as. চিত্তার পরিচায়ক । কিন্তু এই আলোচনায় একটা গুরুতর অভাবও আছে । যে সকল যুক্তি তাহার মতের অমুকুল, পুর্ণবাবু কেবল তাহারই অবতারণা করিয়াছেন ; প্রতিকুল যে সকল যুক্তি আছে, তাহ খণ্ডন করিতে প্রয়াস পান নাই। সুতরাং এমন কথা যদি কেহ বলে যে, এই পুস্তকে বিচারকের লেখনী অপেক্ষ উকীলের জিহবা সমধিক জাজল্যমান, তাহ। হইলে সে কথা আমাদিগকে ঘাড় পাতিয়া নীরবে শুনিতে হইবে । . - পূর্ণবাবু এই গ্রন্থের প্রারম্ভে তাহার “নিবেদনে” লিখিয়াছেন—“প্রাচীন হিন্দুসমাজ 'য়ে উচ্চাদর্শে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, সেই আদর্শের প্রতি লোকলোচনের দৃষ্টি ফিরান এই গ্রন্থের মুখ্য উদ্দেশু।” আমরা অমানবদনে মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারি যে, পুর্ণবাবুর উন্ধেগু সম্পূর্ণ সিদ্ধ হইয়াছে। যে কেহ কুসংস্কারাচ্ছন্ন নহে, যে কেহ অন্ধ নহে, যে কেহ আমাক্ষষ নহে সে-ই পুর্ণরাবুর এই গ্রন্থ অধ্যয়ন করিয়া হিন্দুর সমাজপ্রতিষ্ঠার আদর্শের উচ্চতা উপলদ্ধি করিবে । কিন্তু “সমাজ-তত্ত্ব”-বিষয়ক গ্রন্থের পক্ষে ইহাই মাত্র প্রমাণ করিলে যথেষ্ট হয় না । যে সমাজ এমন উচ্চ আদর্শে প্রতিঠিত হইয়াছিল, তাহার এমন অধঃপতন ঘটিল ৩য় বর্ষ, বৈশাখ । কেন, এ বিষয়েরও বিচার হওয়া আৰশুক । আচার, বিনয়, বিস্তা, প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি সদওণের ভিত্তির উপরই ত আমাদের কৌলী স্ত প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, তবে আমাদের কুলীনের শেষে নর-প্রেত হইয়া উঠিয়াছিলেন কেন ? অবশুই আমাদের কৌলীন্ত-পদ্ধতিতে, পারিপাশ্বিক অবস্থায় বা আমাদের প্রকৃতিতে এমন কিছু ছিল, “যাহার জন্ত আমাদের এইরূপ দুৰ্গতি ঘটিয়াছিল। এই সকল কথা না বুঝিলে, কেবল আদর্শের উচ্চতা বুঝিয়া আমাদের বিশেষ কোন লাভ নাই ; কেন না, যদিই কোন দেবতা প্রসন্ন হইয়া সেই উচ্চাদর্শে আবার আমাদিগকে পৌছাইয়া দেন, তাহ হইলেও আবার যে আমাদের সেইরূপ অধঃপতন ঘটিবে না, তাহ কেমন করিয়া জানিব । মাসিকপত্রের সংক্ষিপ্ত , সমালোচনায় কোন সদগ্রন্থেরই যথাযথ পরিচয় হইতে পারে না ; এই গ্রন্থেরও হইল না। ভাল গ্রন্থের যথার্থ ও সম্যক পরিচয়, কেবল সেই গ্রেস্থ । র্যাহীদের সাধ্য আছে, তাহার এক এক খণ্ড পুস্তক ক্রয় করিয়া ইহার পরিচয় লয়েন, ইহাই আমাদের ইচ্ছা । তাহাতে সময় ও অর্থ, উভয়েরই সদ্ব্যবহার হইবে । শ্ৰীচন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৫৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।