পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । ] গ্রন্থ-সমালোচনা । · EL বাল্যকাল হইতে ইংরেজিভাষার অন্ধুশীলন করিয়া এবং ইউরোপীয়ভাবে শিক্ষিত হইয়। আমরা সেই ভাবে অভিভূত হইয়। পড়ি । সামাজিক রীতি, পদ্ধতি, ব্যবস্থা, অনুষ্ঠান, যাহা কিছু ইউরোপীয় তাহাই ভাল, আর যাহা কিছু স্বদেশীয় তাহাই মন্দ– ইংরেজদিগের সবই বিজ্ঞানাকুমোদিত এবং আমাদের সবই কুসংস্কারাচ্ছন্ন—এইরূপ মনের ভাব লইয়া আমরা প্রায় সকলেই কলেজ হইতে বাহির হই । . ইহা যে নিতাস্ত দুঃখের বিষয়, তাহাতে সন্দেহ নাই ; কিন্তু যেরূপ অবস্থা, তাহাতে অনিবাৰ্য্য বলিয়াই বোধ হয় । যাহার সৌভাগ্যশালী, তাহারা সংসারে প্রবেশ করিয়া ভুয়োদর্শন, অধ্যয়ন ও চিস্তার দ্বারা অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া এই নেশার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করেন। যাহার বিধাতার বিধানে বিড়ম্বিত, তাহদের নেশাট চিরদিন থাকিয়া যায় । পরম আহলাদের বিষয় যে, শ্ৰীযুক্ত পুর্ণচন্দ্র বস্ব মহাশয় এই নেশার ঘোরটা কাটাইয়া উঠিয়াছেন—তিনি ইংরেজি-সাহিত্যে কৃতবিস্ত, অথচ তিন-দিনের বিলাতী সভ্যতার মোহে অভিভূত নহেন— তাই এমন একখানি সুচিস্তিত, সুলিখিত, উপাদেয় পুস্তক আমাদের সাহিত্যের মুখ উজ্জ্বল করিয়াছে। সকল বিষয়ে সকলের সহিত মতের ঐক্য হইবে, এমন প্রত্যাশ ৰেশন বুদ্ধিমান ব্যক্তিই করেন না, করিতে পারেন না। কোন বিষয়ে ব্যক্তিবিশেষের মতামত নানা বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এই সংসারে সেই নানাবিষয় সকলের পক্ষে একরূপ হয় মা-সুতরাং মতের পার্থক্য ঘটিৰেই । পুর্ণবাবুর মতের সহিত যদি আমাদের মতের ইএকস্থলে ’ন মিলে, তাহাতে র্তাহার পুস্তকের উপাদেয়তার কিছুমাত্র লাঘব ঘটে না । - এই পুস্তকের প্রথমেই “ত্বষ্টি তত্বের* আলোচনা । পুর্ণবাবু বলিতেছেন, শাস্ত্রায়সারেই বলিতেছেন—“স্বষ্টি ও প্রলয় ধারাবাহিকক্রমে ব্রহ্মাণ্ডের নিত্য নিয়ম । একবার স্থষ্টির প্রবাহ, আবার প্রলয়-প্রবাহ, আবার তা-ই । অনাদিকালই সংসারের এই স্বষ্টি ও প্রলয়ের নিয়ম প্রবাহরূপে নিত্য । অতএব জগৎসংসারের ধ্বংস কখনই নাই । তাহার অবস্থাস্তর ঘটে মাত্র। কখন তাহার বিলীনাবস্থা, কখন বিকাশাবস্থা । বিকাশবস্থাই স্বষ্টি ও স্থিতি, এবং বিলীনাবস্থাই প্রলয় ।” * ইহর সহজ অর্থ এই যে, সচরাচর লোকে স্বষ্টি বলিতে যাহা বুঝে—অসৎ হইতে সতের উৎপত্তি—তাহা কখন হয় নাই। মুলপ্রকৃতি অনাদি এবং অনন্ত—ম্বষ্ট নহে। . এ বিষয়ে অধিক কিছু বলিতে আমরা বিরত হইলাম, কেন না, তাহা করিতে গেলে ভিন্ন ভিন্ন ধৰ্ম্ম-প্রণালী ও ধৰ্ম্ম-মতের কথা আসিয়া পড়ে । তাহ প্রীত্তিকক্ষও নছে, বর্তমান উপলক্ষ্যে প্রয়োজনীয়ও নহে । • ইহার পর মকুষ্যোৎপত্তি ও সম্রাজস্বষ্টি, বর্ণভেদ ও যুগান্তর-পরিণাম, বর্ণভেদ ও জাত্যত্তর-পরিণাম, ব্রাহ্মণ ও * জাতিভেদ, কৌলীশু বলিষণ-ৰিবহি,ৰিধবা-বিবাহ প্রভৃতি নানা গুরুতর সামাজিক বিষয়ের আলোচনা আছে । এই জালোচনায় পূর্ণবাবু যে সকল অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন, তাহী স্থগুৰিত যুক্তি দ্বার সমাপ্ত এবং স্বাধীন ও গভীর