পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দশম খণ্ড.djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& eb- (*) সহজাত ভাবেরই জয় কৃইত, তাহার পশুভাবই প্রবল হইত। তার পর, ধৃত হওয়ার পর নুতন শাস্তির ভার তাহার চিত্তের অন্ধকার গাঢ়তর করিয়াই তুলিত । এইখানে একটা কথা বলিয়া রাখি । শারীরিক সামর্থ্যে জীনের সমতুল্য লোক গ্যালিতে তখন কেহ ছিল না । কঠোরশ্রমসাধ্য কার্য্যে একা সে চারিজনের সমতুলা ছিল ; পৃষ্ঠের উপর অনায়াসে সে বিশাল ভার বহন করিতে পারিত । কিন্তু শারীরিক শক্তি অপেক্ষ তাহার কৌশল অনেক বেশী ছিল । সুদীর্ঘকালের জন্ত দণ্ডিত অপরাধীরা পলায়নোদেশে প্রায়ই প্রতিদিন, সুযোগমত, নিয়মিতভাবে শক্তি ও কৌশলের সাধন করে । জীন সে বিষয়ে একজন পাকা ওস্তাদ হইয়া উঠিয়াছিল। যে-কোন প্রাচীর উল্লম্ফন করা, ক্ষুদ্রতম কীর্ণিশের উপর স্বচ্ছন্দে দণ্ডায়মান থাকা, তাহার পক্ষে কে কমাত্র ছিল । পৃষ্ঠদেশ ও হাটু দিয়া, কনুই এবং হস্তের সাহায্যে দে গুস্নালের কোণ বহিয়া অনায়াসে সে ত্রিতল পর্যন্ত উঠয়! যাইত ; – এষ্টরূপে কতবার গ্যালির ছাদ পৰ্য্যস্থ সে উঠিয়াছে। কথা সে কহিত কম ; গ্যালিতে কখন ৪ কেহ তাঙ্গকে হাসিন্তে দেখে নাই । সে যেন সৰ্ব্বদাই কি একটা গুরুতর চি স্থার মাঝে মগ্ন হইয়া থাকিত । তাঙ্গার অসম্পূর্ণ প্রকৃতির ভ্রান্ত অনুভবশক্তির বশে সে বুঝিত কি যেন একটা বিশাল ভার তাহার স্কন্ধে চাপিয়া আছে । জীবনের অস্পষ্ট অন্ধকারে যেদিকে সে চাহিত সেই দিকেই দেখিত,—আইনের বন্ধন, মানবের পক্ষপাতিত্ব, এবং সভ্যতার বিশাল স্ত,প যেন বঙ্গদর্শন [ ১৩শ বর্ষ, আশ্বিন, ১৩২০ চারিদিক হইতে তাহাকে থিরিতেছে । তাহার মধ্যে,—কখনো সম্মুখে, কখনো দূরে, কখনো বহু উদ্ধে – এখানে অনুচর সহ কারাধ্যক্ষ, ওখানে তরবারি হস্তে যমদূতসম প্রহরী, দূরে করধূ তদও প্রধান পুরোহিত, আর উদ্ধে" আলোকের মাঝে হেমমুকুটধারী নৃপতি— আরও কত কি সে যেন দেখিত । কি এক দুজ্ঞেয় গতি নিয়ন্ত্রিত হইয় তাহারা যেন সব তাঙ্গকে পদদলিত করিয়া চলিয়া যাইত, —তাঙ্গদের সে নিৰ্ব্বেল নিষ্ঠুরতা এবং চির উপেক্ষার ভারে প্রতিদিন সে ক্লিষ্ট হইয়া উঠিত !—সম্ভাবিত দুৰ্দ্দশার অতল জলে মগ্ন শাসন-কশfহত হতভাগ্যের শিরেই, মানবসমাজের যত দুঃসহ বিশাল ভার অসিয়া চাপিয়া বসে ; জীনের ও তখন সেই অৰস্থা । সে কি ভাবিত ?—পেষণযন্ত্ৰ-মধ্যগত যবখণ্ডকে প্রশ্ন কর । তাঙ্গার যে চিন্তা, জীনের ৪ তাই । - এই কায়া ও ছায়া, সত্য ও কুচকের অদ্ভুত মিশ্রণের মধ্যে পড়িয়া মাঝে মাঝে তাহার মনে হইত,—অতীত, বর্তমান সবই বৃদ্ধি বা ভ্রান্তি, সবই বুঝি একটা স্বপ্নের ঘোর মাত্র ! থামিয়া, কারা-প্রচরীর প্রতি চাহিয়া সে ভাবিত – কে এ, ছায়ামূৰ্ত্তি! কিন্তু মুহূর্বে সে ছায়ামূৰ্ত্তি হইতে তাঙ্গার পুষ্ঠে সজোরে বেত্ৰাঘাত বর্ধিত হইত ; চমকি ত হইয়া, জীনের চিত্ত পুনরায় বাস্তব জগতে ফিরিয়া আসিত ; জীন আবার কার্য্যে মন দিত । বহির্জগতের সহিত তাহার কোন সম্বন্ধ ছিল না—স্বৰ্য্যের কিরণ, বসন্তের প্রভাত, বিচিত্রবর্ণাভ আকাশের ছবি, সবই যেন কাজ করিতে করিতে,