দ্বিতীয় সংখ্যা । ] বাজে খরচ ? 속 করিয়াছিল, তাহার প্রভুর কন্যার বিবাহে তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আয়োজন হয় নাই । কলিকাতার বরযাত্রীদিগকে সন্তুষ্ট করিবার জন্ত সেদিন লুচি, কচুরি, পাপর, মাছের তিনচাররকম তরকারী এবং ক্ষীর-দধি ভিন্ন কলিকাতা বড়বাজার হইতে আনীত নানাবিধ উপাদেয় মিষ্টান্ন আহারার্থিগণের পত্রের শোভাবৃদ্ধি করিয়াছিল । সেই কন্তাকর্তার নিজের বিবাস্তুে বোধ হয় চিড়েমুড়কি ও দধির বন্দোবস্ত হইয়াছিল । ১৫১৬ বৎসরের মধ্যে রুচির কি পরিবর্তন ! এই ধনিজন্যেচিত ভোজের ফল এই হইল যে, মনে করিলেই আমি আমার প্রতিবাসীদিগকে লইয়া আমোদ করিয়া আহারাদি করিতে পারিব না । আদর্শ এত উন্নত হইয়া পড়িল যে, তাহণ সাধারণের পক্ষে “প্রাংগুলভ্যে ফলে লোভাং” গোছ হইয়া উঠিল । কোন ক্রিয়াব মে সাদাসিধা লুচি, কুষ্মাণ্ডের তরকারী ও দধিসন্দেশের আয়োজন করিলে কি প্রতিবাসীরা সন্তুষ্ট হইবেন ? তাহারা আমার বাড়ী কুরাওঘণ্ট খাইতে খাইতে সেই দরিদ্র গোয়ালার বাটীর কালিয়া স্মরণ করিয়া আমাকে ধিক্কৃত করিতে কুষ্ঠিত হইবেন কি ? পুল্লীগ্রামে দুর্গোৎসব বা অন্যান্য পূজার সংখ্যাহ্রাস হওয়ার প্রধান কারণ আদশের বিকৃতি বা রুচির বিকৃতি। এখনকার পূজায় ভক্তের ভক্তিপ্রদত্ত- শাকান্ন খাইয়া দেবতা সন্তুষ্ট হইতে পারেন, কিন্তু প্রতিবাসীরা সন্তুষ্ট হইতে পারেন না । সেইজন্ত পুজায় লোকের আর প্রবৃত্তি নাই। পূৰ্ব্বে লোকে ব্রাহ্মণবাটীতে মধ্যাহ্বভোজনে নিমন্ত্রণরক্ষা করিতে যাইত, কিন্তু আজকাল মধ্যাহ্বভোজনটা একপ্রকার উঠিয়াই গিয়াছে। মধ্যাহ্লট প্রায় রাত্রি ৯ট-১০টায় উপনীত হইয়াছে, কারণ অধিকাংশ স্থলেই এখন অল্পের পরিবর্তে পলান্নের প্রচলন দেখা যায় । প্রায় সকল বাটতেই অজ্ঞাতচরিত্র, উপবীতী ও ব্রাহ্মণনামধারী পাচকগণই রন্ধনকার্য্য সম্পন্স করিয়া থাকে । ব্রাহ্মণবাটীর বর্ষীয়সী গৃহিণীরা এখন আর ব্রাহ্মমুহূর্তে গাত্রোথান করিয়া প্রাতঃস্নানসমাপনাস্তে পট্টবস্ত্রপরিহিত হইয়া পবিত্রচিত্তে প্রতিবাসীর গৃহে রন্ধনে প্রবৃত্ত হইতে যান, না । পূৰ্ব্বে প্রত্যেক ক্রিয়াশালী ব্রাহ্মণের বাটী একএক প্রকার রন্ধনের জন্ত প্রতিবাসিমণ্ডলীর মধ্যে প্রতিষ্ঠালাভ করিত । গাঙুলীদের বাটীর নিরামিষ, মুখুয্যেদের বাটীর মাছের তরকারী এবং চক্রবন্তিমহাশয়দের বাটীর পায়সের নামে নিকটবৰ্ত্তী ২।১থান। গ্রামের ভোক্তাদের রসনায় জলসঞ্চার হইত। কিন্তু আজকাল মুখুয্যে, গাঙুলী, চক্রবর্তী, ঘোষাল, সকলের বাটীতেই সেই এক বিহারিঠাকুর সদলবলে হাত-খুন্তি-বীজরা-হস্তে অধিষ্ঠিত হইয়। একই প্রকার রন্ধনে সকলের তৃপ্তিসুধন করে। আমাদের খাটি দেশী শিল্পের সকলপ্রকারই প্রায় গিয়াছে —রন্ধনশিল্পও যাইতে বসিয়াছে । এই রন্ধনশিল্পের অস্তদ্বানে কোন ব্যবসায়ী বা শিল্পী সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতি না হওয়াতে দেশহিতৈষী মহাত্মারা এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন না, কিন্তু তাহাতে আমাদের একটা অত্যাবস্তক স্বখপ্রদ শিল্প ধ্বংস হইতেছে। নিমন্ত্রিত ভদ্রলোকেরা যদি নিমন্ত্রণকর্তাকে বলেন যে, “আপনার বাটীতে আমরা বাজারে ব্রাহ্মণের
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।