8や8 বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, মাঘ । সমস্ত হৃদয়কে বারংবার বেষ্টন করিয়৷ প্রদক্ষিণ করিয়া ফিরিল- সেই নামের শব্দটিমাত্র যেন অপরিমেয়-করুণারসার্জ দুইটি ছায়াময় চক্ষুরূপে তাহার মুখের উপরে বেদনা বিকীর্ণ করিয়া চাহিয়া রহিল। রমেশের সৰ্ব্বশরীর পুলকিত এবং দুই ক্ষু অশ্রুসিক্ত হইয়া আসিল । তাহার গত দুই বৎসরের জীবনের সমস্ত ইতিহাস তাহার মনের সম্মুখে প্রসারিত হইয়া গেল –সমস্ত তুচ্ছকথা, ক্ষুদ্র ঘটনা এক অপুৰ্ব্ব রাগিণীর দ্বারা প্রবাহিত হইয়া তাহার বক্ষের মধ্যে কুহরিত হইতে লাগিল । হেমনলিনীর সহিত তাহার প্রথম পরিচয়ের দিন মনে পড়িয়া গেল । সেদিনকে রমেশ তাহার জীবনের একটি বিশেষ দিন বলিয়া চিনিতে পারে নাই । যোগেন্দ্র যখন তাহাকে তাহাদের চায়ের টেবিলে লইয়া গেল, সেখানে হেমনলিনীকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া লাজুক রমেশ আপনাকে নিতান্ত বিপল্ল বোধ করিয়াছিল । অল্পে অল্পে লজ্জা ভাঙিয়া গেল, হেমনলিনীর সঙ্গ অভ্যস্ত হইয়। আসিল, ক্রমে সেই অভাসের বন্ধন রমেশকে বন্দী করিয়া তুলিল । কাব্যসাহিত্যে রমেশ প্রেমের কথা যাহা-কিছু পড়িসাছিল, সমস্তহ সে হেমনলিনীর প্রতি আরোপ করিতে .আরম্ভ করিল । আমি ভালবাসিতেছি মনে করিদ্ধা সে মনে মনে একট। অহঙ্কার অসুভব করিল। তাহার সহপাঠীরা পরাক্ষ৷ উত্তীর্ণ হুইবার জন্য ভালবাসার কবিতার অর্থ মুখস্থ করিয়া মরে—আর রমেশ সত্যসত্যহ ভালবাসে, ইহা চিন্তা করিয়া অন্ত ছাত্রাদগকে সে কুপাপাত্র মনে করিত । রমেশ আজ অালো চনা করিয়া দেখিল, সেদিনও সে ভালবাসার বহিদ্বর্ণরেই ছিল। কিন্তু যখন অকস্মাৎ কমলা আসিয়া তাহার জীবনসমস্তাকে জটিল করিয়া তুলিল, তখনি নানা বিরুদ্ধ ঘাতপ্রতিঘাতে দেখিতে দেখিতে হেমনলিনীর প্রতি তাহার প্রেম আকারধারণ করিয়া, জীবন গ্রহণ করিয়া জাগ্রত হইয়া উঠিল । এখন আর এ শাস্ত্রালোচনা মহে, খেলা নহে, এখন সুখদুঃখ নিরতিশয় নিবিড় হইয়া উঠিয়াছে, এখন প্রেম জীবন-মরণ অধিকার করিয়া বসিয়াছে, সংসারের সকল সত্যের চেয়ে সে সত্যতম হইয়া দাড়াইয়াছে । রমেশ তাহার দুই করতলের উপরে শির নত করিয়া ভাবিতে লাগিল, সম্মুখে সমস্ত জীবনই ত পড়িয়া রহিয়াছে—তাহার ক্ষুধিত উপবাসী জীবন—শেছদ্য সঙ্কটজালে বিজড়িত । এ জাল কি সে সবলে দুই হাত দিয়া ছিন্ন করিয়৷ ফেলিবে না? ছিন্ন করিতেই হইবে—তাহার ইহজীবনের যাহা সৰ্ব্বাপেক্ষা সত্য, যাহা সৰ্ব্বোচ্চ সফলতা, তাহী লাভ করিতেই হইবে । তাহার কোন এক জায়গায় কাপুরুষতার ছিদ্র পাহয়। শনি তাহাকে গ্রাস করিয়াছে—কঠিন সত্যকে আশ্রয় . করিয়া কোনো আপাত-ফলের দিকে ন৷ তলকাইয়া বারের দ্যায় আপনাকে মুক্তি fলক্তে হইবে ! এই বলিয়। সে দৃঢ়সঙ্কল্পর আবেগে হঠাৎ মুখ তুলিয়া দেখিল, আদুরে আর-একটা বেতের চৌকির পিঠের উপরে হাত রাখিম৷ কমল দাড়াহয়। আছে । কমলা চকিত হইয়া ৰলিয়া উঠিল, “তুমি ঘুমাইয়া পড়িয়া
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।