পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম সংখ্যা । ] নৌকাডুবি । 8Wっ> ছিল না। আর যেমনি আমি ডাকিলাম, অমনি মনে পড়িয়া গেল ভারি ক্ষুধা পাইয়াছে ! আচ্ছা, তুমি একমিনিট বোস, আমি আনিয়া দিতেছি।” রমেশ কহিল—“কিন্তু দেরি হইলে.এই বিছানাপত্র কিছুই দেখিতে পাইবে ন— তখন আমার দোষ দিয়ে না !” রসিকতার এই পুনরুক্তিতে কমলার কম আমোদবোধ হইল না , তাহার আবার ভারি হাসি পাইল । সরল হাস্তোচ্ছাসে ঘরকে স্বধাময় করিয়া-দিয়া কমল৷ দ্রুতপদে খাবার আনিতে গেল । রমেশের কাঠপ্রফুল্ল তার ছদ্মদীপ্তি মুহূর্বের মধ্যে কালিমায় ব্যাপ্ত হইল । উপরে-শালপাত-ঢাকা একটা চাঙারি লইয়। অনতিকাল পরেই কমলা কাম রায় প্রবেশ করল । বিছানার উপরে চাঙারি রাখিয়। অ{চল দিয়। ঘরের মেজে মুছিতে লাগিল । রমেশ ব্যস্ত হইয়া কহিল, “ও কি করিতেছ ?” কমলা কহিল—“আমি ত এখনি কাপড় ছাড়িয়। ফেলিব !”—এই বলিয়। শালপাতা তুলিয়৷ পাতিল ও তাহার উপ: লুচি ও তরকারী নিপুণহস্তে সাজাইয়। দিল । রমেশ কহিল—“কি আশ্চর্য । লুচির জোগাড় করিলে কি করিয়া ?” কমলা সহজে রহস্ত ফণস না করিয়া অত্যন্ত নিগূঢ়ভাব ধারণ করি ৷ কহিল— “কেমন করিয়া বল দেখি ?” রমেশ কঠিন চিন্তার ভাগ করিয়া কহিল—“নিশ্চয়ই খালাসীদের জলখাবার হইতে ভাগ বসাইয়াছ - কমলা অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া কহিল— “কথখন না । রাম বল ?” রমেশ খাইতে খাইতে লুচির অদিকারণসস্বন্ধে যত-রাজ্যের অসম্ভব কল্পনা দ্বারা কমলাকে রাগাইয়া তুলিল । যখন বলিল, “আরব্য উপদ্যাসের প্রদীপওয়ালা আলাদান বেলুচিস্থান হইতে গরম-গরম ভাজাইয়া তাহার দৈত্যকে দিয়া সওগাদ পাঠাইয়াছে,* তখন কমলার আর ধৈর্য্য কিছুতেই রহিল ন,—সে মুখ ফিরাইয়া কহিল, “তবে যাও— আমি বলিব না ?” রমেশ ব্যস্ত হইয়া কহিল—“না না, আমি হার মানিতেছি । মাঝদরিয়ায় লুচি— এ যে কেমন করিয়া সম্ভব হইতে পারে, অামি ত ভাবিয়া পাইতেছি না—কিন্তু তবু খাইতে চমৎকার লাগিতেছে।” এই বলিয়া রমেশ তত্ত্বনির্ণয় অপেক্ষা ক্ষুধানিবৃত্তির শ্রেষ্ঠত সবেগে সপ্রমাণ করিতে লাগিল । -ষ্টীমার চরে ঠেকিয় গেলে, শুন্যভাণ্ডারপুরণের চেষ্টায় কমলা উমেশকে গ্রামে পাঠাইয়াছিল । স্কুলে থাকিতে জলপানিস্বরূপে রমেশ কমলাকে যে কয়টি টাকা দিয়াছিল, তাহারই মধ্য হইতে অল্প-কিছু বাচিয়াছিল, তাহাই দিয়া কিছু ঘি-ময়দা সংগ্ৰহ হইল। উমেশকে কমল' জিজ্ঞাসা করিল— “উমেশ, তুই কি খাবি বল দেখি ?” • উমেশ কহিল—“মাঠাকুরুণ, দয়া. কর যদি, গ্রামে গোয়ালার বাড়ীতে বড় সরেস দই দেখিয়া আসিলাম—কলা ত ঘরেই আছে, আর পয়সা-হয়েকের চিড়ে-মুড়কি হইলেই পেট ভরিরা আজ ফলার করিয়া লই ।”