পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

《, একটু বেশি করিয়া সাজ হইয়াছে ত ? মনে আছে ত, তোমার এই ক্ষীণদন্ত পোষ্যটির খুব চিকণ সুপারি না হইলে চলে না । কোথায় রে, উমেশ কোথায় ? শুনে যা, গুনে যা ! তোর খাওয়া হইয়াছে ত ? এখন এখানে মায়ের দরবার বসিবে—সব ক’টি সভাসদ একত্র হওয়া চাই ।” এইরূপে উমেশ এবং চক্রবর্তীতে মিলিয়া লজ্জিত কমলার কামূরায় সভাস্থাপন করিল। রমেশ একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বাহিরেই রহিয়া গেল। মধ্যাহ্লে জাহাজ ধকধক করিয়া চলিয়াছে। শারদরৌদ্ররঞ্জিত দুই তীরের শাস্তিময় বৈচিত্র্য স্বপ্নের মত চোখের উপর দিয়া পরিবৰ্ত্তিত হইয়া চলিয়াছে । কোথাও বা ধানের ক্ষেত, কোথাও বা নৌকা-লাগানো ঘাট, কোথাও বা বালুর তীর, কোথাও বা গ্রামের গোয়াল, কোথাও বা গজের টিনের ছাদ, কোথাও বা প্রাচীন ছায়াৰটের তলে খেয়াতরীর অপেক্ষী দুটি-চারটি পারের যাত্রী। এই শরৎমধ্যাঙ্কুের স্বমধুর স্তব্ধতার মধ্যে অদূরে কাম্রার ভিতর হইতে যখন ক্ষণে ক্ষণে কমলার স্নিগ্ধ কৌতুকহাস্ত কুমেশের কানে আসিয়া প্রবেশ করিল, তখন তাহার বুকে বাজিতে লাগিল । সমস্তই কি সুন্দর, অথচ কি সুদুর । রমেশের আর্ত জীবনের সহিত কি নিদারুণ আঘাতে বিচ্ছিন্ন । বৃদ্ধ চক্ৰবৰ্ত্তীর মত একজন অপরিচিত ব্যক্তি, উমেশের মত একজন লক্ষ্মীছাড়া গৃহহীন, ইহারাও আজ এই শরৎমধ্যাঙ্কুের ৰিপুল মধুচক্রের একটি নিস্তন্ধ মধুকোষের কাছে নিঃসঙ্কোচে জানন্দে গুলগুন করিতেছে, ইছারাও আজ এই চারিদিকের সামঞ্জস্তের বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, চৈত্র । মধ্যে সুন্দরভাবে যোগ দিয়াছে, এই শাস্তির মধ্যে, মাধুর্য্যের মধ্যে ইহাদের কোথাও অনধিকার নাই—কি স্তু রমেশ নির্বাসিত, বহিস্কৃত ! তাহার ব্যাকুল প্রাণুট এই চারিদিকের সহিত মিলিয়। এক হইয়া আজিকার এই নিভৃতমধ্যান্ধুে একটি হালির দ্বারা, প্রীতির দ্বারা, একটি কল্যাণময়ী মধুরিমার দ্বারা আপনাকে পরিবেষ্টিত করিয়া সম্পূর্ণ করিয়া তুলিবার জন্ত কাদিতেছে—আর তাহার কানে আসিতেছে বহুদুর আকাশের চিলের ডাক, ষ্টীমারের চক্রণহত জলের কলধ্বনি এবং কমলার হাস্তকুজিত আনন্দ-কণ্ঠস্বর ! כיסא কমলার এখনো অল্প বয়স–কোনো সংশয়, আশঙ্কা বা বেদন স্থায়ী হইয়া তাহার মনের মধ্যে টি-কিয়া থাকিতে পারে না । সে এখনো আপন মনের উপরে বুক দিয়া চাপিয়াপড়িয়া নিজের স্থখদুঃখে, মুদীৰ্ঘকাল ধরিয়া তা” দিবার অভ্যাস লাভ করে নাই । তাই শরতের আকাশের মত তাহার স্বচ্ছ হৃদয়ে কালে মেঘ অশ্রুজলে গলিয়া-পড়িয়া দেখিতে দেখিতে প্ৰসন্ন হাসির শীলোকে মিলাইয়। নিৰ্ম্মল হইরা যায় । । রমেশের ব্যবহারসম্বন্ধে এ কয়দিন সে • আর কোনো চিন্তা করিবার অবকাশ পায় নাই । স্রোত ৰেখানে বাধা পায়, সেইথানেই বত আবর্জন আসিয়া জমে - কমলার চিত্তস্রোতের সহজ প্রবাহ রমেশের আচরণে হঠাৎ একটা জায়গায় বুধি পাইয়াছিল, সেইখানে আবৰ্ত্ত রচিত হইয়। নীলা কথা বারবার একই জায়গায় ঘুরিয়া বেড়াইতে.. ছিল । বৃদ্ধ চক্রবর্তীকে লইয়। হাসিয়া, ৰকিয়,