পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 বেতন ব্যয় করিয়া লক্ষপতির কস্তার ব্যবহার্য্য পোষাক ক্রয় করা হইল, সে কি এই জামার মৰ্য্যাদা জানে, না, জানা সম্ভব ? আজকাল দুর্গোৎসবের সময় পুত্রকন্যাদির পোষাকের ব্যয় দরিদ্র গৃহস্থের পক্ষে একটা ভয়ানক আতঙ্কের কথা হইয়া উঠিয়াছে । ন হইবে কেন ? মিত্রজার কন্যার ২২২ টাকার জামা দেখিয়া আমার পুত্রকন্যাও সেইপ্রকার পাইবার জন্ত আমার কাছে আবার করিবে, তাহার উপর যদি আবার গৃহিণীর নথনাড়া থাকে, তাহা হইলে ত আর রক্ষা নাই । ছেলে অথবা ছেলের গর্ভধারিণীকে প্রবোধ দিবার জন্য ২২২ টাকার সাচ্চ পোষাকের পরিবর্তে অন্তত ৫ টাকা দিয়া সেইপ্রকার একটা ঝুটা জামাও অামাকে কিনিতে হইবে । কিন্তু এই পাচটাক ‘ন দেবায় ল ধৰ্ম্মায়’ । আমরা যখন বালক ছিলাম, তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা এখনকার অপেক্ষ হীন ছিল না । অথচ আমরা পূজার সময় কেম্রিক ছিটের জামা পাইয়া আনন্দে উন্মত্ত হইতাম, আর আমাদের ছেলেরা এখন রেশমী জামা গায়ে দিয়াও তত সন্তুষ্ট নহে ; প্রতিবাসী সমবয়স্কের রেশমী জামায় কেমন জরীর কাজ করা, তাহার জামায় ত তেমন জরী নাই ! আমাদের বাল্যাবস্থায় আমাদের সমবয়ন্ত্ৰগণের মধ্যে কাহাকেও বড় সাটিনের বা মখমলের পোষাক পরিতে দেখি নাই, কিন্তু এখন সাটিনের কোটু-জ্যাকেটু ও বোম্বাই কাপড়ের জালায় দেশ ছাড়িয়া পালাইতে “ইচ্ছা করে। তখনকার অভিভাবকদিগের অপেক্ষ এখনকার অভিভাবকদিগের রুচি কত বিভিন্ন হইয়া গিয়ছে। তখনকার বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ । অভিভাবকেরা বুঝিতেন যে, দরিদ্র বা মধ্যবিত্তের জন্য সাটিন মখমল নহে। যাহারা সৰ্ব্বদা গাড়ি চড়িয়া যাতায়াত করিতে পারেন, ভূত্যেরা র্যাহাদের পোষাকের তত্বাবধান করিয়া থাকে, তাহদের জন্তই সাটিন মখমল ; কিন্তু আমরা কি তাহা বুঝি ? আমাদের আত্মমর্য্যাদার কি কুর্দশ ! পূজার সময় কলিকাতার বাজারে কত টাকার জাৰ্ম্মেনীজাত নকল রেশমী পোষাক বিক্রয় হয়, তাহার একটা তালিকা পাইলে বুঝিতে পারিতাম, বাঙালী কেমন বুদ্ধিমান । বস্তুত বাঙালীর বুদ্ধির দৌড় যে “কতদূর. তাহা এই পোষাকের রুচিতেই বুঝিতে পারা যায় । পুজার পর শীতবস্ত্র । আমাদের বাল্যাবস্থায় কৰ্ম্মফর্টার কিনিতে পাওয়া যাইত না । যদি বা পাওয়া যাইত, তাহা বোধ হয় আমাদের পক্ষে ছুপ্রোপ্য ছিল, কারণ আমরা তাহা কখন পাই নাই । তখন শিক্ষিতাভিমানী রমণীগণ নানাপ্রকার উলের মোজাকল্ফর্টার বুনিয়া স্বামিপুত্রের আপাদমস্তক ঢাকিয়া দিতেন । কিন্তু এই পশমের কাজ সকলে জানিত না, তাই সকলের পক্ষে মোজাকৰ্ম্মফর্টার সুলভ ছিল না । অথচ বাল্যকালে মোজা-কল্ফর্টার বিহনে যে বিশেষ কোনরূপ পীড়ায় ভুগিতাম অথবা অকালে পঞ্চত পাইবার সম্ভাবন লড়াইত, তাহ ত মনে হয় না। আমরা বাল্যকালে দোলাই গায়ে দিতাম । বার অান বা চৌদ্দ আনায় একখানা দোলাই, তাহাতে বেশ শীত ভাঙিত ; এখন কিন্তু এই বিলাতি “আলোয়ান, জাৰ্ম্মেনী,—ফ্রান্স ও অষ্ট্রিয়ার পাটের চাদর ভিন্ন আর শীত ভাঙে