૧૭ বঙ্গদর্শন। [ ৩য় বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ। বিবাহ হয় । যুবকের অবস্থা অত্যন্ত হীন । অতি জীর্ণ ছুইটি ক্ষুদ্র শয়নকক্ষ ও একটি তৃণাচ্ছাদিত রন্ধনশালা তাহাদের স্থাবর সম্পত্তি। যুবার বিবাহের পূৰ্ব্বে তাহার ভাবী শ্বশুর পাত্রকে আশীৰ্ব্বাদ করিতে আসিয়া ভাবী জামাতার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সমস্তই স্বচক্ষে দেখিয়া যান, অথচ ফুলশয্যাতে যুবার শ্বশুরালয় হইতে প্রায় ৪০৷৪৫ জন লোকে সওগাদ লইয়া আসিল । শ্বশুরবাটীর দাসী, যে এই সওগাদ-বাহকদিগেয় সর্দার হইয়া আসিয়াছিল, তাহার . স্থল কলেবরে যে অলঙ্কার ছিল, জামাতার মাতার শরীরে তাহার শতাংশের এক অংশও ছিল না। গৃহিণী তাহাদিগকে বসিবার স্থান দিতে না প্লারায় যার-পর-নাই লজ্জিতা হইয়াছেন, এমন-সময় সেই দাসীকুলশিরোমণি বলিল, “গাড়ির রাস্তা, তাতে পাড়াগা ( দাসী কলিকাতা হইতে সওগাদ লইয়া আসিলেও তাহার কথার স্বর মেদিনীপুরজেলার পরিচয় দিতেছিল ), সেইজন্ত মা অনেক জিনিষ পাঠাতে পারলেন না”, ইত্যাদি ইত্যাদি। ফুলশয্যার সওগাদ যাহা আসিয়াছিল, তাহার মধ্যে আহার্য্য, পরিধেয় ও ব্যবহার্য্য দ্রব্য ছাড়া এত অনুবিস্তক ও অব্যবহার্য্য দ্রব্য ছিল যে, তাহার ব্যবহার দূরে থাক, জামাতা সে সুকল দ্রব্যের নাম পর্য্যন্ত জানেন না । জামাতা কখন চা-পান কিংবা চুরুট-সেবন করিতেন না, কিন্তু তথাপি তাহার পিতৃতুল্য শ্বশুরমহাশয় পুত্রতুল্য জামাতার ব্যবহারের জন্ত চার পেয়াল, চামচ, রেকবি, চুরুটের বাক্স, চুরুটের ছাই ঝাড়িবার পাত্র ইত্যাদি দ্রব্য দিতে কিছুমাত্র লজ্জা অনুভব করেন নাই। ফুলশয্যার সওগাদ দেখিতে পাড়ার স্ত্রীলোকেরা অত্যন্ত জনতা করিয়াছিলেন বলিয়া ভাল করিয়া সমস্ত দেখিতে পাই নাই। ইচ্ছা আছে, ভবিষ্যতে সুযোগ পাইলে দেখিব যে, সওগাদের মধ্যে শুাম্পেন্-গ্লাস ও ডিকাণ্টর থাকে কি না । ফলত মুরগীহাটার দোকানে যাহ-কিছু কিনিতে পাওয়t যায়, তাহার সমস্তই সেই সওগাদের মধ্যে ছিল। সে গুলা রাখিবার স্থান জামাতার গৃহে না থাকায় এক প্রতিবাসীর গৃহে সে সমস্ত সাজাইয়া রাখা হইল । সে সকল দ্রব্য কেহ কন্যাকৰ্ত্তার নিকট প্রার্থনা করে নাই, বরং তিনি দেওয়াতে জামাতাকে বিশেষ অসুবিধা ভোগ করিতে হইয়াছিল । এইপ্রকার শত শত টাকার অব্যবহার্য্য বিলাতী আসবাব ও খেলনা বিবাহ উপলক্ষ্যে আদানপ্রদান হইয়া থাকে শুনিতে পাই, আজকাল কায়স্থসম্প্রদায়মধ্যে বিবাহ প্রভৃতিতে লৌকিকতা প্রদান ও গ্রহণ বন্ধ হইরাছে, কিন্তু এই প্রকার অনাবশ্যক আদানপ্রদান বন্ধ করিতে কোন জাতি অগ্রসর হইবেন ? আহাৰ্য্যবিষয়ে ঠিক এই প্রকার । বৎসর পুৰ্ব্বে লেখকের প্রতিবাসী এক দরিদ্র গোপকস্তার বিবাহ হয় । কস্তার পিতা কোন ধনবানের গৃহে মাসিক- দশটাক৷ বেতনে খানসামার কার্য্য করিত বলিয়া তাহার নজরটা মনিৰেবু স্তায় উদার হইয়া পড়িয়াছিল । কস্তাটি স্বত্র বলিয়া কলিকাতার এক ধনবান গোপ নিজের পুত্রের সহিত তাহার বিবাহসম্বন্ধ স্থির করে। বিবাহের রাত্রে সেই কম্ভাভারগ্রস্ত লোকটি আহারাদির ষেপ্রকার আয়োজন 鬱劇 &lse
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৮১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।