(\రిచి লয়, যাহীকে রাজ্যলাভের সহায়মাত্র বলিয়া ডাকিয়া লয়, সেই রাজসিংহাসন অধিকার করিয়া বসে । আমাদের ধৰ্ম্মসমাজরচনাতেও সে বিপদ আছে । আমরা ধৰ্ম্মলাভের জন্ত ধৰ্ম্মসমাজ স্থাপন করি, শেষকালে ধৰ্ম্মসমাজই ধৰ্ম্মেয় স্থান অধিকার করে । আমাদের নিজের চেষ্টারচিত সামগ্ৰী আtমাদের সমস্ত মমতা ক্রমে এমন করিয়৷ নিঃশেষে আকর্ষণ করিয়া লয় যে, ধৰ্ম্ম, যাহ। আমাদের স্বরচিত নহে, তাহা ইহার পশ্চাতে পড়িয়া যায়। তখন, আমাদের সমাজের বাহিরে যে আর কোথাও ধৰ্ম্মের স্থান থাকিতে পারে, সে কথা স্বীকার করিতে কষ্টবোধ হয় । তখন আমাদের প্রতিষ্ঠিত সমাজবিস্তারকেই ধৰ্ম্মবিস্তার বলিয়া মনে করি— ব্ৰহ্ম এবং ব্ৰাহ্মসমাজ আমাদের কাছে প্রায় এক কথা হইয়া দাড়ায়, সেইজন্ত ব্ৰাহ্মসমাজে প্রবেশ করিলেই আমরা ব্রাহ্ম হইলাম বলিয়া জগতের অন্তসকলের সহিত বিশেষত্ব অমুভব করি। ইহার ফল হয় এই যে, ব্ৰহ্মউপলব্ধির স্বাভাবিক প্রকৃষ্টক্ষেত্র বে বিশ্বসংসার—তাহার প্রতি আমাদের দৃষ্টিই থাকে না—ব্রাহ্মসমাজ তাহ অপেক্ষা বৃহৎ হইয়া উঠে –এবং এই ব্রাহ্মসমাজের ভিতর দিয়৷ ছাড়া ব্রহ্মোপাসনাকে, আমরা গণ্য করিতেই চাই না । ইহা হইতে ধয়ের বৈষয়ুিকতা আসিয়া পড়ে। দেশবুদ্ধগণ যে ভাবে দেশ জয় করিতে বাহির হয়, আমরা সেই ভাবেই ব্রাহ্মসমাজের ধ্বজ লইয়া বাহিয় হই। অন্যান্ত দলের সহিত তুলনা করিয়া আমাদের দলের লোকবল, অর্থবল, অামাদের দলের মন্দির ংখ্যা গণনা করিতে থাকি । মঙ্গলকৰ্ম্মে বঙ্গদশন । [ ৩য় বর্ষ, ফাঙ্কন । মঙ্গলসাধনের তানন্দ অপেক্ষণ মঙ্গলসাধনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বড় হুইয়া উঠে । দলাদলির আগুন কিছুতেই নেবে না, কেবলি বাড়িয়া চলিতে থাকে । যখন ব্রহ্মের প্রচার ভুলিয়া গিয়া অামাদের ব্রহ্মকে প্রচার করিতে চাই, যখন মানুষকে ভুলিয়া গিয়া আমাদের সমাজকে বড় করিয়া দেখি, যখন মঙ্গলকে আমাদের কৃত না বলিতে পারিলে স্বথবোধ হয় না; তখন ধৰ্ম্মসমাজের স্বারাতেই ধর্মের যথার্থ বিপৰ্য্যয়দশ উপস্থিত হয়। আমাদের এখনকার প্রধান কৰ্ত্তব্য এই যে, ধৰ্ম্মকে যেন আমরা ধৰ্ম্মসমাজের হস্তে পীড়িত হইতে না দিই, ব্ৰহ্মকে যেন বিশেষচিহ্রধারী ব্ৰহ্মব্যবসায়ীদের একাধিকৃত পণ্যদ্রব্যের মত না দেখি । আমরা যেন নিজের সমাজের উন্নতিতেই ব্রহ্মের মহিমা প্রত্যক্ষ না করি— সকল সমাজের মধ্যেই ব্রহ্মের আমোঘশক্তি কার্য্য করিতেছে. ইহাই বিশ্বাস করিয়া ও লক্ষ্য করিয়া আমরা যেন সমস্ত মানবের গৌরবে আপনাদিগকে মহীয়ান জ্ঞান করিতে পারি। ব্ৰহ্ম ধন্ত--তিনি সৰ্ব্বদেশে, সৰ্ব্বকালে, সৰ্ব্বজীবে ধন্ত—তিনি কোনো দলের নহেন, কোনো সমাজের নহেন, কোনো বিশেষ - ধৰ্ম্মপ্রণালীর নহেল, র্তাহাকে লইয়া ধৰ্ম্মের বিষয়কৰ্ম্ম ফণদিয়া ,বসা চলে না । ব্ৰহ্মচারী শিব্য জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন—“স ভগবঃ কস্মিন প্রতিষ্ঠিত ইতি”—“হে ভগবন, তিনি কোথায় প্রতিষ্ঠিত আছেন ?” ব্ৰহ্মবাদী গুরু উত্তর করিলেন —“স্বে মহিম্নি”---“আপন মহিমাতে- তাহারই সেই মহিমার মধ্যে র্তাহার প্রতিষ্ঠা অনুভব করিতে হইবে—--অামাদেব রচনার মধ্যে নহে । ’
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।