দ্বিতীয় সংখ্যা । নৌকাডুবি । 6 a. সঙ্গ দিতে পারে, তাহা তাহার পক্ষে পুষ্টিকর নহে । শিক্ষিত যুবক বালিকাকে বিবাহ করিয়া তাহাকে তাড়াতাড়ি প্রেয়সীর মত আপনার করিয়া লইতে চেষ্টা করিলে, তাহাতে বিলাতি ফেশানের স্ত্রীও গঠিত হয় না, হিন্দুঘরের গৃহিণী ও বিকাশ পায় না । এইরূপে ছোট এই একটুখানি হৃদয় বশ করিবার চেষ্টায় রমেশের সমস্ত মন খাটিতে লাগিল । যদিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বরপুত্র বাল্যকাল হইতে কেবল পড়া-তৈরি করিয়াই আসিয়াছে, চিত্তবৃত্তির স্বাধীনচর্চার কোন অবকাশই পায় নাই, তবু তাহার কাণ্ডজ্ঞান একেবারেই নষ্ট হয় নাই । কিছুদিনের মধ্যেই রমেশ বেশ বুঝিতে পারিল যে, সে এই বালিকার স্বামী বটে, কিন্তু সে খেলেন। নহে । স্বামীর চেয়ে খেলেনার অনেকগুলি বিশেষ সুবিধা আছে ; তাহাকে দুষ্ট মনে করিয়া শাসন করা যায়, শিষ্ট মনে করিয়া প্রশ্রয় দেওয়া চলে, তাহাকে বালকের সাজ করাইয়া পাঠশাল বসানো যায়, আবার আবশুকমত বালিকার বেশ পরাইয়া উপযুক্ত পাত্রের সহিত বিবাহের আয়োজন করিলে তাহার সঙ্গে মতবিরোধ ঘটে না । স্বামীর ব্যবহার ঠিক তাহার উণ্ট । ".কোন কথা না কহিলেও সে কথা কহে, তাহার সঙ্গে খেলার সম্পর্ক পাতাইবার পুৰ্ব্বেই সে বালিকাকে খেলার সামগ্ৰী বলিয়া মনে করে—তাহাঁকে বাক্সর মধ্যে চাপ৷ দিয়া রাখাই শক্ত । অতএব এই স্বামিপদার্থকে লইয়। অধিক সময় কাটানে চলে ন, পুতুলকে লইয়া সমস্ত দিন কাটিতে পারে। - লোকে শুনিয়া হাসিবে, কিন্তু রমেশ সাহেববাড়ী হইতে একটি বাক্সভরা বিচিত্র খেলনা আনাইয়া দিল । সহধৰ্ম্মিণীকে খেলনা • কিনিয়া দিতে হইবে, আর কিছুদিন আগে এ কথা রমেশকে বলিলে, সে বোধ হয় বক্তার প্রতি ধৈর্য্যরক্ষা করিতে পারিত না । আজি খেলনালাভে বালিকার আনন্দ দেখিয়া রমেশের মুখে স্নেহকোমল কৌতুকের হাস্ত দেখা দেয় । সময়ে সময়ে সে নিঃশব্দ পূদে পশ্চাতে আসিয়া অনেকক্ষণ দাড়াইয়া বধূর খেলা দেখে ; যদি এবিদ্যায় তাহার কিছুমাত্র । দখল থাকিত, তবে সে খেলায় যোগ দিতেও পারিত । . . . কিছুদিন পরে লোকমারফৎ কলিকাতা হইতে একখাচী নানাজাতীয় ছোট । ছোট পাখী উপস্থিত হইল। বধু তখন তাহার পুত্রিকাকে পালঙ্কে শোয়াইয়া রোদন করিতে বিশেষ করিয়া নিষেধ করিতেছিল, মাঝে মাঝে ভূতের ভয় দেখাইয় তাহাকে ভৎসনা করিতেও ছাড়িতেছিল না, অবশেষে বাহুপাশে তাহাকে দোলাইতে দোলাইতে যখন তাহাকে স্তনদানে প্রবৃত্ত হইয়াছে, এমনসময় রমেশ ঘরের মধ্যে প্রবেশ, করিল । বালিক তাড়াতাড়ি তাহার, পুতুল ফেলিয়। দিয়া মাথায় ঘোমটা টানিয়া বসিল । রমেশ কাছে আসিয়া কহিল, আজ তোমার জন্ত কি আনিয়াছি বল দেখি ” লুব্ধ ৰালিকা নুতন পুতুলের আশ্বাসে ঘোমটার ভিতর হইতে রমেশের মুখের দিকে চাহিল । রমেশ তখন ঘরের বাহির হইতে খাচাটি আনিয়া বধুর সামনে রাখিল এবং তাহার কাপড়ের আবরণটি ਾਂ দিল । ছোট ছোট
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৬৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।