)●や ইহার মূল লক্ষ্য সংসার, পরমার্থ নহে। চারিদিকে জগতের জাতিসকল এক অভিনব শক্তিসঞ্চারে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্ত চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে। যুরোপীয় জাতি সকল আশিয়ার ও আফ্রিকার উপরে আপন আপন রাষ্ট্রীয় অধিকার বিস্তার করিয়া বসিয়াছেন, এবং আপন আপন অধিকৃত রাষ্ট্ররক্ষণ ও অনধিকৃত প্লাষ্ট্রলাভের জন্য র্তাহারা আপনাদিগের শক্তিপুঞ্জকে সংহত করিবার চেষ্টায় নিযুক্ত হইয়াছেন। যুরোপীয় জাতি সকলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি একটা বৈরভাব আছে বলিয়াই আশিয়ার ও আফ্রিকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি এখনো স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হইয়া আছে। আর এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি সকলই ইসলামের অন্তর্ভূত। ইয়ুরোপে সার্ভিয় ও মন্টিনিগ্রোর পূৰ্ব্ব সীমান্ত হইতে, আশিয়ায় চীনের পশ্চিম সীমান্ত পর্য্যস্ত, বৃহৎ ভূভাগ এবং সমগ্র উত্তর ও পূৰ্ব্ব আফ্রিকা মুসলমানেরই দেশ। এই বিস্তৃত মুসলমানভূমিকে যদি এক করিয়৷ তুলিতে পারা যায়, তবে আধুনিক জগতে মুসলমানসমাজ খৃষ্টীয় সমাজেরই মত শক্তিশালী ও অভু্যদয়সম্পন্ন হইয়া উঠিতে পারে। এখনো যে সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুসলমানরাষ্ট্র আছে, তাহদের স্বত্বস্বাধীনতা রক্ষা করাও বহুলপরিমাণে এই একত|-সাধনের উপরেই নির্ভর করিবে। আর এইরূপে একটা বিশ্বব্যাপী মহম্মদীয় রাষ্ট্র সঙ্ঘ গঠন করিয়৷ জগতের ইতিহাসে আর একবার ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করাই প্যানইস্লামিজমের মূল উদ্দেশ্য। ভিন্ন ভিন্ন দেশের আধুনিক শিক্ষাপ্রাপ্ত মুসলমানগণ এই মুখসৌভাগ্যের স্বপ্লঘোরে মাতোয়ার বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ, ১৬১৯ হইয়া উঠিতেছেন। ভারতের মুসলমাননেতৃগণের সকলে না হউন অনেকেই, এই আশামদিরাপানে আত্মহারা হইয়াছেন। এর যে আপনাদিগের রাষ্ট্রীয় জীবনকে ভারতবর্ষের সাধারণ রাষ্ট্রীয় জীবন হইতে স্বত্ত করিয়া রাথিবীর জন্য এত ব্যাকুল হইয়াছেন, যাহাতে ভারতের জনসাধারণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় অধিকার বিস্তারিত ও রাষ্ট্রীয় শক্তি সঞ্চারিত না হয়, তার জন্ত ইহাৱা যে একদল অদূরদর্শী ইংরেজরাজকৰ্ম্মচারীর সঙ্গে মিলিত হইয়া, প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছেন, ইহার পশ্চাতে এই অদ্ভুত ও সাংঘাতিক মাদকতা রহিয়াছে। ভারতীয় মস্লেম লীগের প্রতিষ্ঠা যে এই অভিনব প্যান্-ইসলামিজমেরই একটা তরঙ্গভঙ্গমাত্র, ইহ লাট হার্ডিঞ্জ স্বম্পষ্টই বুঝিয়াছেন। আর তিনি এটীও জানেন যে ভারতে এখন হিন্দুমুসলমানের মধ্যে একটা ভেদ প্রতিষ্ঠিত করিয়া, প্রবল হিন্দুদিগকে দুৰ্ব্বল ও দুৰ্ব্বল মুসলমানদিগকে সবল করিয়া তুলিবার চেষ্ট৷ করিলে, যে প্যান-ইসলামিজম, ব্রিটেন ও ভারত কারোই মিত্র নহে, যাহা ভারতে হিন্দুঞ্জাতির অভু্যদয় ওব্রিটিশের রাষ্ট্রীয় আধিপত্য, উভয়েরই সমান প্রতিবাদী, সেই প্যান্ ইস্লামিজমের গর্ভেই অশেষ শক্তিসঞ্চার করা হইবে । ইহা বুঝিয়াই লাট হার্ডিঞ্জ ভারতে ব্রিটিশের স্বার্থ ও হিন্দুর স্বত্ন উভয়ই যাহতে সুরক্ষিত হয়, তাহার বিধান করিবার জন্যই বঙ্গভঙ্গ রহিত করিয়াছেন। সেই লক্ষ্যের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়াই তিনি ভারতের ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে ক্ৰমে ক্রমে প্রাদেশিক স্বাতন্ত্র্য বা প্রভিনশিয়াল wöäft (Provincial Autonomy) প্রতিষ্ঠিত হইয়া, সমগ্র ভারতকে বহুসংখ্যক স্বতন্ত্র
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।