একাদশ সংখ্যা । ] জ্ঞানের মধ্যে খুবই যুদ্ধ চলিতেছে-–মান্ধাতার আমল হইতে যুদ্ধ চলিতেছে । আত্মসত্তা এবং বস্তসত্তা’র মধ্যেও তথৈবচ । দশনরাজ্যে যতপ্রকার বিবাদ-কলহ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিত ঘটিয়াছে এবং ঘটিতেছে—যেমন সামান্ত-বিশেষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, আত্মসত্তা এবং বস্তসত্তা’র মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জ্ঞাত এবং জ্ঞেয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কাৰ্য্য এবং কারণের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কৰ্ত্ত এবং কৰ্ম্মের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিত, এবংবিধ সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতীয় গোড়া’র স্বত্ৰ হ’চ্চে বিজ্ঞানের ভেদবুদ্ধি। সেই ভেদবুদ্ধিকে জয় করিয়া আনন্দময় কোষের সামঞ্জস্ত, শাস্তি এবং আনন্দ্ৰে সমুখীন করিতে হইবে । ইহারই নাম বিযকে জয় করিয়া অযুতে উখান করা । ভেদবুদ্ধিটি সামান্ত নারী নহেন--তিনি বিজ্ঞানময় এবং আনন্দময় কোষের সন্ধিস্থানে নিনিদ্র-নয়নে পাহার দিতেছেন । যাত্রী দ্বারে উপস্থিত হইবামাত্র তিনি বলেন— “দাড়াও ! কে তুমি--অদ্বৈতবাদী না দ্বৈতবাদা ? সাকারবাদী না নিরাকারবাদী ?” যাত্রী যদি বলে—“ আনি অদ্বৈতবাদী,” তবে তাহাকে তিনি অতলস্পর্শ সমুদ্র দেখাইয়া বলেন—“গলায় পাথর বাধিয়1 ঐ ঠাই ঝাপ দেও !” যাত্রা যদি, বলে—“আমি দ্বৈতবাদী,” তবে ছুই দিকের দুই প্রবল স্রোতের মধ্যবর্তী ঘূর্ণচক্ৰ দেখাইয় তাহাকে বলেন— "ঐখানে বাও !” যাত্রী যদি বলে—“আমি সাকারবাদী",• তবে তাহাকে তিনি কাঠলোষ্ট্র’পাষাণ দেখাইয়া বলেন—“ঐখানে গিয়া মাথা খোড়ে৷ ” • যাত্রী যদি বলে—“আমি নিরাকারৰাণী, তৰে তাছাকে তিনি প্রজ সার সত্যের আলোচন । QQ為 লিত হতাশন দেখাইয়। বলেন—“উহার মধ্যে বীপ দিয়া পড়িয়া ধোয়৷ হইয়া আকাশে মিশিয়া যাও । এ-বাদীই হউন, ও-বাদীই হউন, আর যে-বাদীই হউন—ভেদবুদ্ধির বক্রকটাক্ষে পড়িলে বাদি-প্রতিবাদী উভয়েরই প্রাণ-সংশয় উপস্থিত হয় । ভেদবুদ্ধির হস্তে সত্যবাদী ব্যতীত আর কোনো বাদীরই পরিত্রাণ নাই । যাত্রী যদি সত্যসত্যই অমৃত-নিকেতনের প্রয়াসী হ’ন, তবে তাহার কথা স্বতন্ত্র । তিনি বলেন—“অদ্বৈতবাদ কাহাকে বলিতেছ, তাহা ও আমি জানি না ; দ্বৈতবাদ কাহাকে বলিতেছ, তাহাও আমি জানি না—জানিতে চাহি-ও না ; আমি এখানে বাদাবাদ করিতে আসি নাই-পথ ছাড়ে৷ ” এই বলির তিনি ভেদবুদ্ধিকে পশ্চাতে ঠেলিয়া-ফেলিয়া সম্মুখে, অগ্রসর হন, আর, তৎক্ষণাৎ তাহার জন্ত অমৃত-নিকেতনের দ্বার উন্মুক্ত হইয়া যায় । পাশ্চাত্য-পণ্ডিত-মহলে সামান্ত-জ্ঞান এবং বিশেষ-জ্ঞানের মধ্যে যুঝাযুঝি আরম্ভ হইয়াছে কখন হইতে ? বিজ্ঞান-স্বৰ্য্যোদয়ের বহুপূৰ্ব্বে সারা-ইউরোপ যে সময়ে মধ্যমাদের তামসী রজনীতে নিমগ্ন ছিল, সেই সময় হইতে । তখনকার কাল ছিল মঠধারী সন্ন্যাসী পণ্ডিতগণের প্রাদুর্ভাব-কাল । সেই সময়ে, সামান্তজ্ঞান বিশেব-জ্ঞানকে রাজ্য হইতে বহিষ্কৃত ‘ করিয়া-দিয়া বলপূৰ্ব্বক সিংহাসনে চড়িয়া বসিল । সামান্ত-জ্ঞানের বিষয়গুলা আবছায়ারকমের পদার্থ ! দেখিলে মনে হয়, একপ্রকার ভূতের নাচ । সেগুলা নির্বিশেষ-শ্রেণীর বস্ত -- ফণক বস্তু— বা ফকিৰণ। যেমন—সাধারণ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৬২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।