পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ সংখ্যা । ] ম, মীর মধ্যে যিনি মা হইয়া আছেন, যিনি চিরন্তন মা, তিনিই এই শীতল নদীধারার মধ্যে সেই কৰ্ম্মক্লান্ত তাপিতকে অভিৰিক্ত করিয়াছিলেন—এই নদীস্রোতের মধ্যেই স্তন্তদায়িনী স্নেহপ্লাবিনী মা প্রত্যক্ষ । সেইখানেই যদি বিশ্বমাতাকে প্রণাম করি, তবে তাহাকে সত্য প্রণাম করা হয় । সুপক ফল যখন স্বধারসে আমাদের রসনাকে তৃপ্ত করে, তখন সেই মধুর স্বাদের মধ্যে যদি জননীর স্নেহ লাভ করিতে পারি, তবে সেই লাভের মধ্যেই ব্ৰহ্মানন্দলাভ সত্য । সেই ‘রসে৷ বৈ’কে বত্ত তার অলঙ্কারে নহে, প্রকৃতভাবেই প্রভাতে-সন্ধ্যায়, গিরিনদাকাননে, স্বাদেগন্ধে-বর্ণে-রূপে যখন প্রত্যক্ষ অমুভব কয়িয়া সৌন্দর্য্যে-মাধুর্য্যে-মহিমায় সমস্ত জগৎকে দেদীপ্যমান দেখিব—তখনই আমাদের উপাসনাকে ব্রহ্মোপাসন। নাম দিবার অধিকার লাভ করিব—তথন সমস্ত তকবিতক, বিরোধবিদ্বেষ, চারিদিকের সহিত সমস্ত বিচ্ছেদ অনায়াসে স্বর্য্যোদয়ে কুয়াশার মত কাটিয়া যাইবে । যাহা বলিতেছি, এ কথ। নুতন নহে–ব্রহ্ম স বত্র ছাপছেন, এ কথা পুরাতন ; ইহা ভারতবর্ষের বনস্পতি বঢবৃক্ষের দ্যায় প্রাচাল । কিন্তু সেহ বটবৃক্ষ যদি আপনাকে প্রতিমুহূর্তে নবীন না করতে পারে, তাহার পল্লব যদি দিনে দিনে নুতন না জন্মে, তাহার রসসঞ্চার যদি প্রতিক্ষণে নুতন ন হয়, তবে তাহ। মৃত কাষ্ঠমাত্র। ব্রহ্মমন্ত্রকে আমাদের সমগ্র জীবনের সহিত, আমাদের সমগ্র সমাজের সহিত, যদি অহরহ যুক্ত করিয়া রাখি, তবেই তাহাকে অহরহ নবীন রাখিয়৷ ধৰ্ম্মপ্রচার । ©Ꮼ© তাহার ফলচ্ছায়া, তাহার স্বাস্থ্যসৌন্দর্য্য ভোগ করিতে পারিব । তাহাকে সত্যরূপে রক্ষণ করিলেই সে আমাদিগকে সত্যভাবে রক্ষা করিবে । - এই কথা স্বীকার করিলেই ইহার উপায় অন্বেষণ ও অবলম্বন করিতে হইবে । সে উপায় কোনো অবহেলাক্কত ব্যাপার নহে, সে উপায় অবকাশের দিনে ক্ষণকালীন আয়োজনমাত্র নহে । জীবনের আরম্ভ হইতে শেষ পর্য্যস্তই তাহার উদ্যোগ । সেই উদেযাগে আমাদিগকে প্রবৃত্ত হইতে হইবে । প্রথমে শিক্ষা, পরে চর্চা ও পরে সম্ভোগ— প্রথমে ব্রহ্মচৰ্য্য, পরে সংসারধৰ্ম্ম ও পরে ব্রহ্মসহবাস,—প্রথমে উদেযাগ, পরে সাধন। ও পরে দৃষ্টান্ত দ্বারা সমাজে যথার্থভাবে ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা হইতে পারে--আর ত কোন সংক্ষিপ্ত কৌশল জানি না । অতএব বিশ্বজগতে ও মানবসংসারে যথার্থ ব্ৰহ্ম-উপলব্ধির প্রকৃত সাধনা বালককালের ব্রহ্মচৰ্য্যপালনের দ্বারাই আরম্ভ করিতে হইবে। তখন হইতে সংষম-নিয়মের দ্বারা সবল-নিৰ্ম্মল হইয়া, চিত্তকে শাস্ত ও প্রসন্ন করিরা, অস্তঃকরণকে ভক্তিশ্রদ্ধাদ্বারা জগতের মধ্যে সজীব-সরস-ভাবে ব্যাপ্ত করিয়া, কল্যাণকয়ের প্রাত্যহিক অনুষ্ঠান দ্বারা মঙ্গলভাবকে জীবনের মধ্যে সহজ করিয়া তুলিয়, সুহিংসা ও দয়াপ্রেমের দ্বারা সকল চেতনজীবের সহিত যুক্ত হইয়া, ঐশ্বৰ্য্যবিলাসকে তুচ্ছ জানিয়া, লোকভয়-মৃত্যুভয়কে স্বণা করিয়া, ত্যাগনিষ্ঠ আত্মদমনের দ্বারা ধৈর্য্যবীৰ্য্য শিক্ষণ করিয়া, তবে আমরা সত্যভাবে সংসারের মধ্যে মানবজীবনকে ব্ৰহ্ম-উপলব্ধির দ্বারা