পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

89 . বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, বৈশাখ । . দেবদত্ত স্বাধীনতায় ভর করিয়া দশক্রোশ পথ অকাতরে অতিবাহন করিলেন। তাহার পরে ক্রমে তাহার স্বাধীনতা মন্দা পড়িয়া আসিতে লাগিল । কায়-ক্লেশে তিনি আর দুই-ক্রোশ পথ কথঞ্চিৎ প্রকারে অতিবাহন করিলেন ; কিন্তু এখনো তিন-ক্রোশ গন্তব্যপথ তাহার সম্মুখে দিগন্তর-হইতে দিগন্তরে প্রসারিত রহিয়াছে। তাহার পদদ্বয় বেবোরে পড়িয়া—নিতান্ত না চলিলে নয় তাই চলিতেছে। যে স্বাধীনতা বোধের নূতন স্ফৰ্ত্তির সময় ১৫ক্রোশ পথ দেবদত্তের চক্ষে একক্রোশের বেশ ধারণ করিয়াছিল, সেই স্বাধী‘নৃতী-বোধের এখন অস্ত-গমনের কাল উপস্থিত; এখন তাই এক-ক্রোশ পথ তাহার চক্ষে শত-ক্রোশ বা ততোধিক । দেবদত্ত এখন মনে করিতেছেন যে, “আমার স্বাধীনতায় কাজ নাই—মাঠের মধ্যে কোথাও যদি একটা বটগাছের আড়াল পাই, তবে তাহার স্বস্নিগ্ধ ছায়ায় মুহুর্তেকের জন্ত হাতপ। ছড়াইয়া বাচি।” পূৰ্ব্বে দেবদত্তকে দেবদত্তের মন তিন-সত্য করিয়া বলিয়াছিল “তুমি স্বাধীন” ; এখন অম্লান-বদনে বলিতেছে “তুমি পরাধীন।” মনের দুই কথাই কিছু অার সত্য হইতে পারে না ; হয় এটা সত্য—নয় ওটু সত্য। তবেই হইতেছে যে, দেবদত্তের তখনকার সেই যে স্বাধীনতা-বোধ এবং এখনকার এই যে পরাধীনতা-বোধ— দুইই তাহার দুই বিভিন্ন অবস্থার উপযোগী দুইপ্রকার মনের ভাব, তা বই আর-কিছুই নহে । তাহার পরে মনে কর, অস্ত-দিবাকরের সঙ্গে সঙ্গে যখন তাহার স্বাধীনতাবোধ অস্তমিত হইল,তখন তিনি সম্মুখে একুটা প্রকাও বটবৃক্ষ দেখিয় তাহার তলে বোছক হেলান দিয়া বসিলেন—বসিয়া শ্রমাপমোদন করিতেছেন, ইতিমধ্যে জনৈক অপরিচিত পথিক তাহার দুই-হাত অস্তরে সেই বটবৃক্ষের আর-এক পাশ্বে স্থান গ্রহণ করিল। - দেবদত্তের মনোমধ্যে দুইটি কথা কাপ ধরাধরি করিয়া উপস্থিত হইল। একটি কথা এই যে, বোছকণর ভিতরে চারি-পাচ-ভরি স্বর্ণালঙ্কার রহিয়াছে ; আর-একটি কথা এই যে, পাশ্বের লোকুটির মুখের আকার-প্রকার ভাল নহে ; তা ছাড়া, ভীহার হাতের লাঠির আয়তনের পরিমাণ কিছু যেন মাত্রাতীত । দেবদত্ত যে, স্থানান্তরে উঠিয়া যাইবেন—সুেশক্তি র্তাহার নাই ; তাহাতে আবার, নিদ্রার আকর্ষণে তাহার চক্ষু বুজিয়া আসিতেছে । কিন্তু “নিদ্রাকে কোনোমতেই আসিতে দেওয়া হইবে না” এই তাহার প্রতিজ্ঞ । র্তাহার মনের ভাব এই যে, “কি জানি ! হাতের যষ্টির সহিত মুখের চেহারার আমন যখন মিল, তখন “বিশ্বাসে নৈব কৰ্ত্তব্যঃ !” কিন্তু নিদ্রাকুহকিনীকে তিনি কত ঠেকাইয়। রাখিবেন । যেই একটু ফাক পাইতেছে—অমনি নিদ্র চুপিচুপি আসিয়া চক্ষুর কপাটে কুলুপ আঁটিয়া মস্তকের ভার বোছকার দিকে ঢুলাইয়া দিতেছে ; মস্তক বটবৃক্ষের গায়ে ঠোকর খাইয়া সচকিতভাবে স্বস্থানে উঠিয়া দাড়াইতেছে ; আর তৎক্ষণাৎ দেবদত্তের তদষ্ট ভাঙিয়া যাওয়াতে দেবদত্ত বেঁচেকাটিকে আপনার আয়ত্তের মধ্যে সরাইয়া আনিয়া স্বাবধান করিয়া রাখিতেছেন । নিদ্রণ কিন্তু ছাড়িবার পাত্র নহে—নিদ্র। অপ্রতিহত উদ্যমের সহিত