পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাদশ সংখ্য\ \*\ নৌকাডুবি। নিজে কিছু গোলাপজল প্রস্তুত করাইয়া লই । আমার মত লোক, যাহার কোনো যোগ্যতা নাই, তাহারে এমনি পাচরকম উপায়ে দিন চলিয়া যাইতেছে । আপনার গোলাপজলের আবখ্যক হইলে আমাকে স্মরণ করিবেন -- খাটি জিনিষ পাইবেন ।” রমেশ বৃদ্ধকে সাহায্য ও খুলি করিবার জল্প কহিল—“গোলাপজল নহিলে আমার চলেই নু অন্তত ছ-বোতল চাই—আপনার সের যা আছে—” বৃদ্ধ চোখ টিপিয়া কহিলেন—“তবে আপনাকে একটা গোপনীয় কথা বলি, তার কাহtকে ও ফাস করিবেন না । প্রথমশ্রেণীর গোলাপজলের দাম অ্যাটটাকা, দ্বিতীয়শ্রেণী চারটাকা, তৃতীয়শ্রেণী দুইটাক । তিনটেই জিনিষ অবিকল এক—কিন্তু দায়ে পড়িয়া দাম তফাৎ করিতে হয়—কারণ জগতে একশ্রেণীর নিৰ্ব্বোধ সকলে নয় ।” রমেশ হাসিয়া কহিল—“আমাকে তৃতীয়শ্রেণীর নিকেবাধের দলেই ফেলিবেন—অগমি বহুমূল্য নিৰ্ব্বদ্ধিতার পক্ষপাতী নই।” চক্ৰবৰ্ত্তী কহিলেন—“মাপ করিবেন, আমন কথা বলিবেনু না— আপনি যেটাকে বহুমূল্য নিৰ্ব্ব দ্ধিত বলিলেন, সেটা অশ্রদ্ধার বিষয় নহে । দুটাকার জিনিষ চোথ বুজিয়া যাহারা আটটাক দিয়া কিনিতে পারে, সেরূপ দরাজ মেজাজ রাজা-মহারাজার ঘরেই মেলে । যাহারা ঠকিতে ভয় করে, তাছারাই ঠিকদরে জিনিষ কিনিতে ব্যস্ত । মশায়, দাম কা’কে বলে ? কোনো জিনিষের কি দাম আছে ? —যে বেশি দিতে পায়ে, সেই বেশি দাম দেয় । ভগবান যদি দিন দিতেন, তবে আপনাকে Q\bo সত্যকথা বলিতেছি, আমি প্রথমশ্রেণীর নীচে এক পা নাবিতাম না ! বলিব কি মশায়, আমার প্রাণটা বেয়াকুবু, পেটের দায়ে নিতান্ত বুদ্ধিমান হইয়া বসিয়া আছি।” রমেশ হাসিতে হাসিতে কহিল—“বলেন কি ?” চক্ৰবৰ্ত্তী। তা সত্যই বলিতেছি ! এই দেখুন না, যে পৰ্য্যস্ত বৌমাকে দেখিয়াছি— আমার প্রাণ বলিতেছে, সমস্ত কারখানাট উজাড় করিয়া অন্তত একবার খাটি গোলাপজলে মালক্ষ্মীকে অভিষেকক্সান করাইয়া দেউলে হইতে পারিলে জীবন সার্থক হইত । অথচ দেখুন, আপনাকে ছ-বোতল গোলাপজল বারোটাকায় বিক্রি করিবার জন্ত আত্মপরিচয় দিয়া উমেদারি করিতে আসিয়াছি । যাই বলুন রমেশবাবু, বোমার মত অমন মিষ্ট হাসিটুকু আমি কোথাও দেখি নাই । কেবল মাকে হাসাইবার জন্ত আজ সকালবেল হইতে যে কত ভাড়ামিই করিয়াছি, তার আর ংখ্যা নাই । বৌমার হাসিবারও ক্ষমতা আছে—যা বলি, তাতেই হাসিস্থা ওঠেন— তার সেই শাদা হাসিতে আমার মন যেন গঙ্গাজলের ধারায় ধুইয়া যায়। বলিতে বলিতে স্নেহের আনন্দে বৃদ্ধের চক্ষু ছলছল করিয়৷ আসিল । এমন-সময় অদূরে তাহার কাম্রার দ্বারের কাছে আসিয়া কমলা দাড়াইল । তাহার মলের ইচ্ছ, কৰ্ম্মহীন দীর্ঘমধ্যাহ্লট সে চক্ৰবৰ্ত্তীকে একাকী দখল করিয়৷ বসে । চক্রবত্তী তাহাকে দেখিয়া বলিয়া উঠিলেন— “না না মা, এটা ভাল হইল না । এটা কিছুতেই চলিবে না ?” 该