পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম সংখ্যা । ] কিন্তু তোমার দেহেরই পারমার্থিক অস্তিত্ব যখন আমি স্বীকার করিলাম না, তখন সেই দেহ হইতে অনুমিত আত্মারও পারমার্থিক অস্তিত্ব আমি স্বীকার করিতে পারি না । অন্তত আমার আত্মা যেরূপ আমার উপলব্ধির বিষয় ও অামার নিকট স্বতঃসিদ্ধ বস্তু, তোমার আত্মা সেরূপ উপলব্ধির বিষয় নহে ; অতএব উহা স্বতঃসিদ্ধ বস্তুও নহে। এইখানে বর্কলির সহিত অদ্বয়বাদীর প্রভেদ । কেবল বাকলি কেন, সাংখ্যদর্শনসম্মত পুরুষের সহিত ধদি বৈদাস্তিক আত্মীকে অভিন্ন বলিয়। ধরা যায়— তাহা হইলে এখানে সাংথ্যের সহিত ও বেদাস্তার ভেদ । সাংখ্য বহুপুরুষবাদী ; বেদান্তী একপুরুষবাদী বা একাত্মবাদী । বেলাস্তের আত্মা আমার আত্মা --অর্থাৎ আমি । তদ্ভিস্থ অন্ত কোন আত্মার অস্তিত্ব বেদাস্ত স্বীকার করেন না । এই আত্মার নাম জীবাত্মা বা জীব । এই জীব অর্থাৎ অামি বিশ্বজগত-নামক একটা কল্পি ত পদার্থকে আমার বাহিরে প্রক্ষিপ্ত করিয়া তাহীকে নিরীক্ষণ করিতেছি ও-তাহার প্রতি আমার বিবিধ সম্বন্ধ * স্থাপন করিয়া স্থখদুঃখ ভোগ করিতেছি । এই বিশ্বজগৎ আমার নিকট নিয়মিত সুব্যবস্থ জগৎ বলিয়। প্রতীয়মান হয় ; ইহার মধ্যে কাৰ্য্যকারণগৃঙ্খল দেখিতে পাই । এই জগতের মধ্যে শীতগ্রীষ্ম, দিবারাত্রি নিয়মমত পরিবৰ্ত্তিত হয়। গ্রহনক্ষত্র নিয়মমত উদিত ও অস্তুগত হয়। আগুনে হাত পোড়ে, অল্পে ক্ষুধানিবৃত্তি হয়, ইত্যাদি বিবিধ নিয়ম ও কাৰ্য্যকারণগৃঙ্খল। এই জগতে আমি দেখিতে মুক্তি । 8b’6: পাই । এই নিয়ম, এই ব্যবস্থা, এই কাৰ্য্যকারণগৃঙ্খলা কোথা হইতে আসিল, ইহা বুঝান একটা সমস্তা । হিউম এবং বৌদ্ধ, আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করেন না । তাহাদের মতে আত্মা নাই ; কেবল ক্ষণস্থায়ী বিজ্ঞানের পরম্পরামাত্র অাছে । উহাদের মধ্যে একটা পৌৰ্ব্বাপৰ্য্যসম্বন্ধ আমরা দেখিতে পাই । একটা প্রত্যয়ের পর আর একটা প্রত্যয় আসিয়া থাকে । অন্নভোজনরূপ প্রত্যয়ের পর ক্ষুধানিবৃত্তিনামক প্রত্যয় উপস্থিত হয়, এইমাত্র --কিন্তু উপস্থিত হইতেই হইবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নাই । . কেন না, উভয় প্রত্যয়ই ক্ষণস্থায়ী । একের সহিত অন্ত্যের ঐ পৌৰ্ব্বাপৰ্য্যসম্বন্ধ ব্যতীত অন্ত কোনরূপ সম্বন্ধ নাই । ঐরাপ ঘটিয়া থাকে ; ঐক্কপ যে ঘটিতেই হইবে, এরূপ কোন কারণ নাই । কেন অন্তরূপ না ঘটিয়া ঐরূপই ঘটে, এ প্রশ্ন নিরর্থক—কেন না, ঐরূপ না ঘটিল্প অন্তরূপ ঘটিলেও ঠিক সেই প্রশ্নই উঠিত। আতাফল ভূমিতে কেন পড়ে, অগ্নিস্পর্শে কেন যন্ত্রণ হয়, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না ; আতাফল যদি উদ্ধগামী হইত, অগ্নিস্পশে যদি আরাম হইত, তাহা হইলেও কেন তেমন হয়, এই প্রশ্ন উঠিত ; তাহারও উত্তর দিতে পারিতাম ন। যখন একরূপ-ন-একরূপ ঘটিত্বেই হইবে, তখন যাহা ঘটিতেছে, তাহাই মানিয়া লও । কেন এরূপ হইল, কেন ওরূপ হইল না, এ তর্ক তুলিয়া লাভ নাই । ক্ষণিকবিজ্ঞানবাদী বৌদ্ধ বলেন, উহা অবিস্কা । হিউম বলেন, ও সকল প্রশ্নের উত্তর নাই ; উহা হেঁয়ালি ।