পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ সংখ্যা । ] অস্তঃপুরে আমরা চিরকালরচিত কাব্যকাহিনী শুনিতেছি, এই বিশ্বমানবের রাজভাওরে আমাদের জন্ত জ্ঞান ও ধৰ্ম্ম প্রতিদিন পুঞ্জীভূত হইয়া উঠিতেছে । এই মানবাত্মার মধ্যে সেই বিশ্বাত্মাকে প্রত্যক্ষ করিলে আমাদের পরিতৃপ্তি ঘনিষ্ঠ হয়—কারণ মানবসমাজের উত্তরোত্তর বিকাশমান অপরূপ রহস্যময় ইতিহাসের মধ্যে ব্রহ্মের আবির্ভাবকে কেবল জানামাত্র আমাদের পক্ষে যথেষ্ট আনন্দ নহে, মানবের বিচিত্র প্রতিসম্বন্ধের মধ্যে ব্রহ্মের প্রীতিরস নিশ্চয়ভাবে অমুভব করিতে পারা আমাদের অনুভূতির চরম সার্থকতা এবং পাতিবুস্তির স্বাভাবিক পরিণাম যে কৰ্ম্ম, সেই কৰ্ম্মদ্বারা মানবের সেবারূপে বহ্মের সেবা করিয়া অামাদের কৰ্ম্মপর তার পরম সাফল্য । আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি, হৃদয়বৃত্তি, কৰ্ম্মবৃত্তি—আমাদের সমস্ত শক্তি সমগ্রভাবে প্রয়োগ করিলে তবে সমালের অধিকার আমাদের পক্ষে যথাসম্ভব সম্পূর্ণ হয় । এই জন্ত বহ্মেয় অধিকারকে বুদ্ধি, পাতি ও কৰ্ম্ম দ্বারা আমাদের পক্ষে সম্পূর্ণ করিবার ক্ষেত্র মনুষ্যত্ব ছাড়া আর কোথাও নাই । মার্তা মেমন একমাত্র মাতৃসস্বন্ধেই শিশুর পক্ষে সৰ্ব্বাপেক্ষা নিকট, সৰ্ব্বাপেক্ষ পত্যক্ষ, সংসারের সহিত ক্টাহার অদ্যান্ত বিচিত্র সম্বন্ধ শিশুর নিকট অগোচর এবং অব্যবহার্য্য—তেমনি ব্ৰহ্ম মানুষের নিকট একমাত্র মনুষ্যত্বের মধ্যেই সৰ্ব্বাপেক্ষা সত্যরূপে, প্রত্যক্ষরূপে বিরাজমান এই সম্বন্ধের মধ্য দিয়াই আমরা তাহাকে জানি, তাহাকে প্রীতি করি, তাহার কৰ্ম্ম করি । এইজষ্ঠ মানবসংসারের মধ্যেই, প্রতিদিনের ছোটবড় সমস্ত কৰ্ম্মের মধ্যেই ব্রহ্মের উপাসনা মামু ধৰ্ম্মপ্রচার । (\లి ষের পক্ষে একমাত্র সত্য উপাসনা । অল্প উপাসনা আংশিক- কেবল জ্ঞানের উপাসনা, কেবল ভাবের উপাসনা,—সেই উপাসনাদ্বারা আমরা ক্ষণে ক্ষণে ব্ৰহ্মকে স্পর্শ করিতে পারি, কিন্তু ব্ৰহ্মকে লাভ করিতে পারি না । মানুষই মাকুrষর পক্ষে সৰ্ব্বাপেক্ষ সমগ্রভাবে প্রত্যক্ষ — এবং সেই সৰ্ব্বাপেক্ষণ প্রত্যক্ষের মধ্যে ব্ৰহ্মেরই আবির্ভাবকে প্রত্যক্ষতম করিয়া জান। মানবজীবনের চরম চরিতার্থতা । তাহা যদি না জালি, সংসারের সমস্ত পরিবর্তনের মধ্যে, জন্মমৃত্যু-মুখদুঃখ-লাভক্ষতির মধ্যে সেন্স নিস্তব্ধকে, সেই ধ্রুবকে যদি লাভ না করি, তবে স্নেহপ্রেমদয়াকে মোহ এবং ংসারকে মায়ামরীচিকা বলিয়া স্বীকার করিতেই হইবে এবং প্রতি মুহূর্তের আকর্ষণকেই প্রতিমুহূর্তে সৰ্ব্বপ্রধান বলিয়া গণ্য না করার কোন কারণ থাকিবে না । মনুষ্যত্বকে, মানবসংসারকে যদি সৰ্ব্বাস্তঃকরণে সেই ভুমার দ্বারা আবৃত দেখি, তবে বিশ্বমানবের সহিত প্রত্যেক মানবের নিত্যসম্বন্ধ, সত্যসম্বন্ধ যপার্থভাবে উপলব্ধি করি, তবে নিরস্তর সেই সম্বন্ধ বাহিয়া ত্রহ্মের আনন্দধারা পান করি।---- অসত্য অন্তায় আমাদের চিত্ত হইতে দূর হয় এবং কদাচ কাহা হইতেও আমরা ভয়প্রাপ হই না । এইরূপে বিশ্বসংসারের মধ্যে ব্যাপকভাৰে । ও মানবসংসারের মধ্যে বিশেষভাবে ব্ৰহ্মলাভের সাধনাকে ব্রাহ্মসমাজ খৰ্ব্ব করিয়া অনিয়াছেন কেন ? এ কথা সকলেই জানেন, অনেক সময়ে মানুষ যাহাকে উপায়রূপে আশ্রয় করে, তাহাকেই উদ্দেশুরূপে বরণ করিয়া ।