পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& Be - বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, ফান্ধন । রাগ হইল। সে অন্যদিকে মুখ করিয়া কেবল হওয়া উচিত, তাহাও তাহার অভ্যস্ত হয় নাই মাথা নাড়িল মাত্র। —কিন্তু রমেশ সম্মুখে আসিতেই আজ যেন রমেশ কহিল—“বেলা হইলে লোকজন উঠিয়া পড়িবে—এইবেল তৈরি হইয়া লও नी !” কমলা তাহার কোন উত্তর না করিয়া একখানি ক্টোচানো শাড়ী, গাম্‌ছ ও একটি জামা চৌকির উপর হইতে তুলিয়া-লইয়৷ ক্রতপদে রমেশের পাশ দিয়া স্নানের ঘরে চলিয়া গেল । - রমেশ যে প্রাতঃকালে উঠিয়া কমলাকে এই যত্নটুকু করিতে আসিল, ইহা কমলার কাছে কেবল যে অত্যন্ত অনাবশুক বোধ হইল, তাহা নহে, ইহা যেন তাহাকে অপমান করিল । রমেশের আত্মীয়তার সীমা যে কেবল খানিকট-দুর পর্য্যন্ত, এক জায়গায় আসিয়া তাহা যে বাধিয়া যায়, ইহা সহস। কমলা অনুভব করিতে পারিয়াছে। তাই তাহারও মনের মধ্যে একটা রাশ টানিবার ভাব আসিয়াছে । রমেশের নিকট হইতে সে যে আপনাকে কোন সীমায় কতদূর প্রত্যাহরণ করিয়া আনিবে, ইহাই ভাবিয়া তাহার হৃদয় ক্ষণে ক্ষণে সঙ্কুচিত হইয়া উঠিতেছে । কোনো তর্কযুক্তি অবলম্বনপূর্বক সুস্পষ্ট চিন্তা না করিয়াও রমেশের সহিত সম্বন্ধের মধ্যে কমলা একটা শূন্তত, একটা লজ্জাজনক দৈন্ত জহুমান করিতেছে। ইতিপূৰ্ব্বে রমেশের । কাছে সে যেরূপ সহজ-স্বাভাবিক-ভাবে ছিল, আজ তাহ কমলা জার রক্ষা করিতে পারিতেছে না। শ্বশুরবাড়া কোনো গুরুজন তাহাকে লজ্জা করিতে শেখায় নাই—মাথায় কোন অবস্থায় ঘোমটার পরিমাণ কতখানি অকারণে তাহার বুকের ভিতরটা লজ্জায় কুষ্ঠিত হইতে লাগিল । - রমেশেরও মন আজি ভাল ছিল না । সে যে একটা অনিশ্চিতের দিকে ভাসিয়া চলিয়াছে, ভাল-মন্দ যাহা হেীকৃ একটা পরিণামের আভাস সে যে দেখিতে পাইতেছে না, কেবল অদৃষ্টের আঘাত খাইয়া চলিয়াছে, নিজের জোরে স্থির হইয়া দাড়াইতে পারিতেছে না, এ ভাবন তাহাকে পীড়ন করিতেছিল। সে বুঝিতে পারিতেছিল যে, ভাগ্য যদিও প্রতিকুল ছিল সন্দেহ নাই, তথাপি নিজের স্বভাবগত চুৰ্ব্বলতাই তাহাকে এই বিপাকের মধ্যস্রোতে টানিয়া লইয়া চলিয়াছে । কোনোএকটা সময়ে দৃঢ়তা অবলম্বন করিয়া একটা গন্তব্যপথ অবলম্বন করা উচিত ছিল। সে সময়ট কথন আসিয়াছিল এবং Lস পথটা কি, তাহ রমেশ এথলে৷ ঠিকমত নির্ণয় করিতে পারে নী—কিন্তু ইহ। তাহার কাছে নিশ্চয় বোধ হইতেছে যে, যদি তাহার চরিত্রে দ্বিধাবিহান বল যথেষ্ট থাকিত, তবে সে সময়ও তাহার অগোচরে পার হইয় । যাইত স1,—সে পথও তাহার সম্মুখে সুস্পষ্ট প্রকাশ পাইত । আজ সে যে-ভাবে চলিয়াছে, তাহ পিতাস্তই ঘৃণার হাস্তজনক – তাহ। পুরুষোচিত নহে । আজ তাহার কোনো কৰ্ম্ম নাই, কোনো সঙ্কল্প নাই,—গতি আছে, গন্তব্য নাই,—যত দিন যাইতেছে,ততই তাছার জীবন একটা অদ্ভুত নিস্ফলতার মধ্যে জড়িত হইয়া পড়িতেছে । সঙ্কটের সময় নিজের সমস্ত শক্তি খাটাইবারই একটা মুখ আছে—কিন্তু