দশম সংখ্যা । ] মুক্তি । SS(? জগৎকর্তা বলিয়া সংপ্রমাণ করিবার পরিশ্রমের প্রয়োজন কি ছিল ? এই যে প্রতিপাদন করিলে, “বিশ্বজগতের কর্তী অার-কেক নহে, আমি স্বয়ং ; বিশ্বজগতের আমিই স্থষ্টি করিয়াছি ; আমিই আমার উদেখাহুরূপ করিয়া চালাইতেছি” ; এসব কি অনর্থক ? এতক্ষণ' বলিতেছিলে সত্য ; এখন বলিতেছ মিথ্যা ; তোমার কথার মানে বোঝাই দায় হইল । তোমার কোন কথাটম গ্রহণ করিব ?” বেদান্তী বলেন, ‘বন্ধু হে, একটু স্থির হও । আমার ভাষাটা হেঁয়ালি-গোছের হইতেছে বটে, কিন্তু একটু তলাইয়া দেখিলে হেঁয়ালি থাকিৰে না । ভাষাটা বড় অদ্ভুত জিনিষ ; সত্য-মিথ্যা, এই শব্দ-দুটাই অনেকসময় গণ্ডগোল বাধায় । বাহাকে সত্য বলা যায়, তাহা এক হিসাবে সত্য, অন্ত হিসাবে মিথ্যা । যাহাকে মিথ্যা বলা যায়, তাহা একার্থে মিথ্যা, অন্ত অর্থে সত্য । • মনে কর মরীচিক।– মরুভূমিতে জলভ্ৰম—ইহা সত্য না মিথ্যা ? এক হিসাবে ইহা সত্য । যাহাকে আমরা জল বলি, তাহা একটা প্রত্যয়মাত্র বা কতিপয় প্রত্যয়ের সমষ্টিমাত্র-কতিপয় প্রত্যয় যুগপৎ বুদ্ধির সমীপস্থ হইলে উহাকে জল বল। যায়। বস্তুত জল বলিয়া আমার বাহিরে কিছু নাই । কিন্তু জলবুদ্ধি আছে, জলের প্রত্যয়টা আছে । মরীচিকাতে যে প্রত্যয় জন্মাইয়াছে, উহা জলেরই প্রত্যয় । যতক্ষণ ঐ প্রত্যয় থাকে, ততক্ষণ উহা জলেরই প্রত্যক্ষ্ম—যে প্রত্যয়সমষ্টিকে আমি জল নাম দিই, উহা সেই প্রত্যয়সমষ্টি । কাজেই উহ সত্য ; অস্তত বতক্ষণ মরীচিকা থাকে, যতক্ষণ ঐ জলপ্রত্যয় থাকে, ততক্ষণ উছ সত্য । তার পর যখন অস্ত প্রত্যয় উপস্থিত হইয়া পূৰ্ব্বপ্রত্যয়কে ধ্বংস করে, জলপ্রত্যয় নষ্ট করিয়া দেয়, তখন বলা যায়, ঐ পূর্ববর্তী প্রত্যয় মিথ্যা । যতক্ষণ ঐ জলপ্রত্যয় ছিল, ততক্ষণ উহা সতাই ছিল ; ততক্ষণ তুমি মাখা খুড়িলেও আমি উহাকে জলের প্রত্যয় ভিন্ন অন্ত প্রত্যয় বলিতাম না । এখন যখন সে প্রত্যয় গিল্পাছে, তখন উহাকে মিথ্যা বলিতে প্রস্তুত আছি । এতক্ষণ উহাকে সত্য বলিতেছিলাম, কিন্তু এখন জানিতেছি, উহা স্থায়ী সত্য নহে, উহা তাৎকালিক সত্য । যাহা স্থায়ী সত্য নহে, তাহীকে তৎকালে যে সত্য মনে করিয়াছিলাম, তাহারই নাম অধ্যাস । এখন নুতন প্রত্যয় আবির্ভাবের পর নুতন বুদ্ধির উদয় হইয়াছে, অধ্যাস কাটিয়া গিয়াছে। সেইরূপ রজ্জ্বকে যখন সৰ্পবোধ হয়, ঐ বোধও একটা প্রত্যয় ; তৎকালে উহা সত্য । কিন্তু সর্পবুদ্ধি কাটিয়া গেলে জানিতে পারি, ঐ বুদ্ধি তাৎকালিক সত্যমাত্র । এইরূপ স্বপ্ন এক হিসাবে সত্য, অদ্য হিসাবে মিথ্যা । যতক্ষণ স্বপ্ন দেখি, ততক্ষণ উহার মত সত্য অণর কিছুই নাই । কাহারও সাধ্য নাই, উহা মিথ্য প্রতিপন্ন করে ; কিন্তু প্রবুদ্ধ অর্থাৎ জাগরিত হইলে সে অধ্যাস যায় ; তখন উহ সত্য নহে, জানিতে পারি। ‘আত্মার স্বরূপ বিচার করিতে গেলেও সত্য-মিথ্যা ঠিক এইরূপেই বুঝিতে হইবে । “এই যে জড়জগৎ, যাহা আমার বাহিরে আমি দেখি, উহাও একার্থে সত্য, অন্ত অর্থে সত্য নহে। যতক্ষণ উহাকে আমি আমার বাহিরে অামা হইতে স্বতন্ত্রভাবে দেখি, ততক্ষণ উছ সত্য—কাহার সাধ্য উহাকে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪৯৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।