৮ম সংখ্যা ] মধ্যে সৰ্ব্বপ্রথমে সে একবার আত্মবিসর্জন করে, . সে দেবতার আসন তাহার হৃদয়ে চির প্রতিষ্ঠিতই থাকে ; উপেক্ষায়, বিচ্ছেদে, ঘটনাচক্রের ঘাতপ্রতিঘাতে, সে প্রথম যৌবনের স্বপ্ন, প্রথম প্রেমের • স্মৃতি, দুঃখে মধুর আশায় উজ্জ্বল হইয়া, চিরদিন তাহার জীবনে এক অমুপম মাধুরী স্বজন করিয়া রাখে । “দুঃখের বেশে আসিলেও চিরদিবসের সে রাজার জন্য চিরদিন তাহার হৃদয় উন্মুখী হইয়া থাকে। —ফ্যানটাইন তখনও পর্য্যন্ত সেই একনিষ্ঠ সাধিক ছিল । তাই সংসারের নিৰ্ম্মায়িকতায় এবং ঘটনাচক্রের ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়িয়াও তখনে লে তলাইয়া যায় নাই । কিন্তু অর্থহীন নিঃসহায় তাহার অবস্থা প্রতিদিনই শোচনীয়তর হইয়া উঠিতেছিল ; তাহ বুঝিয়াই, শপথ রাখিতে শক্তি হয় কি না হয়’ ভাবিয়াই, প্রাণপণে আপনাকে প্রলোভনের হাত হইতে সে দূরে দূরে রাখিতে লাগিল । অবশেষে স্বগ্রামে প্রত্যাবর্তন করাই সে স্থির করিল। বহুদিন হইতে তাহায় প্রবাসী হইলেও, সেখানে কেহ না কেহ তাহাকে চিনিয়া দয়া করিতে পারে, কাজকৰ্ম্মেরও তাহার সুবিধা ঘটিতে পারে। কিন্তু তাহার কোলের শিশু ? তাহাকে সঙ্গে লইয়া যাওয়া যে অসম্ভব ; তার অস্তিত্বের কথা তাহাকে গোপন করিতে হইবে । ভাবী বিচ্ছেদের চিন্তায় চিত্ত অধীর হইয়া উঠিলেও, সে অধৈর্য্য তাহাকে দমন করিতেই হইবে । কিন্তু কোথায় সে তাকে রাখিয়া যায় ? সেই কথাই ভাবিতে ভাবিতে সে অগ্রসর হইতেছিল, এমন সময় অকস্মাৎ থেনেডিয়ারের কষ্ঠা দুইটির প্রতি তাহার বৃষ্টি পড়িল ; তাহাদের দুর্ভাগ্যের কাহিনী په م وا٧ সে শিশুসুলভ আনন্দোচ্ছাস, অকলঙ্ক সরল মুখচ্ছবি তাহাকে আকৃষ্ট করিল । তারা যেন দেবদূতের ন্তায় তাহাকে বলিতেছিল— “এই ই স্বর্গ, এইখানে আয় ।” অভাগিনী মুগ্ধ হইল, তাঙ্গর চক্ষু অশ্রুসিক্ত হইয়া উঠিল । ধীরে ধীরে অগ্রসর হইয়া থেনেডিয়ার-পত্নীর কাছে যাষ্টয়া তাই সে মৃদুস্বরে বলিল—“সুন্দর মেয়ে দু’টি ত আপনার !” অতি হিংস্র পশুও অপরকে তাহার সস্তানদের আদর করিতে দেখিলে, শাস্তু হইয়া আসে ; থেনেডিয়ার-পত্নী ত দূরের কথা । তাই মুখ তুলিয়া, ধন্যবাদ দিয়া, আগন্তকাকে সে বসিতে বলিল। পরিচয়ে বলিল—“আমি থেনেডিয়ারের স্ত্রী ; এটা আমাদেরই সরাই ।” তারপর গুণ, গুণ, করিয়া পুনরায় গাহিতে লাগিল ;– থেনেডিয়ার—অস্ততঃ সে নিজে এইরূপ প্রচার করিত—বহুপূৰ্ব্বে সৈন্যদলভুক্ত ছিল ; এবং বিখ্যাত ওয়াটলু যুদ্ধের সময় সে না কি কোন এক আহত সেনাপতিকে যুদ্ধক্ষেত্র হইতে উদ্ধার করে । সেই ঘটনার উপলক্ষ্য করিয়াই সে “ওয়াটালুর সার্জেণ্ট” বলিয়া তাহার সরাইখানার নামকরণ করিয়াছিল। তার পত্নীও সৈনিকের যোগ্য স্ত্রী ; . তাহার পাটল কেশ, তাম্রাভ গাত্রবর্ণ, এবং অসম কর্কশ দেহষষ্টি দেখিয়া সকলেষ্ট বলিত – “যোগ্যং যোগ্যেন যুক্তং ।” তবে স্ত্রীর জীবনে একটু বৈচিত্র্য ছিল,—বটতলায় এবং বাক্তে নাটক নভেল পড়িয়া কতকটা নায়িকাসুলভ নভেলী ভাব তাহার মধ্যে কঠোরে কোমলে মিশিয়া ছিল । তাত্রাচ, সে বসিয়া ছিল তাষ্ট, নতুবা তাছার পূর্ণ অবয়ব এবং সম্পূর্ণ মুখখান
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দশম খণ্ড.djvu/৪৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।