>>br ভারতবর্যের জনসমাজের সর্ববিধ আত্মবিকাশচেষ্টার ইতিহাস সঙ্কলিত করিতে হইবে । ফাগুসন তাহার অমরগ্রস্থে একটি কাল্পনিক সিদ্ধান্তের অবতারণা করিয়৷ লিখিয়া গিয়াছেন,–“ভারতশিল্পে হিন্দু বৌদ্ধ এবং জৈন নামক তিনটি রচনারীতি দেখিতে পাওয়া যায়।” তাহাকে মূলমন্ত্র রূপে গ্রহণ করিং, অনেকেই ভারতশিল্পকে হিন্দু বৌদ্ধ জৈন নামক তিনটি বিভিন্ন যুগে বিভক্ত করিবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন। ভারতশিল্পের মূলপ্রকৃতি সৰ্ব্বত্র সকল যুগে একরূপ হইলেও, যুগে যুগে নানা স্থানে নানা রচনারীতি মূলস্থত্রের ভাষ্যরূপে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। তাহাতে কেবল স্থান-কালের প্রভাবেরই পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায় ; ধৰ্ম্মসম্প্রদায়-সমূহের ভিন্ন ভিন্ন প্রভাবের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায় না। কারণ সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের প্রভাবই শিল্পের পক্ষে একরূপ ৷ অনিৰ্ব্বচনীয়কে আকার-দানের চেষ্টাতেই তাহার পরিসমাপ্তি। ভারতবর্ষের সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের মূল প্রস্রবণ একস্থানে বলিয়াই ভারতবর্ঘ সমন্বয়-ক্ষেত্র। তাহার প্রভাব শিল্পের ইতিহাসেও দেদীপ্যমান। যাহা অনিৰ্ব্বচনীয়, তাহা ভাষণে মধুরে নিশিয়া রহিয়াছে। তাহ অণু হইতে অণু, এবং মহান হইতেও মহীয়ান। যে যুগে যে প্রদেশে তাং যে ভাবে মানব-মনকে বিকাশ-চেষ্টায় প্রণোদিত করিয়াছে, সেই সুগের সেই প্রদেশের রচনারীতিতে { সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের মূৰ্ত্তিশিল্পেষ্ট ] তাহার প্রভাব বঙ্গদর্শন ১২শ বৰ্ষ, জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৯ দেখিতে পাওয়া গিয়াছে'। তাহা কোন কোন যুগে কোন কোন প্রদেশে ভীষণেব তিতর দিয়া, মধুরের ভিতর দিয়া, কিম্বা ভীষণ-মধুরের ভিতর দিয়া, অনিৰ্ব্বচনীয়কে আকার-দানের চেষ্টা করিয়াছে ৮ তৎ কালের তৎপ্রদেশের জনসমাজ তাহ। জানিত । সুতরাং আমরা যাহাকে ভীষণ বলিয়। ভ্ৰ ভঙ্গী বিকাশ করি, তাহার। তাহার অন্তর্নিহিত সৌন্দৰ্য্য-সম্ভোগে বঞ্চিত হইত ন। মৃত্যু অমৃতের সোপান বলিয়। আমাদিগের নিকট প্রতিভাত হইত, তাহাদিগের দৃষ্টি নিকটে নহে,—দূরে। তাহারা সকল যুগের সকল প্রদেশের সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের মূৰ্ত্তিশিল্পের মধ্যে অমূৰ্ত্তকেই দর্শন করিত। আমরা মূৰ্ত্তিমাত্র দর্শন করিয়া, বিজ্ঞতার পরিচয় দান করিবার জন্য বলিতেছি,—কোনও মূৰ্ত্তি ভীষণ, কোনও মূৰ্ব মধুর, সকল মূৰ্বি অল্পাধিক অস্বাভাবিক ! ভারতবর্ষে স্বাভাবিক মূৰ্ত্তিরচনারও অতাব ছিল না ; এখনও নানা স্থানে তাহার নিদর্শন দেখিতে পাওয়া যায়। তথাপি ভারতশিল্প দেবমূৰ্ত্তি-রচনার সময়ে স্বভাবকুকরণ করিতে সন্মত হয় নাই কেন, তাহার নিগূঢ় কারণ বিদ্যমান ছিল। মানবমূৰ্ত্তিকে দেবমূৰ্ত্তির আদর্শ বলিয়া গ্রহণ করিলে ভারতশিল্পাচাৰ্য্যগণকেও সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর নূরনারা রচনা করিয়াই নিরস্ত হইংে হইত। কিন্তু তাহাতে ভারতশিল্পের মূলস্বত্রটি ছিন্ন হইয় পড়িত। প্রয়োজনের অনুরোধেই ভারতশিল্প সে পথে অগ্রসর হইবার চেষ্ট করে নাই । . বাহিরের পট হইতে সাদৃত
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।