Գե বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ । স্পষ্ট কোন দ্রব্য গ্রহণ করিব না, আপনার পরিবারস্থ স্ত্রীলোকদিগের হাতের শাকাল্পও সমাদরে ভোজন করিব”, তাহা হইলে বোধ হয় রন্ধনশিল্প রক্ষণ পাইলেও পাইতে পারে । আজকাল কলিকাতা ও তৎসন্নিহিত স্থানসমূহে অমরোগের বড়ই প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এই রোগের হস্ত হইতে মুক্তিলাভকল্পে চেষ্টার ক্রটিও লক্ষিত হয় না । ইহার কল্যাণে অনেক পেটেণ্ট ঔষধওয়াল বেশ দশটাকা কামাইয়া লইয়াছেন । রোগের নিদাননির্ণয় করিতে গিয়া সকলেই নিজ নিজ ধারণার অনুরূপ কারণ দেখাইয়া থাকেন। কারণ যাহাই হউক না, অমরোগের একটা সহজ প্রতিকণর “মুড়ি”খাওয়া । বাজারের মিষ্টারে যে সকল স্থত ব্যবহৃত হয়, তাহা যতদুর অপরুষ্ট হইতে পারে, সে পক্ষে দোকানদারদিগের শৈথিল্য নাই । অভিমানী বাঙালীবাবুরা জলযোগের জন্ত এই জঘন্ত স্বতের মিষ্টান্ন ব্যবহার করিয়া থাকেন । অমরোগের অন্ততম কারণ এই মিষ্টান্নসেবা । যাহারা নিত্য “মুড়ি” খাইয়া থাকেন, অম্ল তাহাদিগকে স্পর্শও করিতে পারে না। এক পয়সার মুড়ি খাইলে ষেরূপ উদরপূৰ্ত্তি হয়, একপোয় মিষ্টারে সেরূপ হয় কি না, সন্দেহ ; অথচ মুড়ি থাইলে কোন পীড়ার সম্ভাবনা নাই । অনেকের ধারণা যে, মুড়ি খাইলে উদরাময় হইয়া থাকে। আমরা কিন্তু সাহস করিয়া বলিতে পারি যে, স্বস্থশরীরে মুড়ি খাইয়। কখন উদরাময় হয় না। . তবে উদরাময় থাকিতে মুড়ি খাওয়া না চলিতে পারে, কিন্তু মুড়ি ষে সহজ শরীরে উদরাময় আনিয়া থাকে,এ কথা অলীক । মুড়ি খাইলে যাহাদের উদরাময় হয়, তাহারা যে বাজারের মিষ্টগল্প জীর্ণ করিতে পারেন, ইহা বিশ্বাস হয় না । অনেকে বালকগণের জন্ত বিলাতী বিস্কুট ব্যবহার করিবার পরামর্শ দিয়া থাকেন। বিলাতী বিস্কুট যতদিন টিনের বাক্সবন্দী থাকে, ততদিন বোধ হয় মন্দ থাকে না ; কিন্তু বাক্স খুলিবার পর বাহিরের বায়ু লাগিয়া ক্রমশ তাহা খারাপ হইঙ্গে থাকে। ৰাসী লুচি অথবা রুটি যদি আপকারী হয়, তাহা হইলে বাসী বিস্কুটও যে অপকারী কেন হইবে না, তাহ আমরা বুঝিতে পারি না। একটাক-পাচসিক দিয়া একবাক্স বিস্কুট কিনিয়া তাহ ১৫দিন ধরিয়া রোগীকে খাওয়াইবার ব্যবস্থা যে কতদূর বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক, তাহা আমরা ধারণা করিতে অক্ষম । সাধারণত যাহার। পীড়া হইবার ভয়ে বালকদিগকে বিস্কুট খাইতে দিয়া থাকেন, তাহারা যদি বিস্কুটের পরিবর্তে তাহাদিগকে মুড়ি খাইতে দেন, তাছা হইলে দেখিবেন যে, বালকগণের স্বাস্থ্যের অবনতি না হইয়া বরং উন্নতিই হইতেছে । কিন্তু মুড়ি পল্লীগ্রামের লোকে এবং দরিদ্র লোকে ব্যবহার-করে বলিয়া সহরৰাসী বাবুদের তাহ বড়ই ঘূণাস্পদ হইয়া পড়িয়াছে। একবার একজন কবিরাজ কোন ধনবানের অমরোগের চিকিৎসা করিতে গিয়াছিলেন । তিনি নানাপ্রকার ব্যবস্থার পর বলিলেন, “আপনি জলযোগ করিবার সময় কোনপ্রকার মিষ্টান্ন ব্যবহার না করিয়া মুড়ি ও নারিকেল ব্যবহার করিবেন।” কবিরাজের ব্যবস্থা শুনিয়া বাবুর পারিষদবর্গ বলিয়া উঠিল, “বাৰু মুড়ি খাইবেন ? কি বলেন আপনি ? বাৰু মুক্তি
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৮৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।