেন ।” এই বলিয়া রমেশ চারিদিকে চাহিয়া কহিল—“কছ, খাদ্যদ্রব্য ত কিছু দেখি না । খুব ক্ষুধার জ্যের থাকিলেও এই আসবাবু, গুলা আমার হজম হইবে না—ছেলেবেল হইতে আমার অন্তরকম অভ্যাস ।”—রমেশ কামরার বিছানা প্রভৃতি অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া দেখাইয়া দিল । - কমলা খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। হাসির বেগ থামিলে কহিল—“এখন বুঝি আর সবুর সহিতেছে মা ? যখন আকাশের দিকে তাকাইয়া ছিলে, তখন বুঝি ক্ষুধাতৃষ্ণ